|
|
|
|
প্রেম-পার্বণে কাঁটা গোলাপের কম জোগান |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বছর ঘুরে ফের হাজির প্রেমের পার্বণ! ভালবাসার দিন ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে পছন্দের মানুষকে তাক লাগানো উপহার দিতে তৈরি তরুণ-তরুণীরাও। পুরনো প্রেমকে ঝালিয়ে নিতে আর নতুন প্রেমের খাতা খুলতেই যেন হাজির এই বিশেষ দিন।
এখন মফসস্লেও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাল্টেছে ভ্যালেন্টাইন্স ডের উপহারের তালিকা। টেডিবিয়ার থেকে কস্টিউম জুয়েলারি, সবই ঢুকে পড়েছে তাতে। তবে চিরায়ত লাল গোলাপের চাহিদায় ভাটা পড়েনি। এ বারও প্রেম দিবসের আগে গোলাপের চাহিদা তুঙ্গে। তবে বাজারে গোলাপের জোগান কম থাকায় বেড়েছে দাম। বৃহস্পতিবার এক-একটি ছোট গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৭-৮ টাকায়। আজ, শুক্রবার চাহিদা আরও বাড়বো। শহরের এক ফুল ব্যবসায়ী সুনীল সমাদ্দার বলেন, “এই সময় গোলাপের দাম একটু বেশিই থাকে। জোগান কম থাকলে দাম তো বাড়বেই। আমাদেরই বেশি দামে গোলাপ কিনতে হচ্ছে।” আর এক ফুল ব্যবসায়ী শেখ সাজেদ আলি বলেন, “আজ যে গোলাপ ৭-৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে, কাল তার দাম ১৫-২০ টাকা হতে পারে!” |
|
চড়া দামে বিকোচ্ছে গোলাপ। মেদিনীপুরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
মেদিনীপুর-খড়্গপুর শহরে গোলাপ আসে কোলাঘাট, হাওড়া থেকে। জেলার ডেবরা, খড়্গপুর, সবং, পিংলা, দাসপুর, গোপীবল্লভপুরেও কমবেশি গোলাপ চাষ হয়। বৃহস্পতিবার শহরের বিভিন্ন বিপণিতে কলেজ পড়ুয়া তরুণী থেকে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখা যুবকের মতো অসংখ্য ক্রেতার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বাঙালির ভি-ডে অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছে সরস্বতী পুজোয়। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরোনো, বিএড পড়ুয়া শুভদীপ দত্তচৌধুরী বলেন, “ভালবাসার আবার কোনও দিন হয় না কি! প্রিয়জনকে সারা বছরই ভালবাসা যায়!” তবে কলেজ ছাত্রী অঙ্কিতা রায় মানছেন, “ভ্যালেন্টাইন্স ডে সত্যিই স্পেশাল। বিশেষ দিনে যদি কাউকে ভালবাসার বার্তা দেওয়া যায়, মন্দ কি!”
মেদিনীপুরের সঙ্গীতশিল্পী অলোকবরণ মাইতি বলছিলেন, “ভ্যালেন্টাইন্স ডে নিয়ে মাতামাতিটা ক্রমেই বাড়ছে। তবে ভালবাসার কোনও দিন-সপ্তাহ- মাস থাকতে পারে না।” অলোকবরণবাবুর স্ত্রী সুস্মিতা মণ্ডল মাইতি নৃত্যশিল্পী। কলেজে পড়ার সময় দু’জনের আলাপ। আশির দশকের গোড়ায় তাঁরা ‘কল্লোল’ নামে এক সাংস্কৃতিক সংস্থাও গড়েন। বছর দশেক হল চার হাত এক হয়েছে। সুস্মিতাদেবী বলেন, “আসলে যে ভাবে হিংসা-বিদ্বেষ বাড়ছে, সেখানে ভি-ডে যেন শান্তির দূত!”
ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র তাত্পর্যটা ঠিক কী? সেটা তৃতীয় শতাব্দীর কথা। রোমে তখন দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের রাজত্ব। তিনি মনে করতেন, অবিবাহিত ছেলেরা ভাল সৈনিক হতে পারে। তাই তিনি তরুণদের বিয়ে নিষিদ্ধ করেন। সম্রাটের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন এক সন্ন্যাসী। তিনি লুকিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে শুরু করেন। ঘটনার কথা জানতে পেরে ওই সন্ন্যাসীর মৃত্যুদণ্ড দেন সম্রাট। ওই সন্ন্যাসীর নাম ছিল ভ্যালেন্টাইন। তারপর থেকেই ভ্যালেন্টাইন ডে উদ্যাপন শুরু হয় বলে মনে করা হয়।
মনের মানুষকে দেওয়ার জন্য এ দিন কেউ কিনেছেন শো-পিস, ব্যাগ, কাপ প্রিন্টিং, কানের দুল। কেউ বা টেডিবিয়ার, আংটি, কস্টিউম জুয়েলারি। শহরের এক উপহার দোকানের মালিক জয়দেব মাইতি বলছিলেন, “এই সময় গিফ্টের একটু চাহিদা থাকেই। আগের থেকে এখন উপহারের তালিকাও পাল্টেছে। নতুন নতুন আইটেম এসেছে। কার্ড দেওয়া-নেওয়া, এসএমএস চালাচালির সঙ্গে উপহার হিসেবে পারফিউম, লিপস্টিক, চকোলেট বক্স, শো-পিস অনেকেই দেন।” তিনি বলেন, “গত বার ভ্যালেন্টাইন্স ডে’টা আরও স্পেশাল ছিল। কারণ, ভ্যালেন্টাইন্স ডে আর সরস্বতী পুজো, দু’টোই প্রেমের দিন। দু’টোর ছিল পিঠোপিঠি। তাই পুজো দেখতে বেরনোর নাম করে প্রেমিক-প্রেমিকার সঙ্গে ঘোরার ভালই ছুতো মিলেছিল। তবে এ বারও উপহার কিনতে ভালই ভিড় হচ্ছে।”
বিশেষ এই দিনে অনেকেই পার্কে গিয়ে সময় কাটান। তাই দিনটি উদ্যাপন করতে যেন তৈরি শহর এবং শহরতলির পার্কগুলোও। পশ্চিম মেদিনীপুরে বেশ কয়েকটি ইকো ট্যুরিজম পার্ক রয়েছে। শীতের সময় এই সব পার্কে প্রচুর লোকজন বেড়াতে আসেন। পরিবার-পরিজন, বন্ধু মিলে দিনভর চলে আড্ডা-হইহুল্লোড়। মেদিনীপুর (সদর) মহকুমায় বন দফতরের ৭টি ইকো ট্যুরিজম পার্ক রয়েছে। সেগুলি হল গোপগড়, চাঁদড়া, গুড়গুড়িপাল, পরিমলকানন, সুকুমার সেনগুপ্ত স্মৃতি উদ্যান, ক্ষুদিরাম পার্ক এবং বিদ্যাসাগর পার্ক। বৃহস্পতিবার বিকেলেও ক্ষুদিরাম পার্ক, গোপগড় পার্কে তরুণ-তরুণীদের ভিড় ছিল। শুক্রবার যে ভিড় আরও বাড়বে, তা মানছেন পার্ক কর্তৃপক্ষও। মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ শিশু উদ্যান এবং চিড়িয়াখানার পরিদর্শক সুব্রত সরকার বলেন, “এই সময় পার্কে ভিড় হয়ই।” |
|
|
|
|
|