উৎপাদন বৃদ্ধির আশায় ছোট চা বাগানে যথেচ্ছ কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে দূষণের পাশাপাশি, চা পাতার গুণগত মানেরও সমস্যা দেখা দিয়েছে কৃষি গবেষকেরা মনে করছেন। ফলে একদিকে যেমন সবুজ চা পাতার ভাল দাম মিলছে না, অন্য দিকে তৈরি চায়ের দামের ক্ষেত্রে সমস্যা বাড়ছে। বিপদ এড়াতে টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের গবেষকরা উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্র চা চাষিদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার নিয়ে সচেতন করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি শহরের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘উত্তরবঙ্গ ক্ষুদ্র প্রান্তিক চা চাষি প্রশিক্ষণ’ শীর্ষক শিবিরে তাঁরা ১০০ জন নির্বাচিত চা চাষিকে ওই বিষয়ে পরামর্শ দেন।
চা গবেষকরা জানান, বাজার চলতি কীটনাশকের মধ্যে মাত্র ১৫টিকে সরকার নিরাপদ এবং ব্যবহারযোগ্য বলে তালিকাবদ্ধ করেছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্র চা চাষিরা ওই বিষয়ে খোঁজ রাখেন না। তাঁরা উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির লোকজনের পরামর্শ মতো যথেচ্ছভাবে অপ্রয়োজনীয় কীটনাশক, হরমোন-সহ বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করছেন। টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের উত্তরবঙ্গ শাখার মুখ্য উপদেষ্টা শ্যাম বরগিস বলেন, “গবেষণায় দেখা গিয়েছে ১ একর জমিতে তৈরি চা বাগান থেকে বছরে খুব বেশি হলে ৬ হাজার কেজি সবুজ পাতা উৎপাদন করলে গুণগতমান রক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু সেটা ক্ষুদ্র চা চাষিরা মেনে চলেন না। তাঁরা বিভিন্ন বিপজ্জনক ওষুধের সাহায্য নিয়ে বছরে ৯ হাজার কেজি পাতা তুলছেন। এর ফলে পাতার মান ঠিক থাকছে না।”
তিনি জানান, ‘খাদ্য সুরক্ষা’ নিয়মে ভারত সরকার ১৫টি কীটনাশককে তালিকাভুক্ত করেছে। তালিকার বাইরে ওষুধ ব্যবহার করা হলে আগামী দিনে চা চাষি ও চা কারখানা কর্তৃপক্ষ জটিল আইনি সমস্যায় পড়তে পারেন। কারণ, তৈরি চা পরীক্ষা করলে ধরা পড়বে পাতা উৎপাদনে নিয়ম মেনে ওষুধের ব্যবহার হয়েছিল।
ক্ষুদ্র প্রান্তিক চা চাষি সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গে ছোট চা বাগানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার। জলপাইগুড়ি জেলায় রয়েছে ১৫ হাজার। গত বছর উত্তরবঙ্গের ছোট বাগানগুলি ১৪০ মিলিয়ন কেজি পাতা উৎপাদন করেছে। দূষণের বিপদ এড়াতে পরিবেশপ্রেমী মহলে জৈব পদ্ধতিতে চা পাতা উৎপাদনের দাবি দীর্ঘ দিনের। যদিও ওই দাবি যুক্তিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন চা গবেষকরা। টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের তরাই শাখার উপদেষ্টা দেবজিত বড়গোঁয়াই জানান, পুরোপুরি জৈব পদ্ধতিতে বাগান করলে পাতার উৎপাদন কমবে। ফলে চাষিদের আর্থিক সমস্যায় পড়তে হবে। |