পুকুর পাড়ে বিষ মাখানো মাছ ফেলে রাখছেন তাঁরা। ভোর ভাঙতেই আশপাশের গাছ-গাছালি থেকে বক-পানকৌড়ির ঝাঁক সেই বিষাক্ত মাছ খেয়েই ছটফট করতে করতে মারা যাচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই।
ঘটনাস্থল বহরমপুরের তৈলবীজ গবেষণাকেন্দ্র লাগোয়া কয়েকটি পুকুর। ওই সব পুকুরের মালিকরা এ ব্যাপারে কোনও রাখঢাকও করছেন না। তাঁদের অনেকেই জোর গলায় বলছেন, “খরচ করে পুকুরে মাছ চাষ করব। আর তা খেয়ে যাবে বকে, এ তো হতে পারে না! তাই বক তাড়াতে ওই পদ্ধতিই নিয়েছি।”
ব্যাপারটা যে বেআইনি তা বিলক্ষণ জানেন তাঁরা। তবে এ নিয়ে বিশেষ হেলদোল নেই। ওই সব পুকুর মালিকদের অনেককেই পাল্টা বলতেও শোনা গিয়েছে, এ ছাড়া তাদের হাতে অন্য কোনও ‘উপায়’ নেই।
জেলা মত্স্য দফতর এ ব্যাপারে কিছু জানে না। জানে না বন দফতরও। মত্স্য দফতরের সহ-অধিকর্তা মলয়কুমার সাহু বাঁধা ধরা সুরে বলছেন, “বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।” আর বন দফতরের এক কর্তার আক্ষেপ, “সারা দিনে বক-পানকৌড়ি কত আর মাছ খেতে পারে! এ ভাবে কেউ পাখি মারে!” তবে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আঁটঘাঁট বাঁধা হচ্ছে বলে দুই দফতর সূত্রেই দাবি করা হয়েছে। তবে তা কত দিনে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁরা তাই নিজেরাই এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করবেন বলে ঠিক করেছেন। |
ওই এলাকার বাসিন্দারাই জানাচ্ছেন, সস্তার কাচ-বিষ ছোট মাছে মাখিয়ে তা ফেলে রাখা হচ্ছে ওই সব পুকুরের পাড়ে। কোথাও বা পুকুরের ওপরে আড়াআড়ি সুতোয় ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে ওই বিষাক্ত মাছ। বক-কুল তা খেয়েই কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা পড়ছে। পড়ে থাকছে ওই সব পুকুরের পাড়ে।
এই পদ্ধতিতে বক-পানকৌড়ি নিধন কি খুব জরুরি? ওই এলাকার একটি পুরুক মালিকের কথায়, “সকাল থেকে রাত থেকে সন্ধ্যা মাছ খেয়ে চলেছে কয়েকশো বক। পুকুর পাহাড়া দেওয়া তো সম্ভব নয়। সকাল থকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে চারাপোনা খাওয়ার প্রতিযোগিতা। বাধ্য হয়ে আমরা ওই পন্থা নিয়েছি।” স্থানীয় বাসিন্দারা আপত্তি করায় তাঁদের শুনতে হয়েছে, “পুকুর আমার, টাকা খরচ করে মাছের চারা কিনে মাছ চাষ করছি আমি। আপনার উপদেশ কেন শুনব!”
তবে, পুকুর মালিক মন্টু সরকার কিংবা লক্ষ্মী হালদাররা অবশ্য এ ভাবে পক্ষী নিধনের সঙ্গে নিজেদের জড়াতে চান-না । মন্টু বলেন, “গত কয়ে মাস ধরে কমর্সূত্রে নদিয়ায়। কী হয়েছে বলতে পারব না।” ওই এলাকার বিল বিষ্ণুপুর সমবায় সমিতির সম্পাদক লক্ষ্মী হালদারও এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন।
এমন ঘটনার সাক্ষী অবশ্য আগেও হয়েছে বহরমপুর। মাস কয়েক আগে বহরমপুরের কয়েকটি ফলের বাগানেও একই ভাবে বিষ মাখানো ফল খাইয়ে পক্ষী-নিধনের সাক্ষী রয়েছেন বহরমপুরের হরিদাসমাটি-কৃষ্ণমাটি এলাকার বাসিন্দারা। বাঁচাতে পাকা পেয়ারার গায়ে বিষ মাখিয়ে মারা হয়েছে অজস্র বসন্তবৌরি, শালিখ, বুলবুলি এমনকী বাদুড়ও। |