অন্যের মাথায় দেদার কাঁঠাল ভেঙে
বিদেশি গাড়ির শুল্ক ফাঁকি ৪৮ কোটি
ফেরারি, বেন্টলি, পোর্শে, অডি, জাগুয়ার, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ...।
সরাসরি বিদেশ থেকে গাড়ি কিনতে চান? মুখের কথা খসানো মাত্র তিনি হাজির দোরগোড়ায়। চাহিদামতো গাড়ি বিদেশ থেকে আনিয়ে সোজা পৌঁছে দিতেন ক্রেতার দরজায়। শুল্ক ফাঁকির খেল্ দেখিয়ে মুনাফা লুটতেন কোটি কোটি টাকা।
নাম অ্যানেক্স সি জোসেফ। নিবাস চেন্নাই। সিবিআইয়ের হিসেব, বিদেশি গাড়ি সরবরাহ করে গত কয়েক বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের ৪৮ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন ওই যুবক। দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়ানোর পরে কয়েক দিন আগে তিনি ধরা পড়েন দিল্লির একটি বিলাসবহুল হোটেলে। বৃহস্পতিবার তাঁকে তোলা হয় চেন্নাইয়ের সিবিআই আদালতে। তাঁর জামিনের আর্জি নামঞ্জুর হয়েছে।
হাজারো নিয়ম সত্ত্বেও কী ভাবে শুল্ক ফাঁকি দিতেন জোসেফ?
শুল্ক দফতর জানাচ্ছে, একটি নিয়মেরই সুযোগ নিচ্ছিলেন জোসেফ। এমনিতে বিদেশে যে-গাড়ির দাম ভারতীয় মুদ্রায় ৩০ লক্ষ টাকা, বিদেশ থেকে কিনে তা ভারতে নিয়ে এলে প্রায় ৪৯ লক্ষ টাকা শুল্ক দিতে হয়। তবে কোনও ভারতীয় বিদেশে গিয়ে যদি নিজের ব্যবহারের জন্য বিদেশি গাড়ি কিনে ন্যূনতম এক বছর সেখানে থাকার পরে পাকাপাকি ভাবে দেশে ফেরার সময় গাড়িটি আনতে চান, তখন শুল্ক লাগে অনেক কম। ৩০ লক্ষ টাকার গাড়ির জন্য সে-ক্ষেত্রে শুল্ক দিতে হয় মাত্র সাড়ে চার লক্ষ টাকা। নিয়মের এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই জোসেফ শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার রমরমা কারবার চালাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ শুল্ক দফতরের। তারা জানায়, বিদেশে কর্মরত ভারতীয় শ্রমিকদের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের নামে বিদেশি গাড়ি কিনতেন জোসেফ। যে-সব শ্রমিক এক বছরের বেশি বিদেশে কাজ করে ফিরে আসতেন, মূলত তাঁদেরই টোপ দিতেন চেন্নাইয়ের ওই যুবক।
সিবিআই সূত্রের খবর, ভারতের কোনও শহরে বসে ধনী ক্রেতাদের বরাত পেয়ে জোসেফ ইউরোপ, আমেরিকা, পশ্চিম এশিয়া থেকে গাড়ি কিনতেন। তবে নতুন নয়, সামান্য কয়েক দিন ব্যবহারের পরে পুরনো গাড়ি কিনতেন তিনি। যাতে ব্যবহৃত গাড়ি হিসেবে দেখিয়ে সেটিকে ভারতে নিয়ে আসা যায়।
দুবাই, কুয়েত, কাতারের মতো পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বহু ভারতীয় শ্রমিক কাজ করেন। এক বছরের বেশি থাকার পরে ভিসার মেয়াদ না-বাড়ায় তাঁদের অনেককেই দেশে ফিরে আসতে হয়।
সিবিআই জানিয়েছে, জোসেফ যোগাযোগ করতেন ওই সব শ্রমিকের সঙ্গে। গাড়ি কিনতেন তাঁদের নামে। অল্প ব্যবহৃত পোর্শে বা ফেরারি ইউরোপের কোনও শহর থেকে নিয়ে আসা হতো কুয়েতে। কাগজে-কলমে দেখানো হতো, কোনও শ্রমিক গাঁটের কড়ি খরচ করে পোর্শে বা ফেরারি কিনে কুয়েতের রাস্তায় তা চালিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। তার জন্য বিশেষ কাঠখড় পোড়াতে হতো না জোসেফকে।
১৯৬২ সালে তৈরি শুল্ক দফতরের নিয়ম অনুযায়ী বিদেশ থেকে বসতি গুটিয়ে (ট্রান্সফার অব রেসিডেন্স) আনার সময় ব্যবহার করা গাড়িও আনা যায় সামান্য শুল্ক দিয়ে। সেই নিয়মের সাহায্য নিয়ে কিছু টাকার বিনিময়ে কুয়েতের শ্রমিক দামি বিদেশি গাড়ি নিয়ে চলে আসতেন ভারতে। জাহাজে কখনও চেন্নাই, কখনও মুম্বই, কখনও কোচি সমুদ্র-বন্দরে এসে নামত সেই গাড়ি। যৎসামান্য শুল্ক দিয়ে তা ঢুকে পড়ত দেশে। তার পরে জোসেফের মধ্যস্থতায় ওই শ্রমিকের সঙ্গে কোনও ধনী ক্রেতার চুক্তি হতো। হাতবদল হয়ে যেত বিদেশি গাড়ির। এ ভাবেই জোসেফ কোটি কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
প্রায় এক বছর ধরে জোসেফকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল সিবিআই। ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স বা রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগের অভিযোগ পেয়ে সিবিআই ২০১৩ সালের মার্চে মাসে ওই যুবকের নামে মামলা করে। কিন্তু তার পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যত বারই তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে, নানা অছিলায় পালিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। বেশ কয়েক বার চেন্নাই হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদনও জানান জোসেফ। তবে প্রতি বারেই তা খারিজ হয়ে যায়।
সিবিআই জানায়, গত বছরের মাঝামাঝি একেবারেই বেপাত্তা হয়ে যান জোসেফ। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে না-পেয়ে চলতি বছরের গোড়ায় সিবিআই তাঁর সন্ধান চেয়ে দেশের সব বিমানবন্দরে ‘লুক-আউট’ নোটিস জারি করে।
কয়েক দিন আগে খোঁজ পেয়ে দিল্লির হোটেলে হানা দিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.