|
|
|
|
মমতাতেই আস্থা রাখছেন অণ্ণা
নিজস্ব প্রতিবেদন |
সাবেক শিষ্য অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পাশ থেকে সরে এসেছেন আগেই। দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে এখন তাঁর পছন্দ, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এতটাই যে, অরাজনৈতিক আন্দোলনের মুখ অণ্ণা হজারে এ বার লোকসভা ভোটের আগে মমতা ও তৃণমূলের হয়ে প্রচারে যাবেন বলে বৃহস্পতিবার ঘোষণা করে দিলেন। অণ্ণা নিজেই বলেছেন, এর আগে কখনও কোনও রাজনৈতিক দলের মঞ্চে তিনি যাননি। মমতার হয়ে প্রচারের মধ্য দিয়েই তাঁর এই নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।
লোকপাল বিলের সপক্ষে টানা অনশন-লড়াই চালিয়ে আসা অণ্ণার সঙ্গে মমতার এই নতুন বন্ধুত্বের সূত্রপাত কিছু দিন আগে। সম্প্রতি মমতার সততার প্রশংসা করে চিঠি পাঠিয়েছিলেন অণ্ণা। মমতার সঙ্গে মুখোমুখি কথাও বলতে চাইছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আলাপচারিতাও চলছিল দিন কয়েক ধরে। তারই পরিণতিতে এ বার অণ্ণার সঙ্গে কথা বলতে আগামী মঙ্গলবার দিল্লি যাচ্ছেন মমতা। সে দিনই দু’জনের একান্ত বৈঠক হওয়ার কথা।
সামনাসামনি দেখা হওয়ার আগে অবশ্য বৃহস্পতিবারই ফোনে প্রথম বার কথা হল অণ্ণা-মমতার। রাজনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত করার ডাক দেওয়া অণ্ণার কাছে এ দিন মমতার দূত হয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক, সাংসদ মুকুল রায় এবং রাজ্যসভার সাংসদ কে ডি সিংহ। অণ্ণার খাস তালুক রালেগাঁও সিদ্ধিতে দু’পক্ষের বৈঠকের পরে মমতার স্বচ্ছতা, সততার প্রশংসা করে অণ্ণা বলেন, “মমতাজি একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও ১০ বাই ১২ ফুটের ঘরে থাকেন! সরকারি বাংলো ব্যবহার করেন না! হাওয়াই চটি পরেন।” তিনি যে মমতার রাজনৈতিক ভাবাদর্শকেও সমর্থন করেন, তা-ও এ দিন স্পষ্ট করে বুঝিয়েছেন অণ্ণা। বলেছেন, “স্বাধীনতার ৬৬ বছর পরেও দেশের আর্থিক ব্যবস্থা বদলানোর কথা কেউ বলেননি। কিন্তু মমতাজি সেটা ভেবেছেন। দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে তিনিই উপযুক্ত।”
কিছু কাল আগেও অবশ্য দু’জনের সম্পর্ক এত মধুর ছিল না! দিল্লিতে এক বার অণ্ণার সঙ্গে এক মঞ্চে পুরস্কার নিতে হবে দেখে একটি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন মমতা। তৃণমূল তখন ইউপিএ-র শরিক ছিল। মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলা অণ্ণার সঙ্গে সে সময় এক মঞ্চে না ওঠার রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাও ছিল মমতার। শেষ পর্যন্ত অণ্ণার পুরস্কার-পর্ব মিটে যাওয়ার পরে পৃথক ভাবে তাঁকে পুরস্কৃত করা হবে, এই বন্দোবস্তেই সে দিন ফেরানো গিয়েছিল মমতাকে।
এখন পরিস্থিতি দৃশ্যতই বদলেছে। দিল্লির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এক সময়ে ছিলেন অণ্ণার শিবিরে। এখন দু’জনের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, তৃণমূল নেত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে অণ্ণা আদতে কেজরিওয়ালকেও এই বার্তাটা দিতে চাইছেন যে, সততা এবং স্বচ্ছতার দাবিদার একমাত্র ‘আপ’ই নয়! অন্য দিকে, অণ্ণাকে পাশে পাওয়ায় সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বামেদের বিকল্প ফ্রন্টের পাল্টা দিতে সুবিধা হল তৃণমূলের। মমতার আহ্বান সত্ত্বেও ওড়িশার নবীন পট্টনায়ক বা বিহারের নীতীশ কুমারেরা কেউই এখনও পর্যন্ত তাঁর প্রস্তাবিত ফেডেরাল ফ্রন্টে যোগ দেননি। নীতীশ বা তামিলনাড়ুর জয়ললিতা বরং রাজ্যওয়াড়ি সমঝোতা করছেন বামেদের সঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে অণ্ণার মতো দুর্নীতি-বিরোধী লড়াইয়ের
সৈনিককে পাশে পেলে জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সুবিধা হবে বলে তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন।
মুকুলবাবুদের সঙ্গে বৈঠকের পরে এ দিন তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয় অণ্ণার। তখনই মমতা অণ্ণাকে জানান, আগামী মঙ্গলবার তিনি দিল্লি গিয়ে দেখা করবেন তাঁর সঙ্গে। ওই দিন দিল্লি যাওয়াটা পূর্বনির্ধারিতই ছিল মমতার। কিন্তু ঠিক ছিল, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সরকারি একটি অনুষ্ঠান সেরে তার পরে তিনি দিল্লি যাবেন। কিন্তু মমতার ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, অণ্ণার সঙ্গে কথা হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী আপাতত দক্ষিণ ২৪ পরগনার অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার কথা ভাবছেন। ওই দিন সকাল সকাল দিল্লি পৌঁছে যাবেন। কেননা, এ দিন বাগডোগরা থেকে কলকাতা রওনার আগেই মমতা জানতে পারেন, অণ্ণা তাঁর হয়ে প্রচারে যেতে চান। অণ্ণার এই প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়ে মুকুলবাবুও বলেন, “মমতাদি এবং তৃণমূল যে ভাবে উন্নয়নের কাজ করছে, তার সমর্থনেই উনি গোটা দেশে প্রচার করবেন।”
অণ্ণার সঙ্গে এ দিন তাঁদের বৈঠককে অবশ্য ‘সৌজন্যমূলক’ বলেই মন্তব্য করেছেন মুকুলবাবু। দেশে দুর্নীতিমুক্ত সরকার গড়তে ১৭ দফা দাবি নিয়ে এখন লড়াই চালাচ্ছেন অণ্ণা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্য বলেছেন, “অণ্ণা সমাজকর্মী। এ রাজ্যে এসে তাঁর নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ করা উচিত। সারদা-কাণ্ড নিয়েও মুখ খোলা উচিত!” অধীরের মন্তব্য, “যাদের সাহস নেই, তারাই অণ্ণা হজারের হাত ধরে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে!”
|
আপনার মোবাইলে QR Reader ডাউনলোড
করে এই QR কোডটি স্ক্যান করুন আর
দেখে নিন অণ্ণা হজারের প্রতিক্রিয়া |
|
|
|
|
|
|