মরিচে লাভ কংগ্রেসেরই, বিপাকে বিজেপি

১৩ ফেব্রুয়ারি
পেপার স্প্রে, হাতাহাতি, ভাঙচুর। এ এক বিরল নজির সংসদে। উপলক্ষ তেলঙ্গানা বিল পেশ। এবং রীতিমতো হাতাহাতির মাঝেই তা আজ পেশ হল লোকসভায়। কিন্তু পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করতে চেয়েছে কি ইউপিএ সরকার? না কি কেবল লোকসভা ভোটের আগে রাজনীতি ও আসন সংখ্যার অঙ্ক কষেছে তারা?
ইউপিএ সরকারের দশ বছরের মেয়াদ প্রায় শেষ। এখন সরকারের মরিয়া প্রয়াস দেখে অনেক প্রশ্নই উঠছে বিরোধী শিবির থেকে। ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বই জানাচ্ছেন, এ যাত্রায় তেলঙ্গানা রাজ্য গঠন বিল পাশ করাতে তাঁরা মরিয়া। কারণ, রাজ্য ভাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়ার পর, সীমান্ধ্রে এখন খলনায়ক কংগ্রেস। জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে। তাই কংগ্রেস আপ্রাণ চেষ্টা করছে, পৃথক তেলঙ্গানা গঠন করে দিয়ে লোকসভা ভোটে সেখানে বিপুল জয় পাওয়ার। তেলঙ্গানার ১৭টি আসনের বেশির ভাগ দখল করতে পারলে তবু মুখরক্ষা হতে পারে।
সে দিক থেকে আজ সংসদে সীমান্ধ্রের সাংসদদের তাণ্ডব নিয়ে যতই সমালোচনা হোক, কংগ্রেস নেতৃত্ব তলে তলে খুশি। কারণ, বিজেপি নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনে তাঁদের সায় রয়েছে ঠিকই। কিন্তু আলোচনার মাধ্যমেই তা পাশ করাতে হবে। এমনকী কৌশলে বিজেপি এও জানিয়ে দেয়, কোনও সাংসদকে সাসপেন্ড করা যাবে না। কিন্তু আজ সীমান্ধ্রের সাংসদরা যা করেন, তাতে বিজেপি-র পক্ষেও তাঁদের সাসপেন্ড করার বিরোধিতা করা সম্ভব হয়নি।
ফলে এ বার বিলটি নিয়ে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে পাশ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এবং সেই কারণেই উৎসাহী কংগ্রেস। সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, আগামী সোমবার সংসদে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ হওয়ার পরেই বিলটি উভয় সভায় পাশ করার চেষ্টা হবে।
উল্টে এখন বিপাকে পড়েছেন বিজেপি নেতারা। কারণ তাঁরা ভাবতেও পারেননি হট্টগোলের মাঝে বিলটি আজ পেশ হয়ে যাবে। বস্তুত বিজেপি অন্ধ্র ভাগের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু তাঁরাও চাইছিলেন সংশ্লিষ্ট বিলটি নিয়ে কিছুটা রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে। অতীতে বাজপেয়ী জমানায় সুষ্ঠু ভাবে তিন রাজ্য ভাগের দৃষ্টান্ত তাঁদের হাতে রয়েছে। সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে অন্ধ্র ভাগ নিয়ে কংগ্রেসের রাজনৈতিক অব্যবস্থার তুলনা টানতে চাইছেন তাঁরা। তা ছাড়া লোকসভা ভোটের আগে তেলঙ্গানা বিল পাশ হলে পুরো কৃতিত্ব শুষে নেওয়ার চেষ্টা করবে কংগ্রেস। বিজেপি-র একাংশের মতে, এখন এই বিল পাশ হলে তাঁদের কোনও লাভ নেই। তবে পাল্টা মতও রয়েছে দলেই। আর এক অংশের মতে, তেলঙ্গানা বিল এখন পাশ হয়ে গেলেই মঙ্গল। তা না হলে যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে তবে উত্তপ্ত অন্ধ্র সামাল দেওয়ার দায় তাঁদের ঘাড়ে পড়বে।
তবে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের ধারণা, আজ বিলটি সংসদে পেশ করে অন্ধ্রের দু’পক্ষকেই সদর্থক বার্তা দিতে চেয়েছে কংগ্রেস। বিল পেশ করে তেলঙ্গানাকে বোঝানোর চেষ্টা হল, পৃথক রাজ্য গঠনের চেষ্টা হচ্ছে। আবার যদি বিল পাশ না করা যায়, তা হলে সীমান্ধ্রকে বলা যাবে বিল তো এখনও পাশ হয়নি। পরিস্থিতি বুঝে সংসদের কক্ষেই আলোচনায় বসেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি। পরে সুষমা বলেন, “কংগ্রেসের এখন দু’হাতেই লাড্ডু।” আডবাণী বলেন, “এখন আর বাজেট ছাড়া আর কিছুই পাশ করা উচিত নয়।”
সমাজবাদী পার্টি, বিজেডি, সিপিআই, জেডিইউ সাংসদদের নিয়ে স্পিকার মীরা কুমারের কাছে গিয়ে সুষমা দাবি করেন, তেলঙ্গানা বিল আদৌ পেশ হয়নি। তবে স্পিকার জানিয়ে দিয়েছেন, বিল পেশ হয়েছে। অনেকের মতে, বিপাকে পড়ে এখন সংসদীয় প্রথার খুঁটিনাটি নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে বিজেপি।
তেলঙ্গানা বিলের প্রক্রিয়ার উপরে নজর রাখছে জগন্মোহন রেড্ডির দল ওয়াই এস আর কংগ্রেসও। তেলঙ্গানা হলে জগনের হাতেও লাড্ডু। অন্ধ্র ভাগ করতে কংগ্রেসের তৎপরতাই তাঁর রাজনৈতিক পুঁজি। সীমান্ধ্রের কিছু কংগ্রেস সাংসদ তাঁর সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন বলেও আশা করছেন জগন।
তবে এটা ঠিক, এই সব সাত সতেরো অঙ্কের মাঝে একটা বিষয় আজ স্পষ্ট হল। পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য গঠন নিয়ে আরও একটু মেঘ কাটল। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে সংসদের অন্তিম অধিবেশনে হয়তো পাশ হয়ে যেতে পারে বিলটি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.