|
|
|
|
হাতে মেরেওছিলাম, কিন্তু পড়ল না শিশিটা
সৌগত রায় |
কাশতে কাশতেই চেষ্টা করছিলাম যাতে শিশিটা কেড়ে নেওয়া যায়। মরিয়া হয়ে হাতে মারলামও এক ঘা। কিন্তু তাও পড়ল না শিশি। রাজাগোপাল স্প্রে করেই যাচ্ছেন। আর অস্বস্তিকর গ্যাসটা গিলে নিচ্ছে সংসদ-কক্ষকে।
কাশির দমক সামলাতে পারছি না। কোনও রকমে সিটে ফিরে গিয়ে আমাদের সংসদীয় দলের ডাক্তার কাকলি ঘোষ দস্তিদারের কাছে জানতে চাইলাম, ব্যাপারটা কী বলুন তো? কীসের গ্যাস এটা?
কোন ধরনের স্প্রে ব্যবহার করা হয়েছে? উনি জানালেন, ঠিক বুঝতে পারছেন না।
তেলঙ্গানা নিয়ে ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট তো দু’দিন ধরেই চলছে। কিন্তু তাই বলে এমন আক্রমণের সামনে পড়তে হবে, কে ভেবেছিল! সকালেও আমরা নিশ্চিত করে জানতাম না যে, তেলঙ্গানা রাজ্যগঠন বিলটা এ দিনই পেশ করা হবে। কারণ, লোকসভার এ দিনের কার্যতালিকায় কিন্তু এটা রাখা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, কোন কোন বিল পেশ করা হবে তার তালিকা সাংসদরা আগেই পেয়ে যান। এ দিন তেলঙ্গনা বিল নিয়ে তেমন কোনও পূর্বঘোষণা ছিল না। যে কোনও দিনই বিল আসতে পারে, জানতাম। বৃহস্পতিবার বিল পেশ হতে পারে, সে সম্ভাবনার কথা খবরের কাগজে লেখা হয়েছে দেখেছি। কিন্তু সাংসদ হিসেবে আমাদের কিন্তু কিছু জানানো হয়নি। সকালে কার্যতালিকায় বিলটা না দেখে ভেবেছিলাম, এ দিন বিল আসছে না। কিন্তু বেলা এগারোটার সামান্য আগে সংসদে এসে শুনলাম যে বিল পেশ হবে, সুতরাং ঝামেলা অবশ্যম্ভাবী। আগের দিনই তেলঙ্গানা নিয়ে হাঙ্গামার সময় পরিস্থিতি শান্ত করা জন্য আমি ওয়েলে গিয়ে অন্ধ্র সাংসদদের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। স্বাভাবিক ভাবেই এ দিনও আশঙ্কা করছিলাম, আরও বড় অঘটন ঘটতে চলেছে।
প্রথমে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমল নাথ আমাদের বেঞ্চে এসে জানান যে, বিলটা পেশ করা হবে। অনুরোধ করেন, যাতে কোনও রকম ঝামেলা না করা হয়। কিন্তু কখন বিল আনা হবে, সেটা উনি বলেননি। এগারোটায় অধিবেশন শুরু হল। প্রথম থেকেই চেঁচামেচি। তিন মিনিটের মধ্যে অধিবেশন মুলতুবি করে দিলেন স্পিকার। তার আগেই আমি সেক্রেটারি জেনারেলকে গিয়ে বলেছি যে, তেলঙ্গানা বিল যদি আসে, তৃণমূল তার বক্তব্য জানাতে চায়। কিন্তু সেক্রেটারি জেনারেল সেই নোটিস নিতে চাননি, কারণ তখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে বিল আসবে বলে ঘোষণা করা হয়নি। বারোটায় আবার অধিবেশন শুরু হওয়ার পর ফের হাওয়া গরম হতে লাগল। তার মধ্যেই ফাঁকতালে কোনও রকম কাগজপত্র ছাড়াই মৌখিক ভাবে বিল পেশ হয়ে গেল। এমনকী সেটা পেশ হল কি হল না, ভাল ভাবে বোঝার আগেই দেখি স্পিকারের সামনে রীতিমতো হাতাহাতি বেধে গিয়েছে। তার মাঝখানে রাজ বব্বর ঠেলে সবাইকে সরাতে চেষ্টা করছেন। স্বভাববশেই আর বসে থাকতে পারলাম না।
পাছে ধাক্কাধাক্কিতে ভেঙে যায়, তাই চশমাটা খুলে রেখে ঢুকে পড়লাম ওই তাণ্ডবের মধ্যে।
পাশে ততক্ষণে শরদ যাদবও এসে গিয়েছেন। এমন সময় দেখি সীমান্ধ্রের রাজাগোপাল হাত উঁচু করে স্প্রে ছড়াতে শুরু করেছেন। বাচ্চাদের পার্টিতে যেমন গ্লিটার্স ফোম-এর মতো ফেনা ছড়ানো স্প্রে হয়, অনেকটা সে রকমই। সঙ্গে সঙ্গেই শারীরিক অস্বস্তি এবং কাশি শুরু হল। আমি ওই সাংসদদের হাত থেকে স্প্রে-টি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম। ওঁর হাতে এক বার মারলামও, যদি স্প্রে-টা পড়ে যায়। কিন্তু কাজ হল না। প্রচণ্ড কাশি শুরু হল। আমি একা না, অনেকেই তখন কাশতে শুরু করেছেন। চোখে অস্বস্তি হচ্ছে। কেউ মুখে চাপা দিচ্ছেন, কেউ চোখে। স্পিকার সিট ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন।
আমার শারীরিক অস্বস্তি তখন বাড়তে শুরু করেছে। কাকলি আমায় চোখে জল দিতে বললেন। তখনও তেলঙ্গানাপন্থী আর বিরোধীদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ চলছে। আমি বেরিয়ে চোখে জল দিতে এলাম। ধস্তাধস্তি করার সময় হাতেও স্প্রে লেগেছিল। চোখে জল দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্বালা শুরু হল। তখনই বুঝতে পারলাম, রাসায়নিক নাম যাই হোক না কেন, জিনিসটা আসলে পেপার স্প্রে। লঙ্কার ঝাঁঝেই চোখ জ্বলছে।
কত ক্ষণ কেটে গিয়েছে। রাত্তিরে এই লেখা তৈরি করতে গিয়েও দেখছি, চোখের জ্বালা অনেকটা কম হলেও পুরোপুরি সারেনি!
সংসদে জ্বালাময়ী বক্তৃতা অনেক শুনেছি। কিন্তু এমন জ্বালাময়ী আক্রমণ আগে দেখিনি! |
|
|
|
|
|