ভালবাসার দিনে অমিল ভালবাসার গোলাপ।
মল্লিকবাজার থেকে শুরু করে হগ মার্কেট বা লেক মার্কেট, মানিকতলা বাজার সর্বত্রই আকাল ডাচ গোলাপের। যেটুকু যা মিলছে, তার দামও খুব চড়া। তাই এই ভ্যালেন্টাইন্স ডে -তে ভরসা ‘মিনিপল’ বা ‘ম্যাটগোট’ই। অথচ ভ্যালেন্টাইন্স ডে -তে ডাচ গোলাপেরই চাহিদা বেশি। রাজ্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে, এ রাজ্যে ডাচ গোলাপ আসে কর্নাটক বা মহারাষ্ট্র থেকে। হাওড়ার বাগনানে এই গোলাপের চাষ করার কথা হলেও তা এখনও হয়ে ওঠেনি। আমদানি করার কারণেই দাম বেড়ে যায় বিদেশি গোলাপের।
লম্বা ডাঁটির ডাচ গোলাপের কাঁটা থাকে না। দেখতে অনেকটা ‘কাপ’-এর মতো এই গোলাপের সুরভি কম হলেও এর স্থায়িত্ব অনেক বেশি। তিন চার দিনের আগে শুকোয় না। অন্য দিকে, এ রাজ্যে যে মিনিপল গোলাপ হয়, তার ডাঁটি বেশি লম্বা নয়, ২৫ সেন্টিমিটারের মতো। সেখানে ডাচ গোলাপের ডাঁটি প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার লম্বা। মিনিপল গোলাপে কাঁটাও থাকে। বেশি সুগন্ধী হলেও স্থায়িত্ব কম। মল্লিকঘাটের এক ফুলবিক্রেতা অরিজিত্ ধর বলেন, “ডাচ গোলাপের লম্বা ডাঁটিকে রঙিন রাংতা দিয়ে মুড়ে সুন্দর করে সাজানো যায়। এই গোলাপ আকারেও বড়। উপহার দেওয়ার পক্ষে ভাল। তাই এর চাহিদাও থাকে বেশি।” হগ মার্কেটের এক ফুলবিক্রেতা জানান, এ মরসুমে ডাচ গোলাপ যেহেতু খুব কম দোকানেই মিলছে, তাই এক -একটার দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা হয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে মিনিপল গোলাপ বা ম্যাটগোটের চাহিদাও থাকে অন্য দিনের চেয়ে বেশি। ডাচ গোলাপের আকালের কারণে তাদের দাম বেড়ে গিয়েছে আরও। এক একটা মিনিপল বা ম্যাটগোট বিকোচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকায়।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় মিনিপল গোলাপের চাষ হয় প্রচুর। হাওড়ার দেউলটি, বাগনানের ম্যাটগোট গোলাপের চাহিদাও যথেষ্টই। সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, “এই সময়ে মিনিপল বা ম্যাটগোট রাজ্যের বাইরেও রপ্তানি হয়। তবে আমাদের এখানে ডাচ গোলাপের চাহিদাও খুব বেশি থাকে। রাজ্যে ডাচ গোলাপ চাষের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল সরকার। তবে তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। প্রক্রিয়াটি থেমে গিয়েছে। অথচ এ রাজ্যের চাষিরা ডাচ গোলাপের চাষ করতে খুবই উত্সাহী।”
রাজ্য সরকারের কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরনের গোলাপ চাষের জন্য উন্নত প্রযুক্তি দরকার। দরকার চাষিদের প্রশিক্ষণও। এ ব্যাপারে ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। যাঁরা এই বিদেশি গোলাপ চাষ করতে ইচ্ছুক, বৈঠক হয়েছে সেই সব চাষিদের সঙ্গেও। কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “এই বিদেশি গোলাপ চাষ করতে হলে পলি হাউস তৈরি করে চাষ করতে হবে। ঠিক হয়েছে এই চাষের জন্য যে খরচ হবে, তার ৫০ শতাংশ সরকার দেবে। বাকি পঞ্চাশ শতাংশ ও জমির ভার চাষিদের। আমরা উদ্যানপালন বিভাগের আধিকারিদের সঙ্গে কথা বলেছি। এই চাষ আমাদের রাজ্যে শুরু হবে শীঘ্রই। তখন আর বিদেশি গোলাপের জন্য ভিন্ রাজ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না।” |