আদালত চত্বরে দেখা করতে এসেছেন অভিযুক্তের স্ত্রী। হাতে করে নিয়ে এসেছেন স্বামীর প্রিয় একটি বিস্কুটের প্যাকেট। কথা বলার ফাঁকে স্বামীর হাতে তুলে দিলেন প্যাকেটটি। সাদামাটা এই বিস্কুটের প্যাকেটের মধ্যে পুরে দেওয়া হয়েছিল একটি মোবাইল ফোনের সিমকার্ডও ! আদালতে শুনানি শেষে বিস্কুটের প্যাকেটটি নিয়ে জেলে ঢুকে পড়ল অভিযুক্ত। তার সঙ্গে জেলের ভিতরে চালান হয়ে গেল সিমকার্ডটিও ! আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে অপহরণের চক্র চালানোর তদন্তে নেমে জেলের ভিতরে সিম পাচারের এই কায়দার সন্ধান পেয়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা।
গত শুক্রবার কাজ দেওয়ার ছুতোয় নিউ আলিপুরের এক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কয়েক জন দুষ্কৃতী। পরে কয়েক লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান তিনি। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, মাদক মামলায় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি সঞ্জিত পুরকায়েত নামে এক যুবকই এই অপহরণের মূল চাঁই। এর পরেই গত সোমবার জেল থেকে সঞ্জিতকে গ্রেফতার করা হয়। তার পরে পাকড়াও করা হয় রাজেশ্বর নস্কর ওরফে রাজ্জো এবং মুদাস্সর নজর নামে সঞ্জিতের আরও দুই শাগরেদকে। তারাও মাদক মামলায় ওই একই জেলে বন্দি ছিল।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, মাদক মামলায় শুনানির জন্য আদালতে গিয়েছিলেন সঞ্জিত -রাজ্জোরা। সেই সময়ে রাজ্জোর স্ত্রী টুম্পা বিস্কুটের প্যাকেটের মধ্যে একটি সিমকার্ড পুরে তা রাজ্জোর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সেই সিমকার্ড ব্যবহার করেই নিউ আলিপুরের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীকে ফোন করা হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
বৃহস্পতিবার রাজ্জোর জেলের কুঠুরিতে তল্লাশি চালিয়ে সেই মোবাইলটি উদ্ধার করেছেন গুন্ডাদমন শাখার অফিসারেরা। তবে মোবাইল ফোনের সিমকার্ড ও ব্যাটারি খুলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সেগুলির সন্ধান চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, জেলে বসেই মোবাইলে ফোন করে ওই ব্যবসায়ীর কাছে নিজেকে ওয়েব পেজ ডিজাইনার বলে পরিচয় দিয়েছিল সঞ্জিত। ছোটবেলায় বাবা -মা মারা যাওয়ার পরে দমদমের একটি মিশনারি স্কুলের অনাথ আশ্রমে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিল সে। সেই সুবাদেই ইংরেজিতে কথাবার্তা বলতে পারে সে। কলকাতা পুলিশের এক গোয়েন্দাকর্তার কথায়, “ব্যবসায়ীদের ফোন করার সময়ে ইংরেজিতেই কথা বলত সঞ্জিত। তাতে ওই ব্যবসায়ীদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতাও বাড়ত তার। ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলাও সহজ হত সঞ্জিতের পক্ষে।”
গোয়েন্দাদের দাবি, নিউ আলিপুরের ব্যবসায়ীও সেই ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। ব্যবসার কথা বলতে তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির কাছে হাজির হলে তাঁকে অপহরণ করে সঞ্জিতের শাগরেদরা। তাদের অবশ্য এখনও গ্রেফতার করতে পারেননি লালবাজারের গোয়েন্দারা। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ঘটনায় স্থানীয় কয়েক জন দুষ্কৃতীর নাম -জানা গিয়েছে। তবে ঘটনার পর থেকেই এলাকা ছাড়া তারা। তাদের সন্ধানে তল্লাশি চালিয়েও কোনও লাভ হয়নি। পুলিশ সূত্রের খবর, অপহরণের টাকার ভাগ সঞ্জিত -রাজ্জোরা পায়নি। ফলে মুক্তিপণ বাবদ দেওয়া কয়েক লক্ষ টাকা ওই দুষ্কৃতীদের কাছে রয়েছে। তাদের গ্রেফতার না করা গেলে মুক্তিপণের টাকাও উদ্ধার করা সম্ভব হবে না।
পুলিশি হেফাজতে থাকা সঞ্জিত ও তার শাগরেদদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, এর আগেও তারা কয়েকটি অপহরণ করেছে। বাগুইআটির এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে টাকা ও ল্যাপটপ হাতিয়ে নিয়েছিল তারা। সেগুলিও উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। উত্তর কলকাতার কয়েক জন ব্যবসায়ীকেও সঞ্জিতেরা অপহরণ করেছিল বলে সন্দেহ পুলিশের। |