শরীরের নীচের অংশ লেপে ঢাকা। ঊর্ধ্বাংশে ব্লাউজ। টিফিনে স্কুল থেকে বাড়িতে খেতে এসে ঘরের বিছানায় এ ভাবেই মায়ের নিথর দেহ দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীদের খবর দিল কিশোরী মেয়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরের ওই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল মুরারই থানার কনকপুরে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, জাহেরা বিবি (৪৪) নামে ওই বধূকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। ঘর থেকে বেশ কিছু নগদ টাকা ও সোনার অলঙ্কার চুরি গেলেও খুনের উদ্দেশ্য নিয়ে পুলিশ এখনও ধন্দে। এসডিপিও (রামপুরহাট) কোটেশ্বর রাও বলেন, “ওই মহিলার হাত ও কানের সোনার গয়না চুরি গিয়েছে। এ ছাড়াও ঘরের আলমারি ও ড্রয়ার থেকে নগদ টাকা এবং সোনার গয়না চুরি করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, ওই মহিলা যখন স্নান করতে যাচ্ছিলেন সেই সময়ই তাঁকে খুন করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।” এ দিনই নিহতের স্বামী পুলিশের কাছে একটি খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত মহিলা গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের বধূ। তাঁর স্বামী লাগোয়া বাহাদুরপুর গ্রামের মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক। দুই মেয়েকে নিয়ে তাঁদের সংসার। বড় মেয়ে সিউড়ি থেকে একটি কলেজে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করছেন। ছোট মেয়ে মাধ্যমিক দেবে। স্বামী ও ছোট মেয়ে স্কুলে চলে যাওয়ার পরে সাধারণত ওই বধূ ঘরে একাই থাকতেন। নিহতের স্বামী আতিউর রহমান বলেন, “প্রতি দিনের মতো এ দিনও সকালে সওয়া ১০টা নাগাদ মোটর বাইক চালিয়ে স্কুলে চলে গিয়েছিলাম। দুপুরে ছোট মেয়ে তাজমিরা স্কুল থেকে টিফিন খেতে বাড়ি ফিরে মাকে ওই অবস্থায় দেখতে পায়।” তাজমিরা জানিয়েছে, দুপুর দেড়টা নাগাদ সে বাড়ি ফিরেছিল। কিন্তু বাড়ির সদর দরজা এবং ভেতরের গ্রিলের দরজা খোলা ছিল। তার কথায়, “এ ভাবে দুটো দরজা খোলা পড়ে থাকার কথা নয়। তাই প্রথমে খানিকটা অবাকই হয়েছিলাম। দরজা পেরিয়ে মাকে ডাকি। কিন্তু মায়ের থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। শেষে মায়ের শোওয়ার ঘরের দিকে এগিয়ে যাই। ঘরে ঢুকে দেখি মা ওই ভাবে শুয়ে রয়েছেন।” মেয়ে মাকে বারবার ডাকলেও কোনও সাড়া পায়নি। বাড়ির বাইরের দিকের একটি অংশ এক ওষুধ দোকানিকে ভাড়া দেওয়া আছে। মায়ের সাড়া না পেয়ে তাজমিনা তখন তাঁর কাছেই ছোটে। তিনি এসে মহিলার স্বামীকে খবর দেন। খবর ছড়ায় পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যেও। খানিক ক্ষণের মধ্যেই স্থানীয় এক হাতুড়ে চিকিৎসককে ডেকে নিয়ে আসা হয়। তিনি পরীক্ষা করে জানান, মহিলার মৃত্যু হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই বধূ সম্ভবত স্নানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বধূ সচরাচর স্নানের আগে কাপড় কেচে রাখতেন। দেহ উদ্ধারের পরে দেখা গিয়েছে কাচা কাপড় বাড়ির কলতলায় রাখা রয়েছে। ওই কাজ হয়ে যাওয়ার পরে তিনি যখন স্বানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখনই তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশের অনুমান। খুনের কারণ হিসেবে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ দু’টি বিষয়কে চিহ্নিত করেছে। এক, বাড়িতে চুরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাধা পেয়েই দুষ্কৃতীরা ওই বধূকে খুন করে থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত, কোনও পারিবারিক শত্রুতার কারণে পরিচিত কেউ-ই মহিলাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। পুলিশকে ধোঁকা দিতেই কিছু জিনিস চুরি করা হয়েছে। পুলিশ আপাতত দু’টি সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে তদন্ত করছে। আরও একটি বিষয় নিয়েও পুলিশ এখনও ধন্দে রয়েছে। বাড়ির দু’টি দরজা কে খুলল। মহিলা নিজেই দরজা খুলেছিলেন নাকি দুষ্কৃতীরা বাড়ির পাঁচিল টপকে ভেতরে ঢুকে মহিলাকে খুন করে দরজা খুলে বেরিয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়। নিহত বধূর স্বামী অবশ্য নির্দিষ্ট কারও নামে খুনের অভিযোগ করেননি। এ দিনই দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। |