জল-সঙ্কট মিটবে কবে, প্রশ্ন পুরবাসীর
হরের সব থেকে বড় সমস্যা পরিস্রুত পানীয় জল। কিন্তু তার পরিষেবার হালের দিকে তাকালে স্বস্তি পাবেন না পুরসভার অনেক কাউন্সিলরই, অন্তত এমনটাই দাবি করছেন পুরবাসীর একটা বড় অংশ। শুধু পানীয় জলই নয়, মানুষের ক্ষোভ জমছে যানজটে জর্জরিত রাস্তাঘাট, বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা, আবর্জনাময় এলাকা, পথবাতিহীন অন্ধকার রাস্তার দিকে চেয়েও। বাসিন্দাদের ওই ক্ষোভ নিয়ে অবশ্য খুব একটা চিন্তিত নন পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত। তাঁর দাবি, বেশির ভাগ অভিযোগই ঠিক নয়। তা ছাড়া কয়েক কোটি টাকা খরচ করে শহরবাসীর জন্য দু’টি নতুন জলপ্রকল্পের আশাও তিনি দেখাচ্ছেন। ওই জলপ্রকল্প কবে তৈরি হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু না বললেও তাতে সমস্যা মিটে যাবে বলেই পুরপ্রধানের দাবি।
বস্তুত, জল নিয়ে এই শহরের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। শীত পার হতেই জল নিয়ে সঙ্কটের চেহারা দেখা যায় অধিকাংশ ওয়ার্ডেই। অতীতে বাম আমলে সমস্যা মেটাতে তৈরি করা হয়েছিল ‘ইন্দো-জার্মান জলপ্রকল্প’। কিন্তু শহরের বর্তমান জনসংখ্যা যা তাতে ওই জলপ্রকল্প আর সমস্যা মেটাতে পারছে না। ফলে পানীয় জল নিয়ে মানুষের দুর্ভোগের চেহারাটা এখনও বদলায়নি। প্রতি বছরের মতো আগামী গ্রীষ্মেও পানীয় জলের সঙ্কট আরও বাড়বে বলেই বোলপুরবাসীর একটা বড় অংশেরই আশঙ্কা। তাই অবিলম্বে পুরসভার কাছে চাহিদা মোতাবেক পানীয় জলের ব্যবস্থা করার দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা। প্রাক্তন কংগ্রেস পুরপ্রধান তপন সাহার অভিমত, “ওই জলপ্রকল্প যখন তৈরি করা হয়েছিল তখন পুর এলাকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৬৬ হাজার। ওই প্রকল্প ওই সংখ্যক মানুষেরই চাহিদা মেটাতে পারে। কিন্তু বর্তমান পুর এলাকার জনসংখ্যা ৯০ হাজারের বেশি। সেই অনুযায়ী জলের চাহিদা মেটাতে গোটা প্রকল্পের উপরেই চাপ পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে পানীয় জলের জন্য এখনই কোনও বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে না তুললে আগামী দিনে সমস্যা ভয়ঙ্কর আকার নেবে।”
জলের জন্য লাইন মকরমপুরে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
বোলপুরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মিশন কম্পাউন্ড, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্কুলবাগান এলাকা তুলনায় একটু উঁচু জায়গায় স্থিত। ফলে বহু সময়ই ওই সব এলাকায় পর্যাপ্ত পানীয় জল পৌঁছয় না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শীতকালে তেমন বোঝা না গেলেও গ্রীষ্ম পড়তে না পড়তেই পানীয় জল নিয়ে সঙ্গট তীব্র হতে শুরু করে। এ নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর থেকে পুরপ্রধান সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও সমস্যা মেটেনি বলেই জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। পানীয় জলের অপ্রতুলতা রয়েছে ১ নম্বর ওয়ার্ডের মকরমপুরেও। বাসিন্দাদের অভিযোগ ‘ইন্দো-জার্মান জলপ্রকল্প’ থেকে দিনে তিন বার মিললেও পরিমাণ এতটাই কম যে এক বালতি জল ধরতে প্রায় পাঁচ থেকে সাত মিনিট সময় লেগে যায়। সেই জল নিতেই দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। হিমশিম খান পাড়া প্রতিবেশীরা। অবিলম্বে সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান নিয়ে পুরসভা না ভাবলে আগামী দিনে তীব্র জলসঙ্কটের আশঙ্কা করছেন পুরবাসীও।
পুরপরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে আরও কয়েকটি ক্ষেত্রেও। অভিযোগ, এত দিনেও বোলপুর পুরসভার বেশ কিছু এলাকায় পথবাতি বসানো যায়নি। ফলে রাতে ওই সব এলাকা দিয়ে যাতায়াত করতে সমস্যায় পড়তে হয় বাসিন্দাদের। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন মেয়েরা। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাছারিপট্টি, আদি পুকুরপাড় এলাকায় খুঁটি বসানো হলেও তাতে কোনও বিদ্যুৎ সংযোগই নেই! পথবাতি না থাকা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বাইপাস সংলগ্ন এলাকাগুলিতেও। ওই সব এলাকায় বাইপাস সংযোগকারী উপযুক্ত রাস্তাঘাট গড়ে না ওঠা নিয়েও সমান ক্ষোভ রয়েছে মানুষের মধ্যে। এ ছাড়া শহরের রাস্তাঘাটের মান নিয়ে আলাদা করে অভিযোগ তো রয়েইছে। শহর, বিশেষ করে শহর সংলগ্ন পুর এলাকার জল নিকাশী ব্যবস্থা নিয়েও সন্তুষ্ট নন অনেকেই। একাংশের মানুষের অভিযোগ, নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কার না করার জন্যই এমনটা হচ্ছে। যার জেরে বোলপুরের স্টেশন রোড থেকে শান্তিনিকেতন রোড পর্যন্ত এবং চৌরাস্তা থেকে ওপারে চিত্রা মোড় প্রভৃতি এলাকায় জল নিকাশি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে বলে বাসিন্দাদের একাংশের দাবি।
শুধু তাই নয়, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নানা সুবিধা সুযোগের মতো নানা সরকারি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুযোগ মেলা নিয়েও এক রকমের অসন্তোষ রয়েছে পুরবাসীর মধ্যে। এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। এ দিকে, পরিষেবা না মেলার নেপথ্যে সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গাকেই অবশ্য চিহ্নিত করছেন পুরসভার আধিকারিকদের একটা অংশ। তাঁরা বলছেন, “৯০ হাজার বাসিন্দাকে পুর পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো এই পুরসভার নেই। কর্মীদের সংখ্যা আগের তুলনায় বাড়লেও তা পর্যাপ্ত নয়। বর্তমান পুরপরিষেবা আদতে ৬৫-৭০ হাজার মানুষের জন্য বরাদ্দ। সরকার বোলপুর পুরসভার পরিকাঠামো প্রয়োজন অনুযায়ী গড়ে না তুললে সমস্যা মেটা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।”
বাসিন্দাদের একাংশের ওই সব অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি সুশান্তবাবু। তিনি বরং আশার কথাই শুনিয়েছেন। তৃণমূল পুরপ্রধানের দাবি, কিছু জায়গায় প্রয়োজনের তুলনায় জলের পরিমাণ কম হলেও জল নিয়ে সঙ্কটের চেহারাটা তেমন ভয়ঙ্কর নয়। ওই পরিস্থিতি সামলাতেও তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন জানিয়ে প্রধান বলেন, “৩৮ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অজয় নদ ও কোপাই নদীতে দু’টি জলপ্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের থেকে ২০ কোটি টাকার অনুদানও এসে গিয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত তার শুরু হবে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, শীঘ্রই ‘ইন্দো-জার্মান জলপ্রকল্পে’র দ্বিতীয় দফার কাজও শুরু হয়ে যাবে। নিকাশি ব্যবস্থা, পথবাতি, রাস্তাঘাট, সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে ওঠা অভিযোগও ঠিক নয় বলেই পুরপ্রধানের দাবি। সুশান্তবাবু বলেন, “বেশ কিছু এলাকার জল নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করতে সাড়ে চার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। আরও সাড়ে ছ’ কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা এবং নিকাশি ব্যবস্থার হাল ফেরাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে।” সব কাজই দ্রুত সম্পন্ন করা হবে বলে তাঁর আশ্বাস।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.