শুধু রাজ্যই নয়, দেশ-বিদেশের কাছেও কালনার ঐতিহ্য তুলে ধরতে পর্যটন উৎসব শুরু হল বৃহস্পতিবার। শহরের রাজবাড়ি মাঠে উৎসবের সূচনা করেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী।
বর্ধমান রাজপরিবারের হাত ধরে ভাগীরথীর গা ঘেঁষা এই শহরে বেশ কিছু মন্দির রয়েছে। যার মধ্যে ১০৮ মন্দির, প্রতাপেশ্বর মন্দির, লালজি মন্দির, জোড়া শিবমন্দিরের টেরাকোটার ভাস্কর্য নজর কাড়ার মতো। এছাড়া বেশ কিছু শতাধিক বছরের পুরনো মসজিদও রয়েছে। কিন্তু এত কিছু থাকা সত্ত্বেও বাসিন্দাদের আক্ষেপ, পর্যটকের ভিড় নেই শহরে। তাঁদের মতে প্রচারের অভাবই এর মূল কারণ। বাসিন্দাদের আক্ষেপ মেটাতেই আসরে নামে কালনা পুরসভা। কালনার বিধায়ক তথা পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডু শহরে পর্যটন মেলা করার উদ্যোগ নেন। উৎসব কমিটি তৈরি করে বাস, ট্রেন, রাস্তা সব জায়গায় পোস্টার টাঙিয়ে সপ্তাহখানেক আগে থেকে প্রচারও শুরু হয়। সরস্বতী পুজোর মণ্ডপেও প্রচার চালানো হয়।
|
এ দিন অনুষ্ঠানের শুরুতেই বর্ণাঢ্য মিছিলে পা মেলায় এনসিসি, বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়া ও সাধারণ মানুষ। লোকগীতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন ছিল। মঞ্চের চারপাশে বৃত্তাকারে রয়েছে ৪৯টি স্টল। সেখানে বাঁকুড়ার কাঠের কাজ, কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল, বাংলাদেশের বাসন থেকে কালনার তাঁতের শাড়ি সবেরই পসরা বসেছে। পর্যটকদের জিভে জল আনতে রয়েছে রকমারি মিস্টির স্টলও। যেমন, কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, কালনার পান্তুয়া, মাখা সন্দেশ প্রভৃতি। উদ্যোক্তারা জানান, পর্যটকদের জন্য উৎসব মঞ্চের কাছাকাছি মাঝ ভাগীরথীতে রাখ হয়েছে ভাসমান লঞ্চ। তাতে খাবারেরও ব্যবস্থা রয়েছে। রাখা হয়েছে একটি বার্জও, যাতে ধাত্রীগ্রাম থেকে কিলোমিটার দু’য়েক জলপথে পর্যটকদের ঘোরানো হবে। রয়েছে ঠাকুরবাড়ির ভোগ খাওয়ার ব্যবস্থাও। লালজি, কৃষ্ণচন্দ্র এবং মহাপ্রভুর মন্দিরে অবশ্য ভোগ খেতে গেলে জনপ্রতি ১০০ টাকা করে দিতে হবে। শহর ও গ্রামে পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখাতে বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্টেশন থেকে পর্যটকদের নিয়ে আসতেও রয়েছে বিশেষ বাস। কালনা পুরসভার কাউন্সিলর তথা উৎসব কমিটির সদস্য আনন্দ দত্ত জানান, পর্যটকেরা রাতে থাকতে চাইলে উৎসব প্রাঙ্গণ থেকেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। বিধায়ক বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “প্রথম দিনেই অনেকে এসেছেন। বাকি দিনগুলিতে আশা করি আরও মানুষের ঢল নামবে।” অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্যের ক্ষুদ্র, কুটীর ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু, কালনার ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক আশিস চৌধুরী-সহ অনেকেই। কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, “রাজ্য সরকারের তরফে পর্যটনকে কেন্দ্র করে যে ওয়েবসাইট হচ্ছে সেখানে কালনার দ্রষ্টব্য তুলে ধরা হবে। না এলে জানতেই পারতাম না এখানে এত কিছু রয়েছে।” |