মাটিতেই ফসল ফলে। অথচ রাজ্যের শস্যগোলায় যে দিন মাটি উৎসব শুরু হচ্ছে, বর্ধমান জেলা কৃষি দফতরের অবস্থা শোচনীয়। যুগ্ম কৃষি আধিকারিক-সহ বহু পদ শূন্য।
আজ, শুক্রবার থেকে পানাগড়ের বিরুডিহায় মাটি উৎসবের উদ্বোধনে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ সূত্রের খবর, তাঁর হেলিকপ্টারে আসার কথা। কিন্তু জাতীয় সড়কের দু’পাশ মুড়ে দেওয়া হয়েছে ফ্লেক্সে। রাজ্য সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মসূচির প্রচারের পাশাপাশি বলা হয়েছে মাটিকে সযত্নে রাখা উচিত, এই মাটিতেই কৃষক ফসল ফলান ইত্যাদি।
কে করবে মাটি-কৃষকের যত্ন?
এই মুহূর্তে জেলা কৃষি দফতরে অফিসার বাদে মোট ১২৭২টি পদের মধ্যে ৮০৮টিই শূন্য। ৪১৮টি কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক পদের মধ্যে ২৯৪টিতে লোক নেই। ফলে সরকারি কৃষি প্রযুক্তি আর মাঠে পৌঁছতে পারছে না, জানাচ্ছেন জেলা কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা।
গত ৩১ জানুয়ারি জেলার উপ-কৃষি আধিকারিক (প্রশাসন) শ্যামল দত্ত অবসর নিয়েছেন। তিনি দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন উপ-কৃষি আধিকারিক (বিশ্বব্যাঙ্ক) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়কে। শ্যামলবাবু বলেন, “অবসরের আগে আমায় বলা হয়েছিল, একই পদে এক্সটেনশন দেওয়া হবে। কিন্তু সেই সংক্রান্ত চিঠি না পেয়ে নির্দিষ্ট দিনেই অবসর নিয়েছি। আমার পদে বা জেলায় অনেক পদই শূন্য। বারবার চিঠি লিখেও নিয়োগ পাওয়া যায়নি।” |
৮৭ জন অফিসারের মধ্যে রয়েছেন ৭১ জন। যুগ্ম কৃষি আধিকারিকের পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। কৃষি খামারগুলিতে সহ-কৃষি আধিকারিকের ৫টি পদের মধ্যে ২টি শূন্য। ব্লকে বহাল সহ-কৃষি আধিকারিকদেরও ৩টি পদ ফাঁকা। সহ-কৃষি আধিকারিক (প্রশাসন) পদে কর্মী নেই দুর্গাপুর, কালনা ও কাটোয়া মহকুমা কৃষি দফতরে। ব্লক কৃষি খামারে থাকার কথা ১৭ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের, রয়েছেন মাত্র ১ জন। ফলে খামারগুলিতে সরকার নির্দেশিত চাষ-আবাদ কাজ শিকেয় উঠেছে। ‘গ্রুপ বি’ স্তরের অর্থাৎ কারিগরি কৃষিকর্মীদের ২৮টি পদের মধ্যে কর্মী রয়েছেন মাত্র ৬টি পদে। ‘গ্রুপ সি’ স্তরে অর্থাৎ করণিক থেকে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক (কেপিএস) পদে থাকার কথা ৫৮৩ জন। রয়েছেন মোটে ১৮১ জন। মোট ৪১৮টি কেপিএস পদের মধ্যে ২৯৪টিতে পদে দীর্ঘদিন কোনও নিয়োগই হয়নি। ‘গ্রুপ ডি’ স্তরে ৬৬১টি পদের মধ্যে ৩৮৪টিই শূন্য।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রের একাংশের দাবি, বাম আমল থেকেই অবসরপ্রাপ্ত কমযদের জায়গায় নিয়োগ বন্দ হয়েছিল। মুষ্টিমেয় কর্মীর উপর বছরের পর বছর ধরে কাজের বোঝা জমেছে। এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, ব্লক কৃষি খামারগুলিতে কাজ করানোর কেউ নেই। তৃণমূল সরকারের আমলেও শূন্য পদগুলিতে নিয়োগ হয়নি। কিন্তু একের পর এক নতুন কর্মসূচি পালনের জন্য কর্মীদের উপরে চাপ আসছে।
জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “কৃষিতে নতুন-নতুন কারিগরি বা চাষের পদ্ধতি আসছে। সেগুলি আমাদের মাঠে-মাঠে পৌঁছে দেওয়ার কথা। কিন্তু যাঁরা সে কাজ করতে পারেন, সেই কেপিএস-রাই তো নেই! রাজ্য সরকারকে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও সামান্য কয়েক জন চুক্তিভত্তিক কর্মী নেওয়া ছাড়া কোনও নিয়োগ হয়নি।”
নতুন সরকারের আমলে কৃষিমন্ত্রী বদল হয়েছে দু’বার। প্রথমে সিঙ্গুর থেকে নির্বাচিত রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ছিলেন কৃষিমন্ত্রী। পরে তাঁর জায়গা নেন আসানসোলের মলয় ঘটক। মলয়বাবুর বক্তব্য, “শূন্যপদের অনেকগুলিতেই আগামী দিনে নিয়োগ হবে। কেপিএস পদে নিয়োগের জন্য গত বছর ৮ জুলাই পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা নিয়েছিল। তার ফল আমরা এখনও জানতে পারিনি।” |