অসুস্থতার দরুণ পাড়ুইয়ের সাগর ঘোষ হত্যা-মামলার তদন্তভার তিনি নিতে পারবেন না। রাজ্য পুলিশের ডিআইজি সিআইডি দময়ন্তী সেন চিঠি লিখে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন। রাজ্য সরকারের তরফে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের হাতে দময়ন্তীর চিঠিটি তুলে দেওয়া হয়েছে।
পাড়ুই-কাণ্ডে সিআইডি তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে ক্ষুব্ধ বিচারপতি দত্ত সোমবার বর্তমান তদন্তকারী অফিসারকে সরাতে বলেছিলেন। এবং বিকল্প হিসেবে দময়ন্তীর হাতে তদন্তভার অর্পণের প্রস্তাব দিয়ে জানিয়েছিলেন, দময়ন্তীকে একান্তই পাওয়া না-গেলে সমান পদমর্যাদার কোনও অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এখন দময়ন্তী নিজেই এ ব্যাপারে তাঁর অপারগতা প্রকাশ করায় আদালত ও সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা জানা যাবে আজ, বৃহস্পতিবার।
প্রসঙ্গত, পাড়ুই-মামলার এফআইআরে অভিযুক্ত হিসেবে প্রথম দু’টো নাম যাঁদের, তাঁরা হলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। ওই ‘দুই ভদ্রলোককে’ কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সোমবার হাইকোর্টে সে প্রশ্নও তুলেছিলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। পুলিশ অবশ্য এখনও ওঁদের গ্রেফতার করেনি। আজকের শুনানিতে আবেদনকারীর তরফে এ প্রসঙ্গটিও ওঠার কথা রয়েছে।
হাইকোর্টের নির্দেশে মধ্যমগ্রাম-কাণ্ডের তদন্ত করছেন দময়ন্তী। মধ্যমগ্রাম-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টও তিনি মঙ্গলবার হাইকোর্টে জমা দিয়েছেন। আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, মধ্যমগ্রামের গণধর্ষণ ও ধর্ষিতার অপমৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই ঠেকাতে দময়ন্তীকে তদন্তের দায়িত্বে আনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) বিমল চট্টোপাধ্যায় স্বয়ং। বাদীপক্ষের পাশাপাশি বিচারপতি দত্তও তা মেনে নেন। তার পরে হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে মধ্যমগ্রাম-কাণ্ডের তদন্তভার ন্যস্ত হয় দময়ন্তীর উপরে। সাগর-খুনেও সিবিআই চেয়ে আদালতে আবেদন হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রেও সিআইডি-তদন্তের রকমসকম দেখে অসন্তুষ্ট বিচারপতি নিজে থেকেই দময়ন্তীর নাম প্রস্তাব করেছেন।
এমতাবস্থায় এ দিন সকালে এজলাস বসতেই বিচারপতির হাতে দময়ন্তীর লেখা চিঠিটি তুলে দেন রাজ্যের জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বিকল্প হিসেবে অন্য কোনও অফিসারের নাম তিনি জানাননি। এক তরুণ আইনজীবীর মৃত্যুর জেরে হাইকোর্টে এ দিন আইনজীবীরা কাজে যোগ দেননি। সকাল সাড়ে দশটায় কাজ শুরু হয়েই সারা দিনের জন্য স্থগিত হয়ে যায়।
বিকল্প তদন্তকারী কে হতে পারেন?
প্রশ্নটা স্বভাবতই উঠছে। এই মুহূর্তে সিআইডি-তে ডিআইজি পদমর্যাদার অফিসার বলতে এক মাত্র দময়ন্তী-ই। তাঁর উপরে রয়েছেন এক জন আইজি। সিআইডি-সূত্রের ইঙ্গিত, পাড়ুই-কাণ্ডের বিকল্প তদন্তকারী হিসেবে রাজ্য সরকারের তরফে আজ হাইকোর্টকে ওই আইজি’র নামই সুপারিশ করা হবে। তার পরে আদালত যেমন নির্দেশ দেবে, সেই পথে তদন্ত করানো হবে। নিহতের পরিবারও আদালতের উপরে আস্থা রাখছে। “বিচার ব্যবস্থায় ভরসা আছে। আশা করি, দময়ন্তী সেনের মতোই দক্ষ অফিসারকে দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হবে।” মন্তব্য করেছেন সাগরবাবুর ছেলে হৃদয় ঘোষ।
এ দিকে সাগর-হত্যায় ধৃত তৃণমূল নেতা শেখ মুস্তফা-সহ চার জনকে এ দিন সিউড়ি আদালতে তোলা হলে সিজেএম রাজেশ চক্রবর্তী তাঁদের জামিনের আর্জি নাকচ করে দশ দিন সিআইডি হেফাজতে রাখতে বলেছেন। ধৃতদের বিরুদ্ধে আরও তিনটে নতুন ধারাও জুড়েছে। সরকারি কৌঁসুলি কুন্তল চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় চার অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন। ধৃতদের ২১ ফেব্রুয়ারি ফের কোর্টে পেশ করতে হবে।”
গত ২১ জুলাই, অর্থাৎ বীরভূমে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগের রাতে নিজের বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন পাড়ুই থানার কসবা পঞ্চায়তের নির্দল (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) প্রার্থী হৃদয়বাবুর বাবা সাগরবাবু। ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে নিহতের পরিবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। ক’দিন আগে ধরা পড়ে অভিযুক্তদের এক জন, সেটাই প্রথম গ্রেফতারি। তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল সম্পাদক তথা ওই পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সদস্য শেখ মুস্তফা-সহ আরও চার জনকে সদ্য ধরেছে সিআইডি। দিন দু’য়েক আগে তাঁদের সিউড়ি আদালতে তোলা হয়েছিল। তবে সে দিন হাইকোর্টে হাজিরা থাকায় সিআইডি’র তদন্তকারী অফিসার সিউড়ি কোর্টে উপস্থিত থাকতে পারেননি। ফলে ধৃত চার জনের দু’দিন জেল-হাজত হয়।
অভিযুক্তদের কৌঁসুলি নুর আলম এ দিন বলেন, “আমাদের মক্কেলকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে। তাই বিচারকের কাছে জামিন চেয়েছিলাম। মঞ্জুর হয়নি।” |