রেলের আশা যেন মরতে মরতেও মরে না। বুধবার লোকসভায় পেশ করা অন্তর্বর্তী রেল বাজেট শুনবেন বলে আরও অনেকের মতোই সকাল থেকে টিভির সামনে অপেক্ষা করছিলেন করিমপুরের বিশ্বনাথ বিশ্বাস। করিমপুর উদ্যান ও কৃষি কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিশ্বনাথবাবু দীর্ঘদিন ধরেই করিমপুরে রেলপথের দাবি জানিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, “ফি বছর রেল বাজেটের আগে আশায় আশায় থাকি। তারপর টিভিতে বাজেট শোনার পর মনে হয় এ বার বুঝি করিমপুরের কপাল খুলবে। কিন্তু তারপর অপেক্ষাই সার হয়।” তিনি বলেন, “তবে এ বারে অধীর চৌধুরীর কারণে প্রত্যাশা একটু বেশিই ছিল। করিমপুরেবহুবার এসেছেন। এখানে রেলপথ যে কতটা জরুরি সে কথা তিনি ভালই জানেন। তাই বাজেটে তিনি প্রত্যাশা মতোই করিমপুরে নতুন রেল লাইনের সমীক্ষা শুরু হওয়ার কথা বলেছেন। এখন দেখা যাক কী হয়।”
শুধু করিমপুর নয়, প্রতিবারই রেল বাজেটের দিন এমন অপেক্ষায় থাকেন ডোমকল, ইসলামপুর কিংবা কান্দির মানুষ। তবে এ বারে বহরমপুর থেকে করিমপুর ভায়া ডোমকল, ইসলামপুর ও বহরমপুর থেকে কান্দি হয়ে সাঁইথিয়াতে নতুন রেল লাইন পাতার কাজ শুরু করতে প্রাথমিক সমীক্ষার কথা বাজেটে উল্লেখ করায় খুশি হয়েছেন ওই এলাকার মানুষ। তবে সেই সঙ্গে দুশ্চিন্তার কাঁটাটাও যে বিঁধছে না এমন নয়। ডোমকলের এক স্কুল শিক্ষক যেমন বলছেন, ‘‘সেই গনি খানের সময় থেকে শুরু করেই শুনে আসছি এখানে রেল লাইন হবে। কিন্তু হচ্ছেটা কই? বাংলা থেকে যখনই কেউ রেলমন্ত্রী হয়েছেন তখনই মনে হয়েছে এবার বুঝি ঠিক রেল চলবে। ফলে এখন আর রেল নিয়ে কোনও স্বপ্ন দেখতেও ভয় লাগে। অধীরবাবু বললেন ঠিকই, তবে কবে নাগাদ সেসব হয় দেখা যাক।” |
ডোমকল মহকুমার চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক শঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘রেলের জন্য দীর্ঘদিন থেকে অপেক্ষায় আছি আমরাও। বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন রেল লাইন আমাদের কাছে স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়। তাছাড়া সবে তো সমীক্ষার কথা বলা হল। বাকি কথা সময় বলবে।” আর করিমপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিধান দত্ত বলছেন, “হাল ছাড়ার কিছু নেই। একটা প্রক্রিয়া তো শুরু হল। এটাই বা কম কী? ” আর করিমপুরের বিধায়ক সিপিএমের সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘করিমপুরে রেললাইন হবে-এই গল্প শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত। কিন্তু তারপরেও বলব সীমান্তের এই এলাকা রেলের মানচিত্রে আসুক। তাই সমীক্ষার অনুমোদনও আমাদের কাছে ভাল খবর।”
ডোমকল হোক বা করিমপুর সীমান্তের এই এলাকাতে রেললাইন হয়ে গেলে এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার আরও উন্নতি হবে বলেই মনে করেন এলাকার বাসিন্দারা। করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ সিপিএমের শঙ্কর মণ্ডল বলেন, “রেললাইন হলে এলাকার যে উন্নতি হবে সে কথা বলাই বাহুল্য। কৃষক থেকে শুরু করে সমাজের সমস্ত শ্রেণির মানুষের উপকার হবে।” পেশায় কৃষক জলঙ্গির কালাম সেখ বলেন, ‘‘আমাদের এখানে ভাল সব্জি চাষ হয়। অথচ রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার ফলে আমরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই।” এ দিন রেল বাজেটের খবর শুনে খুশি কান্দি মহকুমার বাসিন্দাদের পাশাপাশি খুশি এলাকার ব্যাবসায়ীরাও। কান্দি মহকুমা ব্যবসায়ী সমতির সম্পাদক তারকনাথ প্রামাণিক বলেন, “এলাকার সাংসদ এখন রেল দফতরের প্রতিমন্ত্রী। তিনি যদি কান্দিতে রেলপথের ব্যবস্থা করেন তাহলে এই এলাকার জন্য এর থেকে ভাল খবর আর কিছু হতে পারে না।” |