কে কে হার, বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা নেই
১২ ফেব্রুয়ারি
শ্রীনিবাসনের অভিসন্ধি সফল হলে ইডেন দর্শক কেকেআর-কে হয়তো এ বছর পাবেই না। কিন্তু যদি আধখানা আইপিএল এখানে হয়? না হলেও পরের বার তো নামতেই হবে। সেই একই টিম নামবে। পরের বছর তো আর নিলাম নেই। তখন কি দর্শকদের সেই আকুলি-বিকুলি করা আবেগ পাবে, যার জোরে ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে তারা বছরের পর বছর বিজ্ঞাপনদাতাদের আশীর্বাদ-ধন্য?
মনে হয় না। সিইও বেঙ্কি মাইসোরের নেতৃত্বে যে দল তারা বাছল, তাতে না আছে তারকার দ্যূতি, না আছে যোগ্য স্থানীয় ক্রিকেটারের উপস্থিতি। দিনের শেষে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের টেবল ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন বিজয় মাল্য। পিছন পিছন একই টেবলে থাকা ব্রিজেশ পটেল। তাঁদের উদ্দেশ্য করে জনৈক শুভার্থী বললেন, “ট্রফি তো এখনই আপনাদের দিয়ে দেওয়া যায়।” মাল্য শুনতে পাননি। ব্রিজেশ দাঁড়িয়ে গেলেন, “মাঠে কী হবে বলা যায় না।”
ফর্ম্যাট হিসেবে টি-টোয়েন্টি চরমতম অনিশ্চিত। তবু বল পড়ার আগে কাগজকলমের একটা হিসেব তো থাকেই। আর তাতে অপ্রতিরোধ্য দেখাচ্ছে আরসিবি-কে। কোহলি, গেল, যুবরাজ (গৌতম গম্ভীরের সাড়ে এগারো কোটির দর টপকে যুবির দর উঠল চোদ্দো কোটি), ডে’ভিলিয়ার্স, অ্যালবি মর্কেল, মিচেল স্টার্ক, বরুণ অ্যারন, অশোক দিন্দা, রবি রামপল, মুরলীধরন। নিলামে সারাক্ষণ আক্রমণমুখী থেকে চমকে দিয়েছে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসও। অঘোষিত বাছাই তালিকায় তারা মনে হচ্ছে দু’নম্বর। পিটারসেন (ন’কোটি টাকা দিয়ে), দীনেশ কার্তিক, মহম্মদ শামি, মুরলী বিজয়, সৌরভ তিওয়ারি, জাঁ পল দুমিনি, মনোজ তিওয়ারি, লক্ষ্মীরতন, রাহুল শর্মা, নাথান ম্যাকালাম।
বেঙ্কি মাইসোর অবশ্য দাবি করলেন দিল্লি তাদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেছে, তোমাদের ২০১১ নিলামের আক্রমণমুখী স্টাইলটাই আমরা অবিকল টুকলাম। যদি সত্যিও হয়, দিল্লির লাইন-আপে চিত্তাকর্ষক আবেদন যে অনেক বেশি, তাতে সন্দেহ নেই। নিলামে সব চেয়ে সাড়া জাগানো কোচ হিসেবে অবশ্য উঠে এলেন সঞ্জয় বাঙ্গার! পঞ্জাব দ্রুত আক্রমণে এ বার যে চমকে দিয়েছে এবং এত সফল নিলাম সভা যে তাঁরা অতীতে পাননি, স্বীকার করে গেলেন মালকিন প্রীতি জিন্টা। সহবাগ, মিচেল জনসন, জর্জ বেইলি, ম্যাক্সওয়েল, পূজারা এবং ঋদ্ধিমান সাহা। চমকের উপাদান হিসেবে যথেষ্ট। চেন্নাই-মুম্বই তো আগেই ঘর গুছিয়ে নিয়েছিল। এ দিন আরও মজবুত করল। যথেষ্ট খুশি দেখাল হায়দরাবাদ শিবিরকেও। নিলাম থেকে ঘরমুখী হওয়ার মাঝে পাওয়া গেল ভিভিএস লক্ষ্মণ-কে। যিনি তাঁর মেল আইডি কী ভাবে হ্যাক হয়ে কলকাতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উঠে যাচ্ছিল, তার সবিস্তার ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন। এমন নৈরাশ্যজনক প্রসঙ্গ আলোচনার মধ্যেও তাঁর মুখে হাসি। বললেন, “বেশ স্যাটিসফায়েড লাগছে।” লাগারই কথা। ডেভিড ওয়ার্নার আর শিখর ধবন ওপেনার। মাঝে ডারেন স্যামি, ইরফান পাঠান। বোলিংয়ে ডেল স্টেইন, ইশান্ত শর্মা, ভুবনেশ্বর কুমার, অমিত মিশ্র। দ্রাবিড়ের রাজস্থান মারকাটারি কিছু করেনি। মহাতারকাদের দিকে ঝোঁকেনি। বেশ বোঝা গেল, একটা সংস্কৃতি তৈরি করতে চাইছে। যুব সংস্কৃতি। রাজস্থান রয়্যালস নিয়ে এত সব কেলেঙ্কারির পর দ্রাবিড়দের প্রথম লক্ষ্য ফ্র্যাঞ্চাইজিকে সুস্থ ভাবে দাঁড় করানো। ট্রফি জেতা তার পর। রাজস্থানের দল নির্বাচন আর হাতে এত টাকা রেখে দেওয়ার তবু পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা রয়েছে। বৃহস্পতিবার অখ্যাত অনেক আনক্যাপড প্লেয়ারকেও তারা টানবে।
কিন্তু কেকেআর? ক্রিকেটে সবই সম্ভব। অঘোষিত বাছাই তালিকার শেষ দলটাও ট্রফি জিততে পারে। কিন্তু অন্তত আজকের নিলাম সভাতেই তাদের ‘কে কে হার’ দেখাল। টিমের ল্যাজ যদি বা থাকে, মুড়ো বলে কিছু নেই। ব্যাটিংয়ে রানটা করবেন কে? গম্ভীর আউট অব ফর্ম। কালিস বৃদ্ধ। ইউসুফ পাঠান রান করেন না। রবিন উথাপ্পা বড় ম্যাচে কী বিষম বস্তু, বেহালার ২/৬ বীরেন রায় রোডে একটা ফোন করলেই জানা সম্ভব। সাকিব গত বছরটা খেলেনইনি আইপিএলে। তা হলে টিমকে জেতাবেন কে?
আরও কত ঝুড়ি ঝুড়ি প্রশ্ন ব্যাখ্যাহীন হয়ে পড়ে থাকল। পীযূষ চাওলাকে ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকায় কেনা হল। যিনি ভারতীয় দল থেকে অনেক দূরে। অথচ যাঁকে জোকার কার্ড দিয়ে রাখার কথা, সেই মহম্মদ শামিকে একই অঙ্কের দরে ছেড়ে দেওয়া হল। গম্ভীরের সঙ্গী কোনও ওপেনার নেই দেখেও সহবাগ বা মুরলী বিজয়, কারও জন্য প্যাডল তোলা হল না। শুনলাম কালিস নাকি ওপেন করবেন। আগাগোড়া। সে তো বোঝা গেল কিন্তু কালিসের জন্য জোকার কার্ড খরচাও হল, আবার নিলামে যোগ দিয়ে তাঁর দরটাও বাড়িয়ে দেওয়া হল। ধোনির যে টিমটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে পরের মাসে বাংলাদেশ যাবে, তার একটা প্লেয়ারও নেওয়া হয়নি। কী জন্য, না বেশি খরচা হয়ে যাবে।
এক এক সময় বেঙ্কি মাইসোরদের হাবভাব দেখে বোঝা যাচ্ছিল না আইপিএল কারা খেলে? ক্রিকেটাররা, না অ্যাকাউন্টেন্টরা? শোনা যায় বেঙ্কি এসে নাইট শিবিরে অনেক বাজে খরচ কমিয়ে দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষের কাছে তাতে তাঁর সমাদর বেড়েছে। আর তাই গম্ভীরের সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁকে একক ভাবে নিলামের স্ট্র্যাটেজি তৈরির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ক্রিকেটারদের জন্য বাড়তি খরচা না করা সেই স্ট্র্যাটেজিরই অঙ্গ। কিন্তু বেঙ্কি দ্রুতই আবিষ্কার করবেন, ক্রিকেট দর্শক অঙ্ক বোঝে না। প্যাশন বোঝে। আর তাতে শীর্ষস্থানীয় হল কলকাতা। যে দর্শক উত্তেজিত টেক্সট মেসেজে ভরিয়ে দিচ্ছে গোটা দেশ: শাহরুখকে কারও মনে করানো উচিত কেকেআর-এর কে-টা কোলাভরি নয়, কলকাতা!
শেষ হয়ে যাওয়ার পর নিলাম কক্ষে সরেজমিন গিয়ে আন্দাজ করার চেষ্টা করছিলাম, কেকেআর-এর এমন নিলাম-বিপর্যয় কেন ঘটল? কেন তাদের এত ভিতু-ভিতু, সন্দিগ্ধ আর কিপটে দেখাল গোটা দিন?
এক বার মনে হল এটাই তো হওয়ার ছিল। এক একটা টিম টেবলে কারা বসেছিলেন। সেরা সব ক্রিকেট মস্তিষ্ক। রাজস্থানে দ্রাবিড়। হায়দরাবাদে লক্ষ্মণ, শ্রীকান্ত, মুডি। বেঙ্গালুরুতে ভেত্তোরি, ব্রিজেশ। দিল্লিতে গ্যারি কার্স্টেন, এরিক সিমন্স। মুম্বইয়ে কুম্বলে। চেন্নাইয়ে ফ্লেমিং। সেখানে কেকেআরের টেবলে বিজয় দাহিয়া, ডব্লিউ ভি রামন। ক্রিকেটীয় পরামর্শ বেঙ্কিকে দিচ্ছেন সিএবি-র সহ-সচিব আর দাহিয়া। নিলামে একটু দর উঠলেই ত্রাহি ত্রাহি পড়ে যাচ্ছে এই রে, খরচা হয়ে গেল। গোটা মডেলটাই সেরা ক্রিকেটার ছিনিয়ে নেওয়ার নয়। খরচা বাঁচানোর।
পরিণতি যে শাহরুখের ছবির ভিলেনের মতো হবে, তাতে আশ্চর্য কী? বলতে ভুলে গেছি, কেকেআর ৯ কোটি টাকা হাতে নিয়ে দ্বিতীয় দিনের নিলামে যাচ্ছে। কাকে কিনবে এত টাকা দিয়ে, তারাই জানে। তবে এই টিম নিয়ে শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে যদি তারা ২০১৪ আইপিএল জিততে পারে, তা হলে ঢাকুরিয়া লেক থেকে কোনও দিন বড় বড় চিংড়িও উঠতে পারে!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.