দিন-রাত একটাই কথা তাড়া করে বেড়াচ্ছে রহড়ার বাসিন্দা আনন্দ রায়কে। আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই। অচেনা কোনও নম্বর থেকে মোবাইলে ফোন এলেও ধরতে ভয় পাচ্ছেন। ওপার থেকে কেউ যদি বলে ওঠে, “কাউকে কিছু জানালে, পরিবার সমেত জানে শেষ করে দেব।”
এই আশঙ্কাতেই অসুস্থ বাবা, বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে প্রায় দুুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কার্যত ত্রাসের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন আনন্দবাবু। পেশায় জীবন বিমা নিগমের এজেন্ট। সংস্থার সোদপুর শাখার সঙ্গে যুক্ত।
কেন এমন আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে?
আনন্দবাবু জানান, ২ ফেব্রুয়ারি রাতে দুই যুবক টাকা বিনিয়োগের ব্যাপারে আলোচনার কথা বলে তাঁকে সিঁথির দমদম রোডের একটি বাড়িতে ডাকেন। অভিযোগ, ওই বাড়িতে গেলে একদল যুবক তাঁকে ঘিরে ধরে। তার পরে মারধর করে সোনার আংটি ও নগদ টাকা কেড়ে নেওয়া হয়। দাবি করা হয় কয়েক লক্ষ টাকা। সেই মুহূর্তে টাকা দিতে না পারায় তাঁর গালে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। মোবাইলে তাঁর অশ্লীল ছবি তুলে তা অন্যের মোবাইলে পাঠিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শাসায়। ঘটনার কথা কাউকে জানালে ওই যুবকেরা সপরিবারে তাঁর প্রাণনাশের হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ। তবে
ওই রাতে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে তিনি কোনও রকমে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন আনন্দবাবু।
পরের দিনই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে সিঁথি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। অথচ ঘটনার দু’সপ্তাহ পরেও অভিযুক্তদের কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। অভিযুক্তেরা অধরা থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আনন্দবাবু-সহ তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও।
আনন্দবাবু বলেন, “যে দুই যুবক ওই রাতে আমাকে ডেকে পাঠায়, তাদের সঙ্গে আমার সোদপুরের অফিসে পরিচয় হয়। ওদের এক জনের নাম রাজু দাস এবং অন্য জনের রাজ সাহা। ২ ফেব্রুয়ারি রাতে ওদের সঙ্গে আরও জনা ছয়েক যুবক ছিল। বাকিদের কাউকে আমি চিনতে পারিনি। তবে সকলেই বাংলাতে কথা বলছিল। অপরিচিতদেরই এক জন আমার গালে সিগারেট চেপে ধরেছিল। আর সবাই মিলে আমাকে সপরিবারে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছিল। পরে মোবাইলেও একই হুমকি দেয়।”
আনন্দবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমেছেন গোয়েন্দারা। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগকারী দুই পরিচিত অভিযুক্তের যে নাম বলছেন, সেই নাম দু’টি ভুয়ো বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। অভিযুক্তদের মোবাইলও বন্ধ। তাই তাদের গতিবিধি
বুঝতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। তদন্তকারীদের অনুমান, এটা নতুন কোনও চক্রের কাজ হতে পারে। অভিযুক্তেরা কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলেই সন্দেহ করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
প্রায় দু’সপ্তাহ হতে চলল, তবু কেন ধরা পড়ল না অভিযুক্তেরা? অভিযোগকারী এবং তাঁর পরিবারের জন্য নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা করা হয়েছে? প্রশ্নের জবাবে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “পুরো বিষয়টির উপরে আমাদের নজরদারি রয়েছে। তদন্ত চলছে।
আশা করছি অভিযুক্তেরা সকলে ধরা পড়বে।” |