গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল এক যুবকের। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে গার্ডেনরিচে। পুলিশ জানায়, ওই রাতে স্থানীয় কাচ্চি সড়ক এলাকায় মোটরবাইক-আরোহী দুই দুষ্কৃতী আজহার কুরেশি (২০) নামে ওই যুবকের মাথায় গুলি করে পালায়। রাতেই একবালপুরের এক হাসপাতালে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক বিবাদের জেরে ওই যুবক খুন হয়ে থাকতে পারেন।
পুলিশ জানায়, আজহারের বাবা মহম্মদ খালিদ কুরেশি তাঁর ভায়রাভাই মহম্মদ সৌকত ওরফে পাপ্পু এবং পাপ্পুর শ্যালক মহম্মদ সইদ আলি ওরফে পারভেজের বিরুদ্ধে ছেলেকে খুন করার অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে পারভেজকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, আজহারের বাড়ি গার্ডেনরিচের বাংলা বস্তিতে। তিনি এক কল সেন্টারে কাজ করতেন। মঙ্গলবার রাত সওয়া ১১টা নাগাদ পাড়ার গলি থেকে বড় রাস্তার মুখে একাই দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই যুবক। ওই সময়ে দুষ্কৃতীরা খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি করে। গুলি মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে পড়ে থাকতে দেখে পথচলতি লোকজনই তাঁর বাড়িতে খবর দেন। পাড়ার লোক আজহারকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই ঘটনা কি না, তা বুধবার রাত পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “নিহতের বাবা যে দু’জনের নামে এফআইআর করেছেন, তাঁদের এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য জন পলাতক। সবে তদন্ত শুরু হয়েছে। কী কারণে খুন, তা তদন্ত শেষ না হলে নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে না।”
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আজহারের মেসোমশাই অভিযুক্ত পাপ্পুর বাড়ি বাংলা বস্তির কাছে রামনগর লেনে। গত বছর মে মাসে বাইপাসে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় পাপ্পুর ছেলে তনবির মারা যান। ওই মোটরবাইকে আজহার সওয়ার ছিল। পুলিশের একাংশ স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছে, ছেলের মৃত্যুকে নিছক দুর্ঘটনা বলে পাপ্পু মেনে নিতে পারেননি। তাঁর সন্দেহ হয়, ওই দুর্ঘটনা ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘটানো হয়েছে এবং তার পিছনে আজহার বা তার বাবার হাত রয়েছে। কিন্তু পুলিশ তদন্তে জেনেছিল, ওটি ছিল দুর্ঘটনা। তার পিছনে আজহারের ভূমিকা ছিল না। পুলিশের কাছে খালিদ কুরেশি অভিযোগ করেছেন, তনবিরের দুর্ঘটনার পিছনে তাঁর হাত রয়েছে ধরে নিয়ে বদলা নিতে আজহারকে ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে খুন করিয়েছেন পাপ্পু।
দু’পক্ষের পারিবারিক শত্রুতা কী নিয়ে? লালবাজারের পুলিশকর্তাদের একাংশ তদন্তে জেনেছেন, ট্রেন যাত্রীদের মাদক মেশানো খাবার খাইয়ে তাঁদের জিনিসপত্র হাতানোর একাধিক অভিযোগ রয়েছে খালিদ এবং পাপ্পুর বিরুদ্ধে। লুঠের মাল ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে দু’পক্ষে আগেও গোলমাল হয়েছে বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন। পুলিশের একাংশের দাবি, দুই পরিবারের মধ্যে আসল গোলমাল ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়েই। তার জেরেই খুন হতে হয়েছে আজহারকে। |