রাজ্য সরকার আট মাস মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। কিন্তু আচার্য-রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন সেই সুপারিশ মানেননি। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মালবিকা সরকারের কার্যকাল তিন মাসের জন্য বাড়ালেন তিনি।
আচার্য-রাজ্যপাল কেন রাজ্য সরকারের সুপারিশ মানলেন না, সেই প্রশ্ন উঠছে। এখনও চিঠি পাননি বলে উপাচার্য এই ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি।
সরকারের প্রস্তাব রাজ্যপাল হুবহু মানলেন না কেন?
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সবিস্তার জবাব এড়িয়ে শুধু বলেন, “উনিই জানেন।” তবে প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু বুধবার জানান, মালবিকাদেবীর কার্যকাল আপাতত তিন মাসের জন্য বাড়লেও পরে যাতে তা আরও বাড়ানো হয়, তাঁরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
২০১১-র অক্টোবরে প্রেসিডেন্সির উপাচার্য হন মালবিকাদেবী। প্রথমে এক বছরের জন্য নিযুক্ত হন তিনি। তার পরে তাঁর কার্যকাল এক বছর বাড়ানো হয়। কিন্তু ওই পদে মালবিকাদেবীর থাকা নিয়ে বিতর্ক বাধে গত বছরের মাঝামাঝি। প্রেসিডেন্সির জন্য অন্য এক জন অস্থায়ী উপাচার্য বেছে নিতে গত বছর জুলাইয়ের শেষে রাজ্য সরকার একটি সার্চ বা সন্ধান কমিটি গড়ে। সরকারের যুক্তি ছিল, ওই বছরের ১৫ অগস্ট মালবিকাদেবীর বয়স ৬৫ বছর হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী তার পরে তিনি আর ওই পদে থাকতে পারবেন না। পরে আচার্য-রাজ্যপালের হস্তক্ষেপে চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয় উপাচার্যের। তার মধ্যেই নতুন উপাচার্য বাছাই করে ফেলা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
প্রেসিডেন্সির প্রথম স্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে সার্চ কমিটি গড়েছে রাজ্য সরকার। সেই কমিটি অবশ্য এখনও একটিও বৈঠক করেনি। ইতিমধ্যে মালবিকাদেবীর কার্যকাল ৬ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করে আচার্য-রাজ্যপালের কাছে চিঠি পাঠায় রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর।
গত সপ্তাহে রাজারহাটে প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছিলেন, মালবিকাদেবী অক্টোবর পর্যন্ত উপাচার্য থাকছেন। কিন্তু এত কিছুর পরে রাজ্যপাল নারায়ণন প্রেসিডেন্সির বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানোর সরকারি প্রস্তাবে সায় দেননি। তিন মাস মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী জানান, ওই সময়ের মধ্যে সন্ধান কমিটির মাধ্যমে স্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে অব্যাহতি নেবেন মালবিকাদেবী।
আচার্য-রাজ্যপাল অতীতে অনেক সময়েই মালবিকাদেবীর প্রশংসা করেছেন। গত বছর এপ্রিলে যখন প্রেসিডেন্সিতে বহিরাগতদের হামলা হয়, তখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার সময় মালবিকাদেবীর প্রশংসা করেছিলেন নারায়ণন। তিনিই কেন আট মাসের সরকারি সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও মাত্র তিন মাসের জন্য উপাচার্যের মেয়াদ বাড়ানোর নির্দেশ দিলেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছেও এর যথাযথ ব্যাখ্যা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, আচার্য-রাজ্যপাল তিন মাসের জন্য মালবিকাদেবীর মেয়াদ বাড়াতে চান, এমন কথা জানতে পেরে সম্প্রতি রাজভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন সুগতবাবু। তার পরেও অবশ্য সরকারি সুপারিশে সায় দেননি রাজ্যপাল। সুগতবাবু এ দিন জানান, অমর্ত্য সেনের পরামর্শ নিয়েই মেন্টর গ্রুপ রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল, মালবিকাদেবীকে যাতে অক্টোবর পর্যন্ত রাখা যায়, সেই ব্যবস্থা করা হোক। “সরকার সেই প্রস্তাব অনুসারেই আচার্য-রাজ্যপালের কাছে সুপারিশ করেছিল। তবে আচার্য যেটা ঠিক মনে করেছেন, তা-ই করেছেন,” বলেছেন মেন্টর গ্রুপের প্রধান। |