কোথাও দাবি ছিল একটি লিঙ্ক ট্রেনের। কেউ বা আবার চেয়েছিলেন, ডবল লাইনের কাজ নিয়ে কোনও ঘোষণা হোক। কিন্তু বুধবার অন্তর্বর্তী রেল বাজেট পেশের পরে হতাশা বর্ধমান জেলা জুড়ে। জেলার জন্য এই বাজেটে প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্যই।
দুর্গাপুর থেকে হাওড়া ও শিয়ালদহ লোকাল চালুর দাবি দীর্ঘ দিন ধরে জানিয়ে আসছেন শহরের বাসিন্দারা। ২০০৭ সালের ৩০ জুন রেল উড়ালপুলের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে আসা তৎকালীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবকে এ নিয়ে স্মারকলিপিও দেয় তৃণমূল ও রেল নিত্যযাত্রী সমিতি। লালুপ্রসাদ প্রতিশ্রুতি দেন, পরবর্তী রেল বাজেটে দুর্গাপুর-হাওড়া লোকালের প্রস্তাব রাখা হবে। কিন্তু তা হয়নি। ২০০৮ সালের মাঝামাঝি তৎকালীন রেলওয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বাসুদেব আচারিয়া দুর্গাপুরে জানান, সেই বছর অগস্ট থেকে দুর্গাপুর-হাওড়া লোকাল ট্রেন চালুর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে রেল। সেই আশ্বাসও বাস্তবায়িত হয়নি। এর পরে দীর্ঘদিন রেলমন্ত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অধীর চৌধুরী রেল প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পরে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের সাংসদ সাইদুল হক ফের বিষয়টি নেয় চিঠি দেন। অধীরবাবু জবাবি চিঠিতে জানান, রেল বোর্ডের হিসেবে দুর্গাপুর থেকে লোকাল ট্রেন চালানো আর্থিক ভাবে যথাযথ নয়। তাতেও না দমে দুর্গাপুরের বাসিন্দারা চিঠি লেখেন তৎকালীন রেল প্রতিমন্ত্রী তথা বর্তমান রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খাড়গেকে। এই দাবিতে তাঁকে চিঠি দেন জঙ্গিপুরের সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ও। দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন মন্ত্রী। |
বুধবারের বাজেটে অবশ্য এই দাবিপূরণের কোনও আশ্বাস মিলল না। দুর্গাপুর রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখানকার মানুষ এ বারও বঞ্চিত থেকে গেলেন।”
হতাশা আসানসোলেও। মেন লাইন নিত্যযাত্রী অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য রক্তিম নস্কর বলেন, “লোকাল ট্রেন কম। অফিস টাইমে খুব ভিড় হয়। নাকাল হতে হয় যাত্রীদের।” চিত্তরঞ্জনের বাসিন্দারা আসানসোল থেকে একটি লিঙ্ক ট্রেন চেয়ে রেলের কাছে কিছুদিন আগে দাবিপত্র দিয়েছিলেন। সেই দাবিও পূরণ হল না। আসানসোল বণিকসভার সভাপতি সুব্রত দত্তের দাবি, “দক্ষিণবঙ্গে ফ্রেট করিডর হচ্ছে। অর্থনীতি চাঙা হতে চলেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে আসানসোলের যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা হল না।”
ব্যান্ডেল-কাটোয়া ডবল লাইনের কাজ অম্বিকা কালনা পর্যন্ত হয়ে রয়েছে। সেখান থেকে কাটোয়া পর্যন্ত কাজ কবে শেষ হবে বা বরাদ্দ কত তা নিয়ে বাজেটে কোনও ঘোষণা নেই। কালনার এক নিত্যযাত্রী নিতাই মজুমদার বলেন, “ডবল লাইন না হওয়ায় কাটোয়া থেকে ব্যান্ডেল পৌঁছতে অনেক সময় লেগে যায়। সিঙ্গল লাইনে অনেক ট্রেনকেই নানা কারণে দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এ বারও বাজেটে কোনও নির্দিষ্ট বরাদ্দ না থাকায় আমরা হতাশ।” দীর্ঘদিন ধরেই কাটোয়া থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত একজোড়া গ্যালপিং ট্রেনের দাবি তুলেছেন নিত্যযাত্রীরা। হাওড়া-কাটোয়া সুবারবান প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি এই দাবি রেলমন্ত্রীকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেন বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ অনুপ সাহাকে। সেই সমস্যারও সুরাহা হয়নি। সম্প্রতি কালনার মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয় ওই সংগঠনের সম্মেলনে ব্যান্ডেল থেকে কালনা পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন চালু, ব্যান্ডেল-কাটোয়া লাইনের কামারগাছি, কুন্তিঘাট, ত্রিবেণি স্টেশনে সাধারণ যাত্রীদের জন্য পরিষেবা বাড়ানো ইত্যাদি দাবি উঠেছিল। সংগঠনের তরফে শিবু মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা হতাশ। এ বারের বাজেটে দু’টি জরুরি বিষয়, ডবল লাইনের কাজ শেষ ও কাটোয়া থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ট্রেন নিয়েও কোনও ঘোষণা হয়নি। আশা করছি, সামনের বাজেটে বিষয়গুলি থাকবে।”
এক বছর আগে চালু হওয়া আজিমগঞ্জ-কাটোয়া প্যাসেঞ্জারের স্টপেজ দেওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। পূর্ব রেলের বিবি লুপ নিত্যযাত্রী সংগঠনের সভাপতি পুরবধি মুখোপাধ্যায় বলেন, “কোনও নতুন ট্রেনও পেলাম না। পুরনো দাবিও পূরণ হল না। আমরা হতাশ।” বুধবার কেতুগ্রামের শিবলুন হল্ট স্টেশনে নতুন চালু হওয়া জঙ্গিপুর-কাটোয়া লোকাল ট্রেনের স্টপেজ না দেওয়া নিয়ে বিক্ষোভও দেখান গ্রামবাসীরা। তাঁদের দাবি, প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাজেটে শিবলুনে স্টপেজ দেওয়া হল না। এই অভিযোগে ট্রেন আটকে বেশ কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। পরে আরপিএফ বিক্ষোভ তুলে দেয়। |