শিশুমৃত্যুর হারকে হেলায় হারিয়ে দিয়েছে লিটল ম্যাগের মৃত্যু। তবু তারা বলে, “আমাদের আঁকড়ে থাকবে অনাথ আশ্রমের শেষ প্রার্থনা, মৃত ঘোষণা করলেও জেগে থাকবে চোখের হিরা’। কেননা অন্ধকার ধুয়ে যেমন জেগে ওঠে আলোর বান। তেমনই তারাও দাবি করে, প্রতিটি মৃত্যুর ময়নাতদন্ত চাই। স্পষ্ট হয়, শিবিরের রেজলিউশন নয়, সন্ধ্যায় ড্রইংরুমে চলুক দেশকে মানুষের প্রস্তুতি। ওরা কলম-শ্রমিক। উত্তর বাংলার চা-পাহাড়, তেভাগার ভাষা-পিওন। তাই তো উত্তরভাষার এ বারের ‘শীত’ সংখ্যায় প্রচ্ছদের যন্ত্রণার ঘনঘটা। ঘন কুয়াশায় আবছা হয়ে আসা দৃশ্যগুলোর মতোই প্রেম, মৃত্যু, ভালবাসা, যৌনতার বিপাকে কিছুটা ‘ প্রেম’ আটকে দিয়েছে মলাটে। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধের মালায় সীমান্ত শহর বালুরঘাটে কাগজ বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে এই দলটি। সম্পাদক কৌশিক ভালই জানেন, ‘ওর লেখা ছাড়া আর কিছু করার নেই।’ সে কারণে কাগজ-কলমই ভাষা বিদ্রোহকে উস্কে দিয়েছে বারবার। তাই আজও মঙ্গলময় জীবনে অনিবার্য ঘটে চলেছে, কোনও বিবরণ নয়, সমাজকে বোধ, সম্মান, অহঙ্কার ফিরিয়ে দিতে প্রত্যাশী উত্তরভাষা। |
উত্তরভাষা ডেস্টিনেশন চায় না, চায় নীরবতা ভেঙে দেওয়ার বর্ণমালা তৈরি হোক কাগজ-নগরীতে। উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন উত্তরের ছক-ভাষার জাদুকর গল্পকার পীযূষ ভট্টাচার্য। শিশুর জন্মের পর আঁতুড়ঘরের বাইরে অপেক্ষমাণ বাবার মতো উত্তরভাষাকে চোখে চোখে রাখেন তিনি। সাহস দিয়েছেন তরুণ গল্প-লেখকদের। যাঁরা আজিজুল হকের সাক্ষাৎকার নিতে গেলে উনি বলেন, তোমরা এখনও গল্প লেখো।” সে দিন সেই বদ্ধ ঘরে মেশিনগানের চাইতেও বেশি বিপ্লব তৈরি হয়েছিল। আগামীতে সে স্টেটমেন্ট পাঠকের সঙ্গে, সামনে শেয়ার করবে উত্তরভাষা। কোনও পূর্বাভাস ছাড়াই কী করে এই পথে মনোনয়ন দিয়েছিল ছেলেগুলো? শীত সংখ্যার একশো কপি আনসোল্ড থাকার পরেও প্রুফ জারি রেখেছে উত্তরভাষা। বিজ্ঞাপন ছাড়া প্রেস থেকে মুক্ত করে আনতে হবে একশো পাতার বই! কী ভাবে সম্ভব? প্রতিশ্রুতি মতো রাজনীতির উর্ধ্বে সমাজে ক্ষত, অবক্ষয় নিরাময়ে তৎপরতা চালাবে উত্তরভাষা। অক্ষরে সেজে উঠবে উত্তর বাংলার আনাচে-কানাচ। শুধু লেখা নয়, ঝগড়া চিৎকার, আতঙ্কে যে সাহিত্য আছে তা প্রমাণের দায়িত্ব পেয়েছে এ কাগজ।
|
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বোড়ো সাহিত্য সভার ২৩তম ও জলপাইগুড়ি জেলা বোড়ো সাহিত্য সভার ২৬ তম বার্ষিক সাধারণ সম্মেলন সম্প্রতি যৌথ ভাবে অনুষ্ঠিত হল নাগরাকাটার গ্রাসমারি বস্তির এস পি স্কুল প্রাঙ্গণে। পতাকা উত্তোলন করে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বোড়ো সাহিত্য সভার রাজ্যসভার সভাপতি অমরেন্দ্রনাথ সুবা। অধিবেশন বসে জেলা ও রাজ্যের প্রাইমারি কমিটি সদস্যদের নিয়ে। সংবর্ধনা ও সাহায্য প্রদান করা হয় বোড়ো ভাষাভাষী সাত জন কৃতী ও দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীকে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক মঞ্চে বোড়ো কৃষ্টি আফাৎ ও বোড়ো হায়মারি ব্যান্ডের সদস্যদের অনুষ্ঠান মুগ্ধতা ছড়ায়। দেখা গেল বোড়োদের দেবদেবী বিষয়ক নিজস্ব নৃত্যগীতি খেড়াই। দ্বিতীয় দিন প্রকাশ্য সমাবেশ শুরু করেন খাম্বা বরগৈয়ারি ডেপুটি চিফ, বোড়ো টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল, অসম। এই সমাবেশে মেচ ও বোড়ো জনজাতি বসবাসকারী এলাকার স্কুলগুলিতে বোড়ো ভাষায় পঠন-পাঠনের দাবি জানানো হয়। স্কুলে যে কোনও এক বিষয়কে বোড়ো ভাষায় পড়ানোর দাবি জানান রাজ্য কমিটি সম্পাদক সুধীন বৈশ্য। প্রকাশিত হয় পত্রিকা ‘আলাই খুঁরি’-র দ্বিতীয় সংস্করণ। সন্ধ্যায় বসন্ত উৎসবের দৃষ্টিনন্দন নৃত্যগীত বাগড়ুম্বা। সভায় উপস্থিত ছিলেন ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইন্দ্রজিৎ রায়, অধ্যাপক দীপক রায়, সাংসদ মনোহর তিরকি, জেলার সহকারী স্বাস্থ্য আধিকারিক রুদ্র ঈশ্বরারি, কোচবিহার জেলা স্কুল পরিদর্শক মহাদেব বৈশ্য-সহ আরও বহু বিশিষ্ট জন।
|
|
ছবি: সুদীপ দত্ত। |
বইমেলায় লিটল ম্যাগাজিনের প্রকাশে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু তা যদি আগাগোড়া হাতে লেখা হয়? শাঁওলি দে এবং মধুমিতা চন্দের সম্পাদনায় ‘নকশি কাঁথা’র পুরোটাই হাতে লেখা। ‘নকশি কাঁথা’ কবিতা সংকলন। কবিতার সঙ্গে সংকলনের প্রতিটি পৃষ্ঠায় রয়েছে নানা অলঙ্করণ। সেটাও হাতে আঁকা। গত বছর শাঁওলি ও মধুমিতার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘পলাশিফিরে দেখা’ মেঘমল্লার সংখ্যা। এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল ২৩ জুন। ওই দিনটিতেই শুরু হয়েছিল পলাশির যুদ্ধ। এ বছরের সংকলন প্রকাশ হলদিবাড়ি বইমেলা উপলক্ষে। প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণের দায়িত্ব সামলেছেন সৌগত বিশ্বাস। অক্ষর বিন্যাস সুশান্ত কুমার সেনের। হঠাৎ ছাপার অক্ষরকে ব্রাত্য করে হস্তলিপি কেন? শাঁওলি ও মধুমিতার কথায়, “পড়ার অভ্যাস ভুলে যাওয়ার পরে এখন আমরা হাতে লেখার অভ্যাসও ভুলতে বসেছি। সেই অভ্যাস বজায় রাখতে এই উদ্যোগ।” উদ্যোগ যে অভিনব, তাতে সন্দেহ নেই।
|
এ বছর মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল। সামান্য জ্বর, স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব এবং কুসংস্কার। সব মিলিয়ে সে এখন পরীক্ষার গণ্ডী ছাড়িয়ে বহু দূরের যাত্রী। শুধু সে নয়, কুসংস্কার আর স্বাস্থ্য সচেতনার অভাব বিদ্যালয়, পরিবার থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে আরও বহু ছাত্রছাত্রীকে। প্রথামাফিক শোক জ্ঞাপন আর তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়েই বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাঁদের দায় চুকিয়ে ফেলেননি। পরে তাঁরা ভেবেছেন কী ভাবে এই অনভিপ্রেত বিয়োগ-যন্ত্রণা বন্ধ করা যায়। সেই ভাবনা থেকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক দিন তৈরি হল স্বাস্থ্য কেন্দ্র। পড়ুয়ারা মহা উৎসাহে তৈরি করে ফেলল স্বাস্থ্য সচেতনা বিষয়ক ছবি, চার্ট আর মডেল। হাত মেলালেন শিক্ষকরাও। অসময়ে চলে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের স্মৃতি রক্ষার্থে তৈরি হল স্মারক বেদি। দিনটি ছিল ৪ ফেব্রুয়ারি। সে দিন ছিল সরস্বতী পুজো। থিমের এমন ভাবনায় সাড়া না দিয়ে পারেননি বিদ্যার দেবী। স্বাস্থ্য সচেতনতার এই কর্মক্ষেত্রে দেখা গেল তাঁকেও। জলপাইগুড়ি মাল ব্লকের রাজডাঙ্গা পি এম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সদস্যরা তাদের কর্মযজ্ঞ উৎসর্গ করলেন অকালে চলে যাওয়া ছাত্রছাত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কে ক্ষয়িষ্ণু সময়ে, এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। |