সিগন্যাল খোলা
আড্ডার লোকাল
ঠাসা কামরা। তারই মধ্যে চার-ছ’জনের ঘেরাটাপ। চার জনের কোমরে দড়িতে বাঁধা লাল কাপড়। তার উপরে পটাপট তাস পড়ছে। সাহেব বিবি গোলাম, তুরুপের টেক্কা। ‘তুই কেন নীচের হাত থেকে উপরে উঠলি না?’ ‘তুই তখন কেন ট্রাম্প করলি, খেলা জানস না?’ তুমুল হইহই, পাশ থেকে উড়ে আসে বাণী ‘হাত থাকতে মুখে কেন মশাই? দিন না কানের গোড়ায়!’ ও পাশে চ্যাংড়া ছোঁড়া তখন গলা ছেড়েছে ‘বলো না কানে কানে...’। ও পাশে তখন পাড়ার ভোলা হরবোলা হয়ে মুরগি ডাকছে। রোজ ডাকে। রোজ গান হয়, তাস চলে। কামরা বাঁধা, কে কোন গেটে ঝুলবে, কে কোন দিক থেকে হাওয়া খাবে, তা-ও বাঁধা। এরে কয় অফিস টাইমের লোকাল ট্রেন।
(কার্টুন: সুমিত্র বসাক)
ফেসবুক, ই-মেলের যুগে আড্ডা যখন প্রায় উঠেই যেতে বসেছে তখন এই ‘পাষণ্ড’রাই বাঁচিয়ে রেখেছেন বাঙালির আড্ডার ধারাটিকে। ‘ডেলি পাষণ্ড’রা। লালগোলা-বনগাঁ কিংবা আরও সব লোকালে সেই আড্ডার পরিসর তৈরি হয় কাজের দিনে, রোজ। কিন্তু তার খবর কে রাখে? কেই বা মনে রাখে যে এই লোকাল ট্রেনের আড্ডাতেও তৈরি হতে থাকে একটা ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিসর? কেউ কেউ রাখেন। আর তাকে মিলিয়েও দেন আড্ডার বিভিন্ন ধারার সঙ্গে। ঋক্‌সুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায় সেই লোকাল ট্রেনের আড্ডার কুলশীলমান খুঁজে বের করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। আর, তারই ফলে প্রকাশিত হয়েছে ছোট্ট একটা রেল-আড্ডা-পুস্তিকা, ট্রেনের আড্ডা: বাঙালির ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিসর (সেতু প্রকাশন)। ঋক্ লিখছেন, “নিত্যযাত্রীদের রোজনামচায় তাই এরকমই বিভিন্ন বিচিত্র সমাবেশ। রক, ক্লাব যখন লুপ্তপ্রায় হয়তো ট্রেন কামরাই সেই জায়গা যেখানে টিকে থাকবে বাঙালির আড্ডা। কয়েকদিন না আসতে দেখা নিত্যযাত্রীকে নিয়ে চিন্তায় থাকবে সবাই। খোঁজ নেবে। আপদে বিপদে একসঙ্গে পাশে দাঁড়াবে। বেসুরো গান, জায়গা নিয়ে ঝগড়া, খবরের কাগজ কাড়াকাড়িতে ছিঁড়ে যাওয়া। কোন নতুন মহিলা ট্রেনে উঠলে তাকে জায়গা দেওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় কেটে যাবে জীবনের অনেকগুলো দিন, মাস, বছর।” কিন্তু তার আগে তথাকথিত ডেলি পাষণ্ডদের কামরায় কামরায় নজরুল থেকে নরেন্দ্র মোদী নানা বিষয় আর ফটাস করে ফটাস জল খুলে যাওয়ার মতো আড্ডার শত ঝর্নার ধ্বনি বেঁচে থাকবে আরও অনেক কাল।

নকল গোঁফ
শান্তিনিকেতনে যাত্রাপালা নিয়ে আশ্রমবাসীর উত্‌সাহ দেখে রবীন্দ্রনাথ প্রমথনাথ বিশীকে বললেন, “দেখ্‌-এবার যাত্রাপালা লিখব ভাবছি।” প্রমথনাথ বলেন, “সাহিত্যের সব পদই তো আপনার পদচিহ্নিত। এক-আধটা গলি পথও-কি আমাদের মতো আনাড়িদের-জন্য রাখবেন না?” কিছু ক্ষণ চিন্তা করে কবি বললেন, “আচ্ছা-যা।” পাঁচশো বছরেরও বেশি পুরনো বাংলার যাত্রাপালা নিয়ে এ রকম অনেক তথ্যই জানা গেল বারাসতের কাছারি ময়দানে যাত্রা উত্‌সব উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ যাত্রা আকাদেমি এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর আয়োজিত প্রদর্শনীতে। কলা হিসেবে যাত্রা বহু প্রাচীন। ভারতীয় নাট্যশাস্ত্রে তো বটেই, মহাভারত, হরিবংশ, শ্রীচৈতন্য ভাগবতেও যাত্রার কথা আছে। রয়েছে গ্রিক পর্যটক মেগাস্থেনিসের বিবরণে। পালা দেখে আপ্লুত হয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। গোবিন্দ অধিকারীর যাত্রাপালা দেখে এসে যেমন ক’দিন ধরে যাত্রার ভাষায় কথা বলা হাঁটাচলা শুরু করেছিল বালক নরেন্দ্রনাথ। নকল গোঁফ, রাংতার মুকুট পরে উঠোনময় যাত্রা করে বেড়াত পথের পাঁচালির অপুও। তেমনই বিখ্যাত যাত্রার পোশাক, নকল অস্ত্রশস্ত্রও রাখা ছিল প্রদর্শনীতে। রবিবার বারাসতে প্রদর্শনী শেষ হয়েছে। সোমবার থেকে ফের শুরু হল কলকাতায় যাত্রা আকাদেমিতে।

আদি নাট্য
ডাইন প্রথার বিরুদ্ধে জেহাদ থেকে অশিক্ষার অন্ধকার থেকে মুক্তির আর্তি। আদিবাসী জীবন-কথাই উঠে এল মঞ্চে। আদিবাসীদের নিজেদের ভাষায়। মেদিনীপুর বিদ্যাসাগর হলে ১৯তম একাঙ্ক প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিল বিভিন্ন জেলার ২৮টি আদিবাসী দল। দর্শকেরা বলছেন, সকলে আদিবাসী ভাষা না বুঝলেও অভিনয় এতই স্বচ্ছন্দ ছিল যে নাটক বুঝতে কোনও অসুবিধে হয়নি।
শিক্ষার পক্ষে সওয়াল করে সেরা নাটক নির্বাচিত হয় দক্ষিণ দিনাজপুরের ‘সন্তর’ (সতর্ক)। দ্বিতীয় নদিয়ার ‘আঁধা পাতিয়াও’ (অন্ধবিশ্বাস), তৃতীয় পুরুলিয়ার ‘আমদ তাহেন সে ইঙ্ঘন অড়ারে’ (সবাই আনন্দে থাকুক)। ‘উমের’ (বয়স) নাটকের সৌজন্যে শ্রেষ্ঠ পরিচালক পরিমল টুডু। ‘মনমি জিয়ন’ (মানব জীবন) নাটক লিখে সেরা নাট্যকার নবকুমার মান্ডি। ‘আঁধা পাতিয়াও’ নাটকে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা শিবলাল টুডু, ‘আঁধা মাঝিও অকা’ (গ্রামের মোড়ল) নাটকে দৌলতে সেরা অভিনেত্রী কালিদাসী মুর্মু।

পাখিদের বন্ধুরা
কমবেশি বারোশো বিঘা জলাভূমি। লোকে বলে ‘চাপড়ির বিল’। বর্ষার চার-পাঁচ মাস জল থইথই করে। বাকি ক’মাস শুকনো আবাদি জমি। এলাকার মানুষের অন্নদাতা। হাঁসখালির দক্ষিণপাড়ার এই বিলে কয়েক বছর ধরে শীতে আসছে হাজার-হাজার পরিযায়ী। নানা জাতের বক, হরিয়াল, শামুকখোলের পাশাপাশি নাম-না-জানা বহু। কুনজর পড়েছে শিকারিদেরও। পরিযায়ীর ঝাঁক নদিয়ার ওই বিলে নামা শুরু করলেই বেড়ে যায় মোটরবাইকের আনাগোনা।
এয়ারগানের গুলি খেয়ে আকাশ থেকে আছড়ে পড়ে পাখি। গত বছর থেকেই এই শিকারিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন গ্রামবাসী। বন দফতরের ভরসায় না থেকে কোমর বেঁধেছেন রামপ্রসাদ মণ্ডল, গোপেন ঘোষ, ইদ্রিস শেখরা। খেতের কাজ করতে-করতেই তাঁরা নজর রাখছেন বিলে। আর ধান সিদ্ধ করা, মুড়ি ভাজার ফাঁকে মোটরবাইকের শব্দ পেলেই বাড়ির পুরুষদের খবর দিচ্ছেন মহিলারা। হাঁসুয়া-লাঠি হাতে বেরিয়ে পড়ছেন গ্রামের মানুষ। তাঁদের একটাই কথা ‘জান থাকতে পাখি মারতে দেব না।’ বসন্ত আসছে। পরিযায়ীদের এ বার নিরাপদে ঘরে ফেরার সময় হল।

মিলন মেলা
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তবু আলকাপ, কবিগান বা পঞ্চরসের দর্শক-শ্রোতার অভাব নেই। যা দেখে বহরমপুরের ‘যুগাগ্নি’ নাট্যসংস্থার বোধোদয় হয়েছিল ১৭ বছর আগে। যা থেকে জন্ম নেয় ‘লোকনাট্য ও নগরনাট্যের মিলনমেলা’। সংস্থার অন্যতম কর্তা অনুপম ভট্টাচার্যের কথায়, “এই মেলায় লোকনাট্য থেকে নগরনাট্য নেয় লোকরঞ্জনের উপাদান, দেয় আধুনিকতা।” ৪ থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি বহরমপুর রবীন্দ্রসদন মুক্তমঞ্চে ওই মেলায় এসেছিল সুইডেনের ১৩১ বছরের প্রাচীন লোকসঙ্গীতের দল ‘বার্ক ব্রাদার্স’ এবং বাংলাদেশের লোকগানের দল ‘পুনশ্চ’।
ছিলেন কবিগানের দুই দিকপাল শিল্পী দুলালী চিত্রকর ও সত্যেন দাস। ঢাকার নাট্যদল ‘শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র’, কলকাতার ‘থিয়েটার জোন’, ‘যুগাগ্নি’র পাশাপাশি নাটক মঞ্চস্থ করেন বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের আবাসিকেরাও। সম্মান জানানো হয় নাট্যব্যক্তিত্ব অরুণ মুখোপাধ্যায় এবং বাউল ফকির আলি বক্সকে। (সঙ্গের ছবিটি বাংলাদেশের রাইফেল নাটকের একটি দৃশ্য)

ছয় কবির কিস্‌সা
মুর্শিদাবাদে মফ্ফসল শহর জঙ্গিপুর থেকে গত এক দশক ধরে সাময়িক পত্রিকা ঋতবীণা বের করছেন রীণা কংসবণিক। সম্পাদক তিনিই। টিউশনি করে নিজের সংসার চালান, পত্রিকার সংসারও। এর আগে ‘সিপাহি বিদ্রোহের দেড়শো বছর’, ‘নারী সাহিত্য’, ‘সাবঅলটার্ন সমাজ’ বা ‘মোহিত চট্টোপাধ্যায় স্মরণ সংখ্যা’র মতো প্রয়োজনীয় কাজ হয়েছে। দশম বর্ষে প্রথম সংখ্যা ‘কবির ভুবন কবিতার ভুবন’-এ ছ’জন কবির ভাবনা ও তাঁদের সম্পর্কে অন্যদের মূল্যায়ন। এই কবিরা হলেন কলকাতার রমেশ পুরকায়স্থ, শিলিগুড়ির কঙ্কন নন্দী, দুর্গাপুরের সুবীর ঘোষ, শান্তিনিকেতনের প্রবীর দাস, বহরমপুরের সমীরণ ঘোষ ও নুরুল আমিন বিশ্বাস। প্রচ্ছদ এঁকেছেন সমীরণই।

সুবর্ণ আবাস
১৮৩ বিঘা ভাগ করে মোট ৪৮৩টা জমি। বাড়ি হয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশো। পুকুর, ফলের বাগান, ডাকঘর, স্কুল, খেলার মাঠ, ঠাকুরদালান, কমিউনিটি হল, পাকা রাস্তা, আলো সবই হয়েছে গত কয়েক দশকে শ্রীমন্তপুরের নবাদর্শ সমবায় আবাসনে সবই হয়েছে। বিরাটির মানুষ ডাকেন ‘নবাদর্শ’ নামে। স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শিক্ষক গোপালচন্দ্র চক্রবর্তী এক সময়ে নদিয়ার বীরনগরে গড়ে তুলেছিলেন স্বনির্ভর ঊষাগ্রাম। ভাবনার দিক থেকে নবাদর্শ তারই উত্তরসূরী। আবাসিকদের বেশির ভাগই বাংলাদেশের সিলেট থেকে আসা। ক্ষিতীশচন্দ্র চৌধুরী-সহ কয়েক জনের উদ্যোগে জমি কিনে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে আজকের নবাদর্শ। এ বার তাদের সুবর্ণজয়ন্তী।

শিল্পিত আরোগ্য
তিনি রোগীর নাড়ী দেখেন। সময় পেলে মূর্তিও গড়েন। নদিয়ার করিমপুর ১ ব্লকের শিকারপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকলেই দেখা মিলবে ডাক্তারবাবুর হাতে গড়া মূর্তির। কোথাও আর্ত রোগীকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে চিকিত্‌সক। আবার কোথাও পদ্মদিঘিতে নৌকার হাল ধরেছেন মাঝি। মাথায় বাঁধা গামছা। একটু দূরে ধোঁয়া ছেড়ে এগোচ্ছে স্টিমার। পাশে আর একটি ছোট নৌকায় মাঝি নয়, হাল ধরেছে কোলাব্যাঙ। মেডিক্যাল কলেজে মূর্তি গড়াও শেখায় বুঝি? হাসতে-হাসতে চিকিত্‌সক শঙ্কর রায় বলেন, “ডাক্তারি পড়েছি কলেজে। কিন্তু মূর্তি বানানো কারও কাছে শিখিনি। বালি, সিমেন্ট, পাথর, রং-তুলি নিয়ে যখনই সময় পেয়েছি, বসে পড়েছি। এলাকার মানুষও নানা উপকরণ যুগিয়ে সাহায্য করে গিয়েছেন। তবেই এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র সেজে উঠেছে।”

অন্তর স্পর্শে
কারও হাতের কয়েকটা আঙুল অসাড়। কারও বাঁ দিকের পা। সেরে উঠলেও কোনও না কোনও অঙ্গের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার মরিয়া চেষ্টা ওঁদের। ওঁরা জানেন, সমাজের একটা বড় অংশ ওঁদের বাঁকা চোখে দেখে। শান্তিনিকেতনে কুষ্ঠরোগীদের হোম তাঁদের ঠিকানা। সেই রামু, দিনেশ, দেবেনরাই মাতলেন ঋতুরঙ্গে। তাঁদের সঙ্গেই নাচলেন শান্তিনিকেতন, চন্দননগর, ভদ্রেশ্বরের স্কুল-কলেজের মেয়েরা। অমূলক ভয় আর ছোঁয়াছুঁয়ি সরিয়ে তারাও অসঙ্কোচ। ৩০ জানুয়ারি, বিশ্ব কুষ্ঠ দিবসে আগল ভাঙার সাক্ষী বেলেঘাটার কুষ্ঠরোগী ভবঘুরে আবাস।

জয়দেব স্মরণে
বাঁকুড়ায় ভক্তিগীতি ও পুরাতনী গানের জনপ্রিয় শিল্পী ছিলেন জয়দেব ঘোষাল। বেরিয়েছিল তাঁর দু’টি গানের সিডি ‘শিশির জলে ধুয়ে আঁখি’ ও ‘কিছু কাজ আছে বাকি’। মাত্র ৪৪ বছর বয়সেই ২৪ জানুয়ারি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অকাল প্রয়াত হলেন শিল্পী। বাঁকুড়া শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সমাজ আগামী শনিবার বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয়ের সভাগৃহে স্মরণসভার আয়োজন করেছে। জয়দেবের সঙ্গীত জীবন নিয়ে আলোচনা করবেন বন্ধু-বান্ধব ও গুণিজন।

মার্টিনদা
গ্রামের জীবন আর শহুরে সভ্যতার তফাত কোথায়? উত্তর খুঁজতে সুদূর জার্মানি থেকে পাড়ি দিয়ে সোজা ‘টেগোর’-এর শান্তিনিকেতনে এসে পৌঁছেছিলেন বছর একত্রিশের এক যুবক। দিনরাত ঘাঁটি গেড়ে পড়ে থাকতেন কাছে-পিঠের দুই আদিবাসী গ্রাম ঘোষালডাঙা আর বিষ্ণুবাটীতে। দেখতে-দেখতে কখন যেন রবীন্দ্রনাথই ঘরবাড়ি হয়ে উঠল মার্টিন কেম্পশেনের। কবির পল্লি পুনর্গঠন ভাবনাকে আশ্রয় করেই দুই গ্রামের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুললেন মার্টিন। বাংলা শিখলেন। ফুলমনি, বুধিরামদের নিয়ে বসে স্বাস্থ্য সচেতনতা, প্রাথমিক শিক্ষা, কর্মসংস্থান নিয়ে দু’চার কথা শুরু করলেন। ক্রমে আদিবাসী ঘরের হেঁশেল থেকে ফসলের খেত সর্বত্র অবাধ যাতায়াত শুরু হল ‘মার্টিনদা’র। লালমাটির সঙ্গে জার্মান সাহেবের এই মাখামাখি পঁয়ত্রিশ বছরে পড়ল। পল্লিগ্রাম নিয়ে তাঁর কর্মকাণ্ডকে সম্মান জানাতে সম্প্রতি তাঁকেই মাঘমেলার প্রধান অতিথি হিসেবে বেছে নিয়েছিল বিশ্বভারতী। জীবনে ও যাপনে নিজেকে আদ্যন্ত বাঙালি বলে দাবি করা মার্টিনের কথায়, “জার্মানির শহর আর গ্রামের মধ্যে বিশেষ তফাত নেই। তাই গ্রামে থেকে শিক্ষা নেব বলে ভারতে আসা। আসল ভারত রয়েছে তো গ্রামেই। তাকেই চেনার চেষ্টা করছি।” শুধু পল্লি পুনর্গঠন নিয়েই অবশ্য পড়ে নেই মার্টিনদা। জার্মান ভাষায় রবীন্দ্রনাথের জীবনী ও একাধিক রচনা অনুবাদ করেছেন। জার্মান ও ইংরেজি ভাষায় নিয়মিত চলছে তাঁর রবীন্দ্রচর্চা। এখন তিনি ব্যস্ত দুই গ্রামের বাচ্চাদের বাংলা আর ইংরেজি পড়াতে। নজর রয়েছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিল্প-সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারেও। নিজেই আস্ত একটি মিউজিয়াম গড়ে ফেলেছেন। সেখানে সযত্নে রাখা আছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের অস্ত্রশস্ত্র, নাচের পোশাক, অলঙ্কার। আদিবাসী শিল্পীদের গীত-বাদ্য রেকর্ড করেও রাখছেন। “রবীন্দ্রনাথের গ্রামোন্নয়ন ও পল্লি পুনর্গঠন ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে আরও স্বতঃস্ফূর্ততা দরকার। মানুষের মধ্যে এখন ওটার বড্ড অভাব” আক্ষেপ মার্টিনের।
 
রঙ্গলাল
নাড়ী দেখলেন রংলাল।
রোগিণী আবার যন্ত্রণাকাতর অস্ফূট শব্দ করে উঠলেন। রংলাল ডাক্তার ভ্রূকুঞ্চিত করলেন।...

আরোগ্য নিকেতন উপন্যাসে চিকিত্‌সক রঙ্গলাল মুখোপাধ্যায়কে এ ভাবেই ধরে রেখেছিলেন তারাশঙ্কর। এ বার নাটকেও এল তাঁর জীবনালেখ্য। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারাশঙ্করেরই গ্রাম লাভপুরে মঞ্চস্থ হল রঙ্গলাল নাটক। রঙ্গলালের চেয়ে তাঁর অনুজ, সাহিত্যিক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়েরই বহির্জগতে পরিচিতি বেশি। তবে বাংলার ইতিহাস তাঁকে মনে রেখেছে বিশ্বকোষ প্রণেতা হিসেবে। অবিভক্ত চব্বিশ পরগনার রাহুতা গ্রামের বাসিন্দা রঙ্গলালের জন্ম ১২৫০ বঙ্গাব্দের ২৪ আষাঢ়। ১২৭৩ সনে বীরভূমের লাভপুর ব্লকে দাঁড়কা গ্রামে আসেন শিক্ষকতার কাজ নিয়ে। পরে লাঘোষা গ্রামে অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদ চিকিত্‌সা করতেন। ওই সময়ে মহামারী দেখা দিলে যথাসাধ্য করেছেন। ময়ূরাক্ষীতে ভেসে আসা মৃতদেহ তুলে ব্যবচ্ছেদ করে জানতে চেয়েছেন রোগের কারণ। কলকাতায় ছাপাখানা করে তাঁর বিশ্বকোষ ছাপার ব্যবস্থা করেন ত্রৈলোক্যনাথই। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ও আলিপুরে জাতীয় গ্রন্থাগারে তার প্রথম খণ্ড রয়েছে। প্রয়াণ ১৩১৬ বঙ্গাব্দের। প্রয়াত সিরাজুল হকের গবেষণা লব্ধ বহু তথ্য ব্যবহার করে রঙ্গলাল নাটকটি রচনা করে গিয়েছিলেন প্রয়াত অর্ণব মজুমদার। নিজেদের স্থায়ী মঞ্চে সেটি যারা মঞ্চস্থ করল, সেই অতুল শিব ক্লাবেরও বয়স একশো ছাড়িয়েছে। এককালে এই মঞ্চে অভিনয় করে গিয়েছেন দানীবাবু, অমৃতলাল বসু, শিশির ভাদুড়ীরা। রঙ্গলাল চরিত্রে অভিনয় করলেন প্রবীণ অভিনেতা মহাদেব দত্ত। (সঙ্গের ছবিটি নাটকে রঙ্গলাল চরিত্রের)

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.