সংস্কারের দেড় বছরের মধ্যেই ভেঙে পড়েছে বাঁধের একাংশ। তার উপর গত বর্ষায় সেই ভাঙন আরও বেড়েছে। ফলে বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে জল বেরিয়ে গিয়ে জল-শূন্য হয়ে পড়েছে চেকড্যাম। রাইপুর ব্লকের ফুলকুসমা পঞ্চায়েত এলাকার এই মিনি চেকড্যামে জল না থাকায় চরম সমস্যায় পড়েছেন এলাকার চাষিরা। তাঁদের অভিযোগ, সেচের জলের অভাবে প্রায় ২০০ একর জমিতে রবি ও খরিফ চাষ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে ওই চেকড্যামের ধসে যাওয়া বাঁধ মেরামতির দাবি তুলেছেন তাঁরা।
রাজ্যের অন্য এলাকার সঙ্গে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের রুক্ষ এলাকায় জল সংরক্ষণের জন্য ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্প চালু হয়েছে। রাইপুর ব্লকের ফুলকুসমা পঞ্চায়েত এলাকায় ধানখোরি গ্রামের কাছে ঝিকু খালের উপর বাঁধ দেওয়া ওই মিনি চেকড্যামের পাড়ের একাংশ মাস পাঁচেক আগে ভেঙে পড়েছে। তারপর থেকে জল নেই ওই চেকড্যামে। এলাকার কৃষকদের ক্ষোভ, মাত্র দেড় বছর আগে ওই চেকড্যামে পাকা বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। সেই পাকা বাঁধের পাশেই মাটি ধসে গিয়েছে। মজুত জল সব বেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ বাঁধ মেরামতির ব্যাপারে প্রশাসনের হুঁশ নেই। তাঁদের প্রশ্ন, জল ধরো, জল ভরো প্রকল্পেও ওই চেকড্যাম সংস্কার করা হচ্ছে না কেন?
রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাসও ওই সমস্যার কথা জানেন। বিডিও বলেন, “ফুলকুসমা পঞ্চায়েতের ওই চেকড্যামটি দেড় বছর আগে সংস্কার করা হয়েছিল। পাকা বাঁধের পাশে মাটির বাঁধের একাংশ জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে। ওই চেকড্যামটি ছাড়াও এলাকার আরও কয়েকটি চেকড্যাম সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। পাশাপাশি এলাকার মিনি চেকড্যামগুলি মেরামতির জন্য কৃষি-সেচ দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে।” |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বারিকুল থানার লেপাম এলাকা থেকে ঝিকু খাল বয়ে গিয়েছে শিমূলপাল, রসপাল, ধানখোরি, বরাগাড়ির ভিতর দিয়ে। ফুলকুসমা পেরিয়ে শেষে ভৈরববাঁকি নদীতে মিশেছে ওই খালের জল। ফুলকুসমা পঞ্চায়েতের বরাগাড়ি মৌজায় ঝিকু খালের উপরে বাঁধ দিয়ে ১৯৯০-’৯২ সালে ওই মিনি চেকড্যাম তৈরি করা হয়েছিল। তিনটি পর্যায়ে কাজ সম্পূর্ণ হয়েছিল। রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির তরফে এ জন্য খরচ করা হয়েছিল প্রায় ২২ লক্ষ টাকা। ওই চেকড্যাম থেকে সরু দাঁড়ার মধ্য দিয়ে জল পৌঁছত লাগোয়া জমিতে। ওই চেকড্যাম থেকে বরাগাড়ি, ধানখোরি, ফুলকুসমা-সহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২০০ একর জমিতে সেচের জল মিলত। গরমকালে ওই চেকড্যামের জল এলাকার বাসিন্দাদের নানা কাজেও লাগত।
সম্প্রতি ওই এলাকায় দিয়ে দেখা যায়, খালের জল আটকানোর জন্য পাথর সিমেন্টের প্রায় ২০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এবং ৫০ ফুট লম্বা যে কংক্রিটের বাঁধ দেওয়া হয়েছিল তা অক্ষত থাকলেও তার সঙ্গে সংযুক্ত মাটির বাঁধের প্রায় ৩০ ফুট পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। জলের তোড়ে শুধু ওই বাঁধই ভাঙেনি, পাড়ও ধসে পড়ছে। চেকড্যাম থেকে জমিতে জল যাওয়ার যে সরু খাল খনন করা হয়েছিল তার অনেকটাই আগাছায় ভর্তি। প্রায় ধূ ধূ করছে চেকড্যাম। খালের জল চেকড্যামে আর জমছে না। যেটুকু জল আসছে, সব বেরিয়ে যাচ্ছে ভাঙা পথে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বর্ষায় পাকা বাঁধের পাশে মাটির বাঁধ প্রথম ভাঙতে শুরু করে। ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে খালের জল সব সময় বয়ে চলেছে। জল আর ধরে রাখা যাচ্ছে না। ফলে শুকিয়ে গিয়েছে চেকড্যাম। এরফলে খালের জল ধরে রেখে যে সেচের সুবিধা আগে পাওয়া যেত তা পুরোপুরি বন্ধ। ধানখোরি গ্রামের বাসিন্দা রতন সর্দার, রোহিত মুর্র্মু, বরাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা হেমন্ত সোরেনদের মতো কৃষকদের বক্তব্য, “স্নান করা থেকে জমিতে সেচের কাজে আমরা ওই জল ব্যবহার করতাম। জলের তোড়ে খালের উপর প্রায় ৩০ ফুটের বাঁধ ভেঙে ধুলিসাৎ হয়ে পড়ায় সব দিক থেকেই আমরা সমস্যায় পড়েছি। জলের অভাবে রবি ও খরিফ চাষ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”
ক্ষতি হচ্ছে শাক-সব্জি চাষের ক্ষেত্রেও। এলাকার চাষিদের ক্ষোভ, পরিকল্পনার অভাবে সামান্য জায়গায় উঁচু করে পাথর সিমেন্ট দিয়ে পাকা কংক্রিটের ওই বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। বাকিটা এখনও মাটির রয়ে গিয়েছে। জলের স্রোত বেড়ে গেলে তাই মাটির বাঁধে চাপ বাড়ছে আর বারবার ধসে পড়ছে। তাঁদের দাবি, ওই জায়গায় প্রায় ১০০ ফুট নতুন করে কংক্রিটের বাঁধ দিলে তবেই চেকড্যামে জল মজুত থাকবে।
কিন্তু প্রশাসন এখনও বাঁধ মেরামতির কাজ শুরুই করেনি। ফলে চাষিদের সমস্যা মেটেনি। ফুলকুসমা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের গোবিন্দপ্রসাদ মুর্মু সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। প্রধান বলেন, “চাষই এই এলাকার বাসিন্দাদের প্রধান পেশা। ওই চেকড্যামে জল মজুত থাকলে চাষাবাদের সুবিধা হবে। নতুন করে চেকড্যামটি সংস্কারের জন্য আমরাও দাবি জানিয়েছি। এতে এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন।”
রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস অবশ্য বলেন, “২০১২ সালে ১৬ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই মিনি চেকড্যামটির উপরে পাকা বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ওই অংশ ভাঙেনি। তার পাশের অংশ জলের চাপে ধসে গিয়েছে। কিছুদিন আগে ওই চেকড্যামটি সরজমিনে দেখে এসেছি। নতুন করে সংস্কার করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।” |