ফাঁকা রাস্তায় বেশ নিরুপদ্রবেই যাচ্ছিল সে। হঠাত্ই বাধা! আস্ত একটা রেলগেট সামনে।
ধার দিয়ে যাওয়া যেতই। কিন্তু, তার তখন সে-সব দিকে তাকানোর মনই নেই। অগত্যা লেভেল ক্রসিংয়ের রেলগেটটাই ভেঙে দিল দলছুট ওই দাঁতাল! ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার ভোরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের রাঁচি ডিভিশনের মুরি-বরকাখানা শাখায় মুরি স্টেশনের অদূরে। এলাকাটি ঝাড়খণ্ডের রাঁচি জেলায় পড়ে। মুরির সহকারী স্টেশন ম্যানেজার জে টোপনো বলেন, “এ দিন বেলায় ওই রেলগেট সারানো হয়েছে।” ওই ঘটনার জেরে ট্রেন চলাচলে কোনও প্রভাব না পড়লেও একটা দামাল হাতিই যে ওই রেলগেট ভেঙেছে, তা রেলের খাতায় জেনারেল ডায়েরি হিসেবে উল্লেখও হয়েছে। |
দাঁতালটি সোমবার রাতে প্রথমে ঢোকে পুরুলিয়ার ঝালদা পুর-শহরে। ঝালদা পেরোলেই ঝাড়খণ্ড। বন দফতর সূত্রের খবর, গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এক দিন এই হাতিটিই রাতে ঝালদায় ঢুকে এক স্থানীয় বাসিন্দাকে শুঁড়ে তুলে আছড়ে মারে। সোমবারও সে অযোধ্যা পাহাড় লাগোয়া জামপানির দিক থেকে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ঝালদায় ঢোকে। মায়া সরোবর রোডে একটি করাতকলের দরজা ভেঙে এগোতে থাকে চকবাজারের দিকে। পানের দোকানি হারু কাঁদু বলেন, “তখন দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আচমকা হাত দশেক দূরে দেখি, একটা হাতি ছুটতে ছুটতে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করি। জোর বেঁচেছি।” সেই সময় ওই রাস্তা ধরে স্থানীয় একটি মন্দির থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ব্রজ হালদার। তাঁর কথায়, “কী ভাবে বেঁচে গিয়েছি, জানি না।” ঝালদার পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার বললেন, “চকবাজারের কাছ থেকেই হাতিটি ঝালদা-বাঘমুণ্ডি রাস্তা ধরে। শহরের ভিতরের দিকে ঢুকে পড়লে কী হত, কে জানে!”
ঝালদার খুব কাছেই ডুমুরডি গ্রামে সোমবার রাতে তখন তাপস পাল, শতাব্দী রায়ের যাত্রানুষ্ঠান চলছিল। প্রচুর দর্শক সমাগম হয়েছিল। বন দফতরের এক কর্মী মঙ্গলবার বলছিলেন, “হাতিটা যদি সেদিকে চলে যেতে, কী যে কাণ্ড হত, ভাবতেই শিউরে উঠছি!” হাতিটি গত রাতে ওই যাত্রা প্যান্ডেলের কাছ দিয়েই পার হয়ে গিয়ে একের পর এক গ্রামে তাণ্ডব চালানোর পাশাপাশি লাগোয়া ঝাড়খণ্ডে রেলগেট ভেঙে ফেলেছে জেনে তাপস পালের প্রতিক্রিয়া, “ভাগ্যিস এ দিকে আসেনি। না হলে কী হত, কে জানে।” ওই যাত্রারই দর্শক ইচাগ গ্রামের বাসিন্দা সুধন্যা মাহাতো বলেন, “হাতিটা আমাদের গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের দরজা ভেঙে দিয়ে গিয়েছে। মিড-ডে মিলের চালের গন্ধে ঢুকেছিল। কিন্তু, ও যদি যাত্রা প্যান্ডেলের দিকে ঢুকে পড়ত, তা হলে বড় বিপদ হতে পারত।”
বন দফতর সূত্রের খবর, হুলাপার্টির তাড়া খেয়ে ঝালদা থেকে দাঁতালটি গোকুলনগর, কুটিডি, ইচাগ, সারজুমাতু, চাঁদাই, বলঘুটুয়া, কড়াডি, মহুলডি, মাঘা গ্রাম হয়ে সুবর্ণরেখা পেরিয়ে মুরিতে ঢুকে পড়ে। যাওয়ার পথে বিভিন্ন গ্রামের একাধিক ঘরবাড়িতে ও সব্জি খেতে হামলা চালায়।” রাত পৌনে চারটে নাগাদ মুরি স্টেশনের অদূরে লেভেল ক্রসিংয়ের কেবিনে থাকা রেলকর্মীরা গেট ভাঙার শব্দ শুনতে পান। একটু পরেই ওই লাইন দিয়ে মুরি-ধানবাদ প্যাসেঞ্জার ট্রেন যাওয়ার কথা। তাই গেট বন্ধ ছিল। উঁকি দিয়ে রেলকর্মী যা দেখেন, তাতে তাঁদের আক্কেল গুড়ুম। ওই কর্মীরা জানিয়েছেন, বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পরেও গেট পেরোতে না পেরে গেটটাই ভেঙে দিয়ে হাতি পার হয়ে চলে যায়। ঘটনার সময় কর্তব্যরত রেলকর্মী বিনোদ মাহাতোর কথায়, “আমি ওই গেটের কেবিনের কাছাকাছি একটা গুমটিতে ছিলাম। হাতিটা যখন গেটের একটা অংশ তেড়েফুঁড়ে ভেঙে ফেলছে, তখন ভয়ে স্টেশনের দিকে দৌড় লাগাই।”
এই দাঁতালটি গত কয়েক দিন ধরেই ঝালদার একাধিক গ্রাম দাপাচ্ছে। ঝালদার রেঞ্জার সমীর বসু বলেন, “এখন ওই দাঁতাল সুবর্ণরেখা পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডে গিয়েছে। যতক্ষণ এ-পারে না ঢোকে, ততক্ষণই শান্তি!’’ |