সম্পাদকীয় ১...
অর্থমনর্থম্
ভারতে তিনটি ধর্ম। যথাক্রমে রাজনীতি, বলিউড ও ক্রিকেট। এবং যে মহামন্দিরে এই তিন ধর্মের অমোঘ সহাবস্থান, তাহার নাম আইপিএল। তাহাকে ক্রিকেট-দেবতার আলয় ভাবিলে সারল্যের পরিচায়ক হইবে, কিন্তু সেই সারল্য বাস্তবের সহিত সম্পর্কহীন। আইপিএল-এর প্রাঙ্গণে নব্য ভারতের তিন ধর্ম আসিয়া মিলিয়াছে, কারণ অর্থ নামক পূজা-উপচার এই প্রাঙ্গণে অপরিসীম। ভারতীয় উপমহাদেশকে বিশ্ব-ক্রিকেটের প্রধানতম বাজার বলা হয় বটে, কিন্তু তাহা নেহাতই গৌরবে বহুবচন। উপমহাদেশের অন্য তিনটি দেশ, অর্থাৎ পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সেই অর্থনৈতিক জোর কোথায় যে সেখানে ক্রিকেটের বাজার বিশ্বমানচিত্রে প্রধান হইবে? উপমহাদেশে ভারতই বাজার। ভারতই বিশ্ব-ক্রিকেটের বাণিজ্যিক রাজধানী। এমত ক্রিকেট-বাণিজ্যকে কেন্দ্র করিয়া রাজনীতি ও বলিউডের সমাবেশ হইবে, তাহাতে আশ্চর্যের কী? অর্থ থাকিলে অনর্থও থাকিবে, তাহাও এক রকম অনিবার্য। সেই অনর্থ ঠেকাইবার একমাত্র পথ, কঠোর নজরদারি। আইপিএল-এর দেরাজ হইতে যে কঙ্কালগুলি জনসমক্ষে আসিতেছে, সেগুলি প্রমাণ করিতেছে যে নজরদারির কাজটি হয় নাই।
বিসিসিআই-এর ন্যায় একটি স্বাধীন, বেসরকারি সংস্থার উপর নজরদারি করিবে কে? আদর্শ পরিস্থিতিতে সরকারের কিছুই করণীয় নাই নজরদারির দায়িত্ব সংস্থার নিজের। একটি বেসরকারি সংস্থায় টাকা নয়ছয় হইতেছে কি না, তাহা দেখা সচরাচর সরকারের অবশ্যকর্তব্যের তালিকায় পড়ে না। কিন্তু, এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটিবার দুইটি কারণ আছে। প্রথম, ক্রীড়া প্রশাসনে বিবিধ দুর্নীতি ভারতে নিয়মিত ঘটিয়া থাকে। ভারতের অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন তাহাদের অস্বচ্ছতার কারণে দীর্ঘ ১৪ মাস বহিষ্কৃত থাকিল। ক্রিকেটের আর্থিক সঙ্গতির সহিত তুলনাই চলিতে পারে না, এমন খেলার ক্ষেত্রেও যখন দুর্নীতির প্লাবন নামে, তখন ক্রিকেটের দুর্নীতির মাপও মহাজাগতিক হওয়াই প্রত্যাশিত। দ্বিতীয় কারণটি এই মাপ সংক্রান্ত। ক্রিকেটে যে মাপের দুর্নীতি সম্ভব, তাহার প্রভাব বৃহত্তর অর্থনীতিতে, রাজনীতিতে পড়িবেই। সেই প্রভাব সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক। সেই ক্ষতি ঠেকাইবার দায় সরকারের অবশ্যই আছে। ফলে, বেসরকারি ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ যদিও নীতিগত ভাবে অনভিপ্রেত, তবু পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করিয়া ক্রিকেট প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করিবার এবং সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটির উপর নজর রাখিবার ব্যবস্থা সরকারকে করিতে হইবে। সেই নিয়ন্ত্রণের চরিত্র কী হইবে, তাহা বিবেচনাসাপেক্ষ। ক্রিকেট খেলাটি জাহান্নামে গেলেও রাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ নাই, কিন্তু গণতন্ত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যদি সেই অগস্ত্যযাত্রার সঙ্গী হয়, তবে চিন্তা করিতে হইবে বইকী। ভারতে সেই পরিস্থিতি উপস্থিত।
ক্রিকেটের দুর্নীতি যে খেলার পরিসর ছাপাইয়া বৃহত্তর সমাজের উপর প্রভাব ফেলিবার উপক্রম করিতেছে, তাহার একটি বড় কারণ এই খেলায় রাজনীতিকদের প্রবল উপস্থিতি। ক্রীড়া প্রশাসনে রাজনীতিকদের উপস্থিতির কুফল পৃথক আলোচনার বিষয়। কিন্তু আপাতত অনুমান করা চলে, এন শ্রীনিবাসন এবং তাঁহার সঙ্গীরা যে জট পাকাইয়াছেন, তাহা নেতাদের অজ্ঞাতসারে হয় নাই। ইহা গণতন্ত্রের পক্ষে সুসংবাদ নহে। তবে, সরকার এই পথেই ক্রিকেট-দুর্নীতির মোকাবিলা করিতে পারে। যে রাজনীতিকরা ক্রিকেট-প্রশাসনের সহিত যুক্ত, অন্দরমহলের সংস্কারের দায় তাঁহাদেরই দেওয়া হউক। গণতন্ত্রে জবাবদিহি করিবার দায় তাঁহাদের আছে। তাঁহাদের নিকট জানিতে চাওয়া হউক, কী ভাবে ক্রিকেট-প্রশাসনকে স্বচ্ছ করিয়া তোলা যায়। এবং, সেই দায়িত্ব যে প্রাথমিক ভাবে তাঁহাদেরই, তাহাও স্পষ্ট করিয়া দেওয়া হউক। সংস্কারের উদ্যোগ যদি অন্দর হইতে আসে, তবেই সেই সংস্কার সফল হইতে পারে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.