এ বার মুকেশের সঙ্গে গ্যাসযুদ্ধে অরবিন্দ
ফের কেজরিওয়াল বনাম অম্বানী। অনিলের পর তোপে এ বার মুকেশ।
সরকারকে বর্ধিত দামে প্রাকৃতিক গ্যাস বেচার অভিযোগে মুকেশ ও তাঁর সংস্থা রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরুর জন্য আজ দিল্লির দুর্নীতি দমন শাখাকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। মুকেশের সংস্থাকে ঘুরপথে মুনাফা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে একই সঙ্গে যথাক্রমে বর্তমান ও প্রাক্তন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি ও মুরলী দেওরার বিরুদ্ধেও এফআইআরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাতের দিকে রিলায়্যান্স এক বিবৃতিতে কেজরিওয়াল সরকারের অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে আইনি পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে।
কিছু দিন আগেই অনিলের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছিলেন কেজরিওয়াল। অনিলের রিলায়্যান্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের অধীনস্থ দুই সংস্থা দিল্লিতে বিদ্যুৎ বণ্টনের দায়িত্বে রয়েছে। চাপানউতোরের মূলে ছিল বিদ্যুতের দাম। আর অনিলের দাদার বিরুদ্ধে কেজরিওয়ালের অভিযোগ রিলায়্যান্স প্রথমে বাজারে গ্যাসের কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে। এক বার চাহিদা তৈরি হলে তখন তারা কার্যত ব্ল্যাকমেল করে সরকারকে বর্ধিত দাম মেনে নিতে বাধ্য করে। এই কাজে সরকারের শীর্ষ স্তরের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিও রিলায়্যান্সকে সাহায্য করেছেন বলে আপ শিবিরের দাবি। তাদের বক্তব্য, যে ভাবে একাধিক বার একই পদ্ধতিতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে গোটা প্রক্রিয়াটিতে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীদের ভূমিকা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। তাই তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে। অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন প্রাক্তন ডিজি (হাইড্রোকার্বন) ভি কে সিব্বলও। দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে আজ কংগ্রেস মুখপাত্র অজয় মাকেন বলেন, “যে কোনও তদন্তই স্বাগত। দলের কোনও ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলে দল তাঁকে বাঁচাবে না।”
বিবৃতিতে রিলায়্যান্সের বক্তব্য, ‘এফআইআরের সিদ্ধান্ত স্তম্ভিত করার মতো। যে সব অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লি সরকার এফআইআর দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার প্রতিটিই ভিত্তিহীন এবং অন্তঃসারশূন্য। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি একটি বিচারাধীন বিষয় যেখানে সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষ হল সরকার ও বরাতপ্রাপ্ত সংস্থাগুলি।’
বস্তুত, রিলায়্যান্স ও সরকারের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি যোগসাজশ করে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ করছেন বলে অভিযোগ জানিয়ে সম্প্রতি কেজরিওয়ালের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন প্রাক্তন ক্যাবিনেট সচিব টি এস আর সুব্রহ্মণ্যম, প্রাক্তন নৌসেনা প্রধান আর এইচ তাহিলিয়ানি, আইনজীবী কামিনী জয়সওয়াল। বিষয়টিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যেই মামলা করেছেন সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত। সেই মামলা গৃহীতও হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি ৪ মার্চ। কেজরিওয়াল অবশ্য ওই তিন জনের চিঠির ভিত্তিতেই তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “ওই ব্যক্তিদের অভিযোগ, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে অযথা মুনাফা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে রিলায়্যান্সকে। প্রকৃত সত্য খতিয়ে দেখার জন্যই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” তবে রিলায়্যান্সের বক্তব্য, ‘সুপ্রিম কোর্টে যাঁরা মামলা করেছেন, মনে হয় এ ক্ষেত্রে তাঁরাই অভিযোগ কারী। কারণ, দু’জায়গাতেই অভিযোগ একই।’
আগামী ১ এপ্রিল থেকে এনটিপিসি-কে বর্ধিত দামে প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রির জন্য রিলায়্যান্সকে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিল কেন্দ্র। তাই আজ প্রধানমন্ত্রী ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে কেজরিওয়াল অনুরোধ করেছেন, যত দিন তদন্ত চলছে, তত দিন যেন গ্যাসের দাম না বাড়ানো হয়। কেজরিওয়ালের দাবি, ইউপিএ সরকার আসার আগে রিলায়্যান্স প্রতি ইউনিট গ্যাস ২.৩ ডলারে এনটিপিসিকে বিক্রি করতে সম্মত ছিল। প্রথম ইউপিএ সরকারের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী মুরলী দেওয়ার আমলে একলাফে সেই দাম বাড়িয়ে ইউনিট-পিছু ৪.২ ডলার করা হয়। রিলায়্যান্সের যুক্তি ছিল, কৃষ্ণা গোদাবরী বেসিনে গ্যাস উত্তোলন করতে যতটা বিনিয়োগ তারা করেছে, সেই অনুপাতে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছর ফের একই যুক্তিতে সরকারের কাছে গ্যাসের দাম দ্বিগুণের কাছাকাছি বৃদ্ধির আবেদন জানায় মুকেশের সংস্থা। ডিসেম্বরে সেই দাবি মেনে নিয়ে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক জানায়, আগামী ১ এপ্রিল থেকে বর্ধিত দামে (ইউনিট-পিছু ৮ ডলার) গ্যাস বিক্রি করতে পারবে রিলায়্যান্স।
আজ তাতেই বাদ সেধেছেন কেজরিওয়াল। বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস প্রধানত সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে লাগে। কেজরিওয়ালের বক্তব্য, “এখন এক ধাক্কায় গ্যাসের দাম দ্বিগুণ হলে ফের মূল্যবৃদ্ধি হবে। এতে রিলায়্যান্সের বছরে ৫৪ হাজার কোটি টাকা মুনাফা হবে, কিন্তু ফল ভুগতে হবে গোটা দেশকে।” মুখ খুলেছেন মইলিও। আজ কেজরিওয়ালকে কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন, “অরবিন্দের অজ্ঞতার জন্য করুণা হয়। তিনি আসলে নিয়ম জানেন না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া কোনও কিছুই করা হয়নি। আর কেজরিওয়াল যদি কেন্দ্রকে টাকা দিতে পারেন, তা হলে আমরা খুশি মনে গ্যাসের দাম কমিয়ে দেব।” কেজরিওয়ালের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে গুরুদাসবাবু বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে বহু বার চিঠি লিখেও প্রাপ্তিস্বীকার ছাড়া কোনও জবাব পাইনি। গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে দেশে এক প্রস্ত মূল্যবৃদ্ধি হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.