লক্ষ্যপূরণ তো হবেই। বরং লক্ষ্যমাত্রাকে সামান্য হলেও ছাড়িয়ে যাবে রাজ্যের রাজস্ব আদায়ের অঙ্ক। সে ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ৩৯,৭৮৩ কোটি টাকা ছাড়িয়ে তা সম্ভবত ছুঁয়ে ফেলবে ৪০ হাজার কোটির মাইলফলক। বাজেট পেশের ছ’দিন আগে ইঙ্গিতে এ রকমই দাবি অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের।
২০১১-’১২ অর্থবর্ষে রাজ্যের রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। ২০১২-’১৩ সালে তা ৯০০০ কোটি টাকা বেড়ে ৩১ হাজার কোটি হয়। অমিতবাবুর দাবি, আরও ৯০০০ কোটি বেড়ে এ বার ৪০ হাজার কোটির দিকে এগোচ্ছে রাজস্ব খাতে আয়।
মঙ্গলবার টাউন হলে ১৮টি বণিকসভা ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। প্রায় দু’ঘণ্টার বৈঠক শেষে অমিতবাবু জানান, কর হ্রাস বা বৃদ্ধি এ দিনের আলোচনার মূল বিষয় নয়। তাঁর দাবি, কর আদায় ব্যবস্থায় কতটা স্বচ্ছতা রয়েছে, শিল্পমহল তা জানতেই বেশি আগ্রহী। তিনি বলেন, “ই-গভর্ন্যান্স-এর মাধ্যমে কর আদায় হচ্ছে। ফলে গোটা বিষয়ে স্বচ্ছতা এসেছে। কর মেটাতে অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও।” আর এই ব্যবস্থার হাত ধরেই রাজস্ব বেড়েছে বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গেই তাঁর ইঙ্গিত, অর্থবর্ষে রাজস্ব আদায়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা ছুঁয়ে ফেলার পথে হাঁটছে রাজ্য। |
অনলাইন ব্যবস্থায় কর আদায় নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বণিকসভা ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যরাও। এই ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার পাশাপাশি গতিও এসেছে বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁদের মতে, মাথায় ২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ঋণের বোঝা নিয়ে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। তবে রাজস্বের প্রায় ৬৯ শতাংশই কেন্দ্রের ঋণ শোধ করতে চলে যাবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
শিল্পমহলের অধিকাংশই অবশ্য প্রবেশ কর নিয়ে মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানান এ দিন। ছোট ও মাঝারি শিল্পের সংগঠন ফসমি, ভারত চেম্বার অব কমার্স-সহ বেশ কয়েকটি বণিকসভার পক্ষ থেকে প্রবেশ করকে আর্থিক বোঝা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের যুক্তি, উৎপাদনের কাঁচা মাল অধিকাংশই ভিন্ রাজ্য থেকে আমদানি করতে হয়। সে ক্ষেত্রে প্রবেশ করের চাপে উৎপাদনের খরচ আরও বেড়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে প্রবেশ কর বাবদ আর্থিক বোঝার পরিমাণ ৪০-৫০ কোটি টাকা দাঁড়ায়। যা ব্যবসার লভ্যাংশে থাবা বসায়।
তবে প্রবেশ কর ব্যবস্থা এখনই সংশোধনের আশা নেই। এ দিনও অমিতবাবু জানান, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে এই করের পরিমাণ বেশি নয়। ১% হারে প্রবেশ কর নেওয়া হয়। এবং এই কর ব্যবস্থা থাকার ফলে কোনও চুঙ্গি কর দিতে হয় না বলে তিনি জানান। এ প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, সব সরকারকেই কর নিতে হয়। কারণ এই অর্থেই রাস্তাঘাট, সেতু-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো গড়ে সরকার। এ ধরনের পরিকাঠামো গঠনের প্রাথমিক দায় সরকারের উপরেই বর্তায়।
এ দিনের বৈঠকে উঠে এসেছে আরও একটি দাবি। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে বাণিজ্য নীতি বা ‘ট্রেড পলিসি’ তৈরির দাবি করা হয়। কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স, বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স এবং ফেডারেশন অব ট্রেডার্স অর্গানাইজেশন (ফেটো)-এর মতো সংগঠনের পক্ষ থেকে এই দাবি উঠেছে। ফেটো-র প্রধান মহেশ সিংহানিয়া বলেন, “শিল্পের জন্য নীতি তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের জন্যও নীতি জরুরি, যেখানে আমাদের জন্য আর্থিক সুূবিধার কথা থাকবে। থাকবে সাধারণ ও স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা।” তাঁর দাবি, উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাতের মতো রাজ্যে এ রকম সুবিধা আছে। বিভিন্ন পণ্য বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা সরকারের হয়ে কর আদায় করেন। মহেশবাবুর দাবি, ব্যবসায়ীরা বৃহত্তম কর আদায়কারী। সেই সুবাদে কিছু সরকারি সুবিধা তাঁদের প্রাপ্য।
এ দিনের আলোচনা শেষে অমিতবাবু জানান, সকলের দাবি নথিভুক্ত হয়েছে। তবে রাজ্যের পক্ষে সব ব্যবস্থা এক সঙ্গে নেওয়া সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে এগোচ্ছে সরকার। |