জেলার প্রাচীন শহরগুলির অন্যতম সাইথিয়া। যোগাযোগের জন্য এই শহরে প্রতিদিন হাজার হাজার লোকের যাতায়াত। এ ছাড়া, সতীপীঠ নন্দেকেশ্বরী থাকায় প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় এই শহরে। এর জন্য এই শহর তো বটেই বাইরে থেকে আশা লোকজনের ভোগান্তির শেষ নেই।
আর রাস্তার প্রধান সমস্যার কারণ, প্রাচীন রেল সেতু। এই শহরের রাস্তা বলতে পূর্ব থেকে থেকে পশ্চিমে চলে যাওয়া লাভপুর রাস্তাটি। এই রাস্তাটিকেই দু’ভাগে ভাগ করেছে উত্তর-দক্ষিণে চলে যাওয়া রেলপথ। ব্যস্ত শহরের দু’প্রান্তের যোগাযোগের প্রধান ব্যবস্থা বলতে ওই রেলসেতু। যা প্রস্থে এতই কম যে একটা ট্রাক বা গাড়ি গেলে ওই সেতু দিয়ে হেঁটে চলাচল করা দায়। ফলে রাস্তার কারণে প্রতিদিন যানজট হল এই শহরের নিত্য সঙ্গী। ব্যাবসার কারণে, প্রতিদিন জেলার বাইরে থেকে যেমন শ’য়ে শ’য়ে ছোট-বড় ট্রাক বা গাড়ি এই শহরে আসে, তেমনি বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার লোকজনও আসেন তাঁদের রোজগারের জন্য। এ ছাড়াও বহু পূন্যার্থী প্রতিদিন এই শহরে আসেন। যানজটের কারণে পথ চলতি মানুষজনকে যেমন সমস্যায় পড়তে হয়, তেমনি থমকে যেতে হয় অ্যাম্বুল্যান্সকেও।
যানজট ও রাস্তার কারণে বহু দুর্ঘটনাও ঘটেছে। শুধু রেলসেতু নয়, এই শহরে যানজটের আর একটি বড় কারণ হল ফুটপাথ দখল করে গজিয়ে ওঠা অস্থায়ী দোকান। অধিকাংশ এই দোকানগুলি বিদ্যুৎ বা টেলিফোনের খুঁটিকে কেন্দ্র করে গজিয়ে উঠেছে। সাঁইথিয়া সেন্ট অ্যান্ড্রুজ স্কুলের শিক্ষক মানিক রায় বলেন, “কয়েক বছর আগে আমার বাবা দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। বাবা মোটরবাইকে ছিলেন। গাড়ি ও বিদ্যুতের খুঁটির মাঝে পড়ে মৃত্যু হয়েছে সন্ধ্যানি মোড়ের কাছে।” শুধু মানিকবাবুর বাবাই নন, ওই চত্বরেই আরও এক ব্যত্তির মৃত্যু হয়েছে। পালির মোড়ে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে কয়েক মাস আগে। কিছু দিন আগে রেলসেতুর পূর্ব দিকে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। দিন চারেক আগে ওই সান্ধানি মোড় এলাকাতেই টিউশন পড়তে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে গুরুতর জখম হয়েছে মাধ্যমিক এক ছাত্রী। সে এখনও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। ওই ছাত্রী কলকাতায় চিকিৎসাধীন। শহরের অধিকাংশ লোকজনের কথায়, গত কয়েক দশকে আর পাঁচটা শহরের মতো বীরভূমের এই বাণিজ্য শহরেও জনসংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় রস্তাঘাট বাড়েনি। আসলে পরিকল্পনার অভাবের কারণেই পরিস্থিতি বলে মনে করেছেন বাসিন্দারা। শহরের বিশিষ্টব্যক্তি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তপন মুখপাধ্যায় বলেন, “এই শহরকে সত্যিকারের যানজট মুক্ত করতে হলে প্রথম প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। শহরকে চাপ মুক্ত করতে সব থেকে আগে একটি বাইপাস জরুরি। সেই সঙ্গে ওই রেলসেতুর বদলে একটি ফ্লাইওভার করা।” বাসিন্দাদের দাবি, এলাকা ভিত্তিক মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করে রাস্তার ধারের দোকানগুলিকে সেখানে সরানো। সম্প্রতি প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাইথিয়ায় এসে বলেছিলেন, “সব থেকে আগে প্রয়োজন রেলসেতু সম্প্রসারণ।”
পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত বলেন, “১৯৯৪ সালে সাঁইথিয়ায় পুরসভা গঠনের পর থেকেই পুরকর্তৃপক্ষ সব রকম চেষ্টা চালিয়ে আসছে রেলসেতু সম্প্রসারণ ও বাইপাস তৈরির জন্য। কিন্তু নানা জটিলতায় তা বাস্তবায়িত করা যায়নি। আমরাও হাল ছাড়িনি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।” |