|
|
|
|
এ বার রূপঙ্করের পালা |
অনেক দিন বাদে মঞ্চে অভিনয় করবেন তিনি। নতুন
নাটকের মহড়া দেখে এসে লিখছেন সংযুক্তা বসু |
মেঘের দেশ। আর রোদের দেশ। দুই দেশে কোনও মিল নেই। কিন্তু মেঘের দেশের রাজপুত্র আর্যায়নের প্রেমে পড়ে গেল রোদের দেশের রাজকন্যা দেবারতি। কী হবে এ বার? দুই দেশের বৈরিতা মুছতেই মঞ্চে আসতে চলেছেন গায়ক রূপঙ্কর। গায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর এই প্রথম তিনি মঞ্চে অভিনেতা রূপে। মঞ্চের সব চরিত্রই গানে গানে কথা বলবে। ঠিক পালাগানে যেমন হয়। নাটকের নামও তাই ‘অথ মেঘ রোদের পালা’।
নাটক করার ইচ্ছেটা হঠাৎ জাগল কেন? বললেন, “নান্দীপটের দলে এক সময় পঁচাত্তর টাকা পেতাম হারমোনিয়াম শিল্পী হিসেবে। কিন্তু শেষমেশ পুরোপুরি নাটকেই মেতে গেলাম, যখন বিভাসদা (চক্রবর্তী) বললেন আমি অভিনয়টাও নাকি পারি। অভিনয় করেছি তখন ‘তীর্থযাত্রা’ আর ‘শ্বেতসন্ত্রাস’য়ে। কিন্তু নিজের সিংহভাগ প্রযোজনায়, নিজের পরিকল্পনায় নাটক এই প্রথম। বাল্টিমোরে গিয়ে ব্রডওয়ে দেখে মনে হয়েছিল অপেরা করি। তাই নাটক না লিখে শুভব্রত দে-র কাহিনি অবলম্বনে এই পালাটা লিখে ফেলি। প্রস্তুতি নিয়েছি দু’বছর ধরে।’’
তা হলে কি রূপঙ্করের গানের শ্রোতা কমছে? নাটক নিয়ে পড়েছেন যে... “না তা কেন হবে? প্রচুর জলসা ছিল সারা শীতকাল। এখনও চলছে। কত দিন ফাংশানে গেয়ে বাড়ি ফিরেছি রাত দুটোয়। আবার সকাল আটটা থেকে নাটকের রিহার্সাল। দুপুর দুটো পর্যন্ত। গত তিন মাস এটাই ছিল রুটিন,” হেসে বললেন রূপঙ্কর।
কিছু দিন আগে লেখক শুভব্রত দাবি তুলেছিলেন এই নাটক সর্বাঙ্গীণ ভাবে তাঁরই রচনা। তা নিয়ে বেশ বিতর্কও হয়েছিল। তাঁর নাটক ‘মেঘ রোদের গল্প’ বেতারেও সম্প্রচার হয়। সেই বিবাদ কি মিটে গিয়েছে? উত্তরে রূপঙ্কর বললেন, “আসলে আমরা অনেক দিনের বন্ধু। প্রথমে শুভব্রতরই তো নাটকটা পরিচালনা করার কথা ছিল। কিন্তু কিছু মতান্তর হওয়ায় আমরা একসঙ্গে কাজ করিনি। নাটকের ব্রোশিওরে গল্পকার হিসেবে ওর নামই থাকবে। স্টেজ ক্র্যাফ্ট, নাটকের দিক, গানের দিকপুরোটাই নতুন করে ঢেলে সাজানো। আশা করি আমাদের এই দূরত্ব সময়ে নিশ্চয়ই মুছে যাবে।” রূপঙ্করের নতুন পালা যে নামতে চলেছে তা জানার পর শুভব্রত বললেন, “নাটকটা আমি পরিচালনা করতে চেয়েছিলাম। হল না। এটাই খারাপ লেগেছিল। গল্পকার হিসেবে আমার নাম যখন থাকছে আর কিছু বলার নেই। চাই কাজটা হোক। রূপঙ্কর আমার প্রিয় শিল্পী। মানুষ ওর কাজ দেখুক। আমি আপাতত অন্য একটা বড় কাজের পরিকল্পনায় ব্যস্ত। এ নিয়ে আর বেশি কিছু ভাবতে চাই না।” |
|
মঞ্চে রূপঙ্কর। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল। |
বিতর্কের বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে যে পালা রূপঙ্কর মঞ্চস্থ করতে চলেছেন তার স্টেজ রিহার্সালও হয়ে গেল দু’দিন আগে নিরঞ্জন সদনে। ‘অথ মেঘ রোদের পালা’ আসলে নাটকের ভেতরে একটা নাটক। একটা থিয়েটারের দল এই পালাটা করতে গিয়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতার পথ পেরোয়। এবং তার ফলে মঞ্চের চরিত্রেরা কখনও ঢুকে পড়ে নাটকের চরিত্রে, কখনও বা মুখোমুখি কঠিন বাস্তবের। গল্পটার পটভূমি আসলে একটা রিহার্সাল রুম।
বাস্তব আর রূপকথা-ভাবনার মঞ্চায়নে রয়েছেন পরিচালক অঞ্জন দেব। যিনি ‘মাধবমালঞ্চী কইন্যা’ করার সময় ছিলেন বিভাস চক্রবর্তীর সহকারী।
কী ভাবে সমসাময়িক করছেন তাঁরা একটা নিছকই লোককাহিনিকে? স্টেজ রিহার্সালে দেখা গেল তারই কিছু ঝলক। যেখানে মেঘ-রোদের দেশের মধ্যেকার অর্থনৈতিক বৈষম্য আর বিদ্বেষের গল্প বলতে বলতে বাস্তবে এসে পড়ে সত্যিকারের হিংসা আর হানাহানির দৃশ্য। “মেঘ দেশ-রোদ দেশের মাঝখানে একটা দেওয়াল তৈরি হবে আলোর মাধ্যমে। সেই দেওয়াল ভাঙার দৃশ্য মন করিয়ে দিতে পারে জার্মানির প্রাচীর ভাঙা কিংবা মিশরের গণঅভ্যুত্থানের কথা। প্রতীকী ভাবে। বাদ যায়নি কামদুনি, মধ্যমগ্রাম থেকে নির্ভয়াও,” জানালেন রূপঙ্কর।
রাজনৈতিক ফ্যান্টাসি। কিন্তু আদ্যোপান্ত প্রেমের আখ্যান। যেখানে রাজকন্যা গাইবে,—
“এই ভাবে কাটে রজনী কেন?
সব কিছুই পাল্টে যাচ্ছে যেন
এই ভাবে স্বপ্ন হারায় যেন”
কিংবা রাজকন্যার রূপবর্ণনায় সখীরা গাইবেন,—
“ত্বক যেন তার তুলোর পাহাড়
তুলতুলে বাগান
কোন ক্রিম যে লাগান দেবী
মাখেন কোন সাবান?”
রূপকথার গানেও গীতিকার রূপঙ্কর দিতে চেয়েছেন মাঝে মাঝে সমসাময়িক ট্রেন্ডের বিজ্ঞাপনী ভাষা। “তবে সংলাপের বদলে গানগুলো লেখার সময় মাঝে মাঝে অন্তমিল আনতে ধন্দে পড়েছি। কাজটা বেশ কঠিনই ছিল। প্রথম ভেবেছিলাম একেবারে দেশি গানে-বাজনায়-নাচে পালা বাঁধব। কিন্তু অনেক ওয়েস্টার্ন সুরও দিতে হয়েছে।”
পালায় এত সব অভিনেতা অভিনেত্রী জোগাড় করা সহজ ছিল না। রূপঙ্করের মতো ব্যস্ত গায়ক এত দ্রুত দল গড়বেনই বা কী ভাবে? জানা গেল শিল্পীদের জোগাড় করতে রূপঙ্কর একটা বিজ্ঞাপনও দিয়েছিলেন কাগজে। “আমরা চেয়েছিলাম নাচ ও গান দুটোই জানা ছেলেমেয়েদের। ওদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করে, শিল্পী বাছাইয়ের পর তিন মাস ধরে কঠোর রিহার্সাল হয়েছে। মোট পঁচিশ জন থাকবে স্টেজে,” বললেন রূপঙ্কর।
‘অথ মেঘ রোদের পালা’ মঞ্চস্থ হবে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষাদিবসে। জি ডি বিড়লা সভাঘরে। সন্ধে সাড়ে ছ’টায়।
মঞ্চ দাপিয়ে দিনের পর দিন ‘ও আমার বউদিমণির কাগজওয়ালা’ বা ‘ও চাঁদ তোর জন্মদিনে ভদকা খাব’র মতো গান-গাওয়া রূপঙ্কর প্রোসেনিয়ামকে আরও কত প্রসারিত মননে ভাবতে পারেন তার প্রথম পরীক্ষাও কিন্তু সে দিনই...
সে দিনই জানা যাবে রোদের দেশের রাজকন্যা মেঘের দেশে আলো ছড়াতে পারবে কি না। |
|
|
|
|
|