শিলিগুড়ি শহরে ঢোকার মুখেই কামরাঙাগুড়িতে ৩১ডি জাতীয় সড়কের পাশেই রয়েছে নীল-সাদা রঙের দোতলা ভবনটি। সামনে কয়েকটি পুলিশের ভ্যান দাঁড়ানো। ভবনে ঢোকার পেল্লায় আকারের লোহার গেটটি বন্ধ। ভেতর থেকে ভেসে আসছে বিচিত্র সব শব্দ। কখনও কাঠ কাটার যন্ত্রের শব্দ। কখনও আবার মেঝেতে মার্বেল বসানোর টানা শব্দ। ধাতব কিছুর উপরে হাতুড়ি পেটানোর আওয়াজও ভেসে আসছে। আবার মাঝেমধ্যেই বেজে উঠছে ফায়ার অ্যালার্ম। শব্দের মতোই আসছে রং আর আঠার টাটকা গন্ধও।
সোমবার উত্তরবঙ্গের শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যা ভবনের বাইরে দাঁড়িয়েই বেশ বোঝা যাচ্ছিল, ভিতরে পুরোদস্তুর প্রস্তুতি চলছে। আজ, মঙ্গলবারই সদ্য তৈরি হওয়া এই ভবনটিতে বসতে চলেছে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন রাজ্য মন্ত্রিসভার একাধিক মন্ত্রী। রাজ্য সরকারের একটি সূত্রের খবর, মন্ত্রীদের উপস্থিতির সংখ্যা শেষ মুহূর্তে বাড়তেও পারে। সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্তই চলল ভবনটিকে সাজিয়ে তোলার শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি। |
উত্তরকন্যার মূল দরজা দিয়ে ঢুকে ভবনের বা দিকের করিডর দিয়ে সোজা মুখ্যমন্ত্রীর ঘর। ঘরের রাখা কাঠের চেয়ারগুলিকে সাদা তোয়ালে দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে এ দিন। সকালে এক প্রস্ত ঘর সাফাইয়ের পরে তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছে ঘরটি। ঘরের সামনে এ দিন থেকেই কড়া পাহারা। ভবনের যে দিকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘর, তার বিপরীত দিকেই সভা ঘর। সেখানেই এ দিনের মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে। গোল টেবিলের চারপাশে সাজানো হয়েছে চেয়ার। চেয়ারের সামনে টেবিলে রাখা হয়েছে মন্ত্রীদের নামের ফলক। সোমবার সকালে অন্তত তিনবার জল দিয়ে ঘরটি সাফ করা হয়েছে। প্রস্তুতি দেখতে যাওয়া উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও এ দিন সকালে ঘরে ঢুকলেন জুতো খুলেই।
দোতলায় তৈরি হয়েছে মন্ত্রীদের ঘর, সেখানে এ দিন রঙের শেষ প্রলেপ লাগানোর যেমন ব্যস্ততা চলেছে, তেমনিই কাঠের ফল্স সিলিং লাগানোর কাজও চলছে একসঙ্গে। ঘরে রাখা কম্পিউটারগুলি যথাযথ ভাবে চলছে কি না তা দেখতেও পরীক্ষা চালাচ্ছে জনা পাঁচেক কর্মী। আনা হয়েছে ফুলের মালাও। এক কর্মী জানালেন, সেগুলি বিভিন্ন ঘরে ঢোকার মুখে লাগানো হবে। |
একতলার দেওয়ালে গাঁথা শিলান্যাসের ফলকটিকে মুড়ে দেওয়া হয়েছে কাঠের ফ্রেম দিয়ে। দোতলা ভবনে লাগানো ভিআইপি লিফট কেমন চলছে, তা দেখতে দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক নিজে কয়েকবার লিফটে ওঠা-নামা করলেন। তাঁর কথায়, “অন্তত দেড়শো জন সারা ভবন জুড়ে কাজ করছেন। কে যে কোন কাজ করছেন তা বুঝতেই সময় চলে যাচ্ছে। রঙের কাজ করছে ভেবে হয়ত কারও সঙ্গে দেখা করলাম, কিছু পরে বুঝলাম সে হয়ত কাঠের কাজ করছে। এমনই ঘটে চলেছে সকাল থেকে।”
|