সেতু হয়নি, স্তম্ভ দেখেই বছর যায় টাটুয়াড়ার
দীর্ঘ আন্দোলনে প্রাপ্তি শুধু কয়েকটা ঢালাইয়ের স্তম্ভ। সেই স্তম্ভের উপরেই সেতু তৈরি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টানা ১৫ বছর ধরে লড়াই করে আজও একটি সেতু পেলেন না পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের ঝালদা ২ ব্লকের টাটুয়াড়া ও সংলগ্ল গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পাঁড়গা নদী বৃষ্টিতে ফুঁসে উঠে পথ বন্ধ করে দেয়। অন্য এলাকার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা।
টাটুয়াড়া ও সংলগ্ন টোলাগুলিতে হাজার সাতেক বাসিন্দার বাস। বছরের অন্য সময় শুখা পাঁড়গা নদী পেরিয়ে তাঁরা যাতায়াত করলেও বৃষ্টিতে ওই নদী ফুলে ওঠে। নদীর জল তখন কোমর ছাপিয়ে যায়। তখন বাসিন্দাদের নিদারুণ দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়। টাটুয়াড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, তাঁদের ব্লক সদর কোটশিলার দূরত্ব গ্রাম থেকে ১২ কিলোমিটার। আর ছয় কিলোমিটার দূরে পাশের ব্লক জয়পুর। তাই টাটুয়াড়া ও সংলগ্ন গ্রামগুলির মানুষজন হাট-বাজার করা বা চিকিৎসার প্রয়োজনে জয়পুরেই যান। আর সেই পথেই পড়ে পাঁড়গা নদী। কিন্তু বৃষ্টি নামলে ভরা নদী পেরিয়ে জয়পুরে যাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে।
দুর্ভোগ সঙ্গে নিয়ে এ ভাবেই চলে পারাপার। ছবিটি তুলেছেন প্রদীপ মাহাতো।
পেশায় হাতুড়ে চিকিৎসক টাটুয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা বিভীষণ কুমারের কথায়, “জল থাকলে কোনও ভাবেই ওই নদী পার হওয়া যায় না। এমনও হয়েছে, নদীতে প্রচণ্ড বেগে জল বইছে বলে আশঙ্কাজনক রোগীকেও হাসপাতালে পাঠানো যায়নি।” বিভীষণের সঙ্গেই সেতুর জন্য লড়াই করছেন গ্রামের আর এক বাসিন্দা পবন কুমার। তিনি বললেন, “আমরা তো ওই সেতুর দাবি নিয়েই লেগে রয়েছি। নদীতে জল থাকায় বছর খানেক আগে মাঝি টোলার এক মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া গেল না। সেই রাতেই তিনি মারা গেলেন।”
নদীর অন্য পারের বারুডি, নূতনডি, অজুডি, বারবেন্দ্যা-সহ লাগোয়া গ্রামগুলির ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা টাটুয়াড়াতেই স্কুল করে। টাটুয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য অহল্যা কুমার বলেন, “নদীতে জল থাকলে ওই গ্রামগুলির ছেলেমেয়েরা এপারে পড়তে আসতে পারে না।” এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে স্রেফ একটি সেতু গড়ার দাবি নিয়ে ব্লক অফিস থেকে জেলা সদর পুরুলিয়ায় গিয়ে বিভিন্ন সরকারি দফতরে বহু আবেদন জমা দিয়েছেন গ্রামবাসী। সেই চেষ্টার ফলস্বরূপ এখনও পর্যন্ত নদীর বুকে তৈরি করা হয়েছে পাঁচটি ঢালাইয়ের স্তম্ভ। ২০০৫ সালে তৎকালীন সাংসদ বীরসিংহ মাহাতোর এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে ওই স্তম্ভগুলি তৈরি করার পরেই থমকে যায় সেতু নির্মাণের কাজ। কেন বন্ধ হয়ে গেল কাজ তা আজও অজানা। ইতিমধ্যে ওই স্তম্ভ থেকে বেরিয়ে থাকা লোহার রড কেটে নিয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একশো জনসংখ্যার গ্রামের সঙ্গে বড় রাস্তার সংযোগকারী রাস্তা তৈরি করতে চাইছেন। তা হলে সাত হাজারেরও বেশি জনসংখ্যা থাকা এই এলাকায় কেন রাস্তা তৈরি হবে না? কেনই বা রাজ্য সরকার জঙ্গলমহলের উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়ার পরেও ওই সেতু বছরের পর বছর ধরে অর্ধসমাপ্তই থেকে যাবে?
পঞ্চায়েতের প্রধান রানি কুমার বলেন, “সেতু তৈরির দাবি ন্যায়সঙ্গত। গ্রামবাসীরা আমার কাছে গণস্বাক্ষরিত আবেদন দিয়েছেন। তাঁদের আবেদন যাতে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়, সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি।”
গ্রামবাসী জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর কাছেও আবেদন জমা দিয়েছেন। সৃষ্টিধরবাবু বলেন, “আমি সবেমাত্র ওই আবেদনপত্র পেয়েছি। আবেদনটি আমি পরিকল্পনা কমিটির বৈঠকে পেশ করব। অসমাপ্ত সেতুটি যাতে গড়া যায় তা দেখা হবে। গ্রামবাসীদের আমি স্তম্ভ থেকে রড চুরি আটকাতে বলেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.