ফের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে চলেছে ব্রিটেন। আবহবিদদের আশঙ্কা, সোমবার রাত থেকেই দক্ষিণ ইংল্যান্ড জুড়ে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হবে। ফুঁসতে থাকা টেমসের জল বাড়বে আরও অনেকটাই। ফলে টেমসের আশপাশে একাধিক শহর প্লাবিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ দিন ১৬টি জায়গায় বড় ধরনের বন্যার সতর্কতাও জারি করেছে হাওয়া অফিস।
জলমগ্ন হওয়ার ভয়ে সোমবার সকালেই উহন্ডসর ক্যাসেল রেল স্টেশন ও ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় রেল বোর্ড। টেমসের ধারে এই উইন্ডসর ক্যাসেলেই থাকেন ব্রিটেনের রাজপরিবার। |
টেমসের জলে ভেসেছে বার্কশায়ারের গ্রাম। সোমবার। ছবি: এএফপি। |
রাজপ্রাসাদের আকর্ষণে তাই ফি-বছরই বহু দেশি বিদেশি পর্যটক আসেন এখানে। কিন্তু আজ আর কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চায়নি প্রশাসন। আবহাওয়া দফতর লাল সঙ্কেত জারি করার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজপ্রাসাদের সঙ্গে রেল যোগাযোগ।
এ বছর শীতের শুরু থেকেই ঝড়, বৃষ্টি যেন পিছু ছাড়ছে না ব্রিটেনের। তথ্য বলছে, ১৭৬৬ সালের পর থেকে জানুয়ারি মাসে এত বৃষ্টি দেখেননি ইংল্যান্ডের বাসিন্দারা। গত তিন মাস জুড়ে ভারী বৃষ্টিতে একাধিক বার ডুবে গিয়েছে ডেভন, কর্নওয়েল-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল। নদীর জল ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে ৬০০-রও বেশি ঘরবাড়ি। ১ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্যত্র।
কিন্তু হাওয়া অফিসের খবর, গত ক’মাসে যা বৃষ্টিপাত হয়েছে, তার চেয়ে ঢের বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এ সপ্তাহে। রয়েছে প্রাণহানির আশঙ্কাও। সোমবার দিনের বেলা ভালয় ভালয় কাটলেও রাতের আকাশে তৈরি হবে নিম্নচাপ। তার জেরেই দক্ষিণ ইংল্যান্ডে গোটা সপ্তাহ জুড়ে চলবে ভারী বর্ষণ। অক্সফোর্ড, স্ট্রাটফোর্ড, বার্কশায়ার, ড্যাচেট, সারে, সমারসেটে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হবে বলে আশঙ্কা। যে ১৬টি জায়গায় লাল সঙ্গেত জারি হয়েছে, তার মধ্যে ১৪টিই টেমস নদীর সংলগ্ন এলাকা। টেমসের এমন রুদ্র মূর্তি বহুদিন দেখেননি বাসিন্দারা। উইন্ডসর, রিডিং, ড্যাচেটে ইতিমধ্যেই ঘর ছাড়তে শুরু করেছেন অনেকেই। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে উদ্ধারকাজ। নদীর পাড় বরাবর বালির বস্তা দিয়ে অস্থায়ী বাঁধ তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে।
দেশজোড়া এই বিপর্যয়ের মধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বিতর্কও। ইংল্যান্ডের নদীগুলিতে সংস্কারের কাজ যদি নিয়মিত হতো, তা হলে আজ এমন অবস্থার সামনে পড়তে হতো না বলে সোমবার মন্তব্য করেছেন উপ প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ।
উদ্ধারকাজ ঠিক মতো হচ্ছে না কিছু দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন অনেকে। পরিবেশ সংস্থার সভাপতি লর্ড স্মিথ এঁদের সঙ্গে আজ সরাসরি বাগ্যুুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলা কী ভাবে করতে হয়, রাজনীতিকদের থেকে তাঁর কর্মীরা সেটা একশো গুণ ভাল জানেন সাফ জবাব স্মিথের। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ড্রেজিংয়ের কথা যাঁরা বলছেন তাঁরাই তো এই খাতে কোষাগার থেকে অর্থ মঞ্জুর করেন। খরচ কমানোর জন্য এত দিন এ সব খাতের উপরই কোপ পড়ছিল।
এখন বড়সড় বিপর্যয়ের মুখে পড়ে এই কথা বলছেন। প্রশাসনের এই অন্তঃকলহকে অবশ্য বিশেষ আমল দিতে চান না প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। গত কাল জরুরি বৈঠক ডেকে উদ্ধারকর্মীদের সব সাহায্যের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
দক্ষিণ যখন জলে ভাসছে, উত্তরের ছবিটা কিন্তু এক্কেবারে আলাদা। উত্তর ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, উত্তর আয়ার্ল্যান্ড, ওয়েলস মুখ ঢাকবে বরফের চাদরে, জানাচ্ছেন আবহবিদরা। |