নিজের জমি নেই। চুক্তিতে অন্যের জমি চষেই দিন কাটে তাঁর। তবে পদ্ধতিটা একটু অন্য। চিরাচরিত চাষের বাইরে গিয়ে বিকল্প চাষেই ঝোঁক পূর্বস্থলী ১ ব্লকের রায়দোগাছিয়া গ্রামের কৃষক নাসির শেখের। লাভও পান ফি বছরই। এ বার জেলার সেরা কৃষকের সম্মানও পেতে চলেছেন নাসির শেখ।
নাসির শেখ। |
এলাকার অন্যান্য চাষিরা চাষাবাদ বলতে ধান, আলু, পাটের মতো গতানুগতিক কিছু চাষকেই প্রাধান্য দেন। তবে সে পথে হাঁটেন নি নাসির শেখ। ছ’বছর ধরে বিকল্প চাষেই ভরসা তাঁর। এলাকার বড় চাষিদের থেকে আর্থিক চুক্তিকে প্রতি বছর ১৩ বিঘা জমি নেন তিনি। তারপর ভাগ ভাগ করে সর্ষে, পেঁয়াজ, পালং শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, করলা, উচ্ছে প্রভৃতি চাষ করেন। চাষের তালিকায় রয়েছে আম, বাওকুল ও শ্রী পদ্ধতিতে ধানের চাষও। ফলে একটি ফসলের দাম না পেলেও অন্য ফসল থেকে প্রতিবছরই লাভ পান তিনি। নাসির শেখই জানান, এ বছর সবচেয়ে বেশি লাভ হয়েছে আম চাষ করে। ৩ বিঘা ৮ কাঠা জমিতে আম চাষ করেছিলেন। পূর্বস্থলী ব্লকের গোয়ালপাড়ায় আমের বাজার তৈরি হওয়ায় বিক্রি করতেই ঝক্কি পোহাতে হয়নি। তিনি নিজেই বলেন, “৮ কাঠার আম গুড় তৈরির জন্য বাড়িতে রেখেছি। বাকি ৩ বিঘের আম বিক্রি করে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা মিলেছে। অথচ জমির টাকা-সহ আম চাষে খরচ হয়েছে কুড়ি হাজার টাকা। এছাড়া গত কয়েক বছরে বাওকুলের চাষ করেও ভাল ফল মিলেছে।” তাঁর দাবি, নিয়ম মেনে সার, কীটনাশক ব্যবহার করেন তিনি। অসুবিধেয় পড়লে পরামর্শ চাইতে ছোটেন ব্লক কৃষি দফতরে। কৃষি দফতরের পরামর্শেই শ্রী পদ্ধতি মেনে ধান চাষ করেন তিনি। এতে জল খুব কম লাগে আবার লাভও হয় বেশি। |
নাসির শেখের ধারাবাহিক সাফল্য নজরে আসে কৃষি কর্তাদের। সম্প্রতি পূর্বস্থলীর শ্রীরামপুর এলাকায় কৃষি মেলায় নাসির শেখের তৈরি নানা কৃষিজাত পণ্যের প্রদর্শনীও হয়। সরকারি ভাবে কৃতী কৃষকের মানপত্রও তুলে দেওয়া হয় তার হাতে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্ত ব্লকের বাছাই করা কৃষকদের মধ্যে সেরা হয়েছেন নাসির শেখ। সোমবার বর্ধমান জেলার সহ-কৃষি অধিকর্তা নিখিল কর্মকার বলেন, “পূর্বস্থলী ১ ব্লকের চাষি নাসির শেখ এ বার কৃষক সম্মানের জন্য মনোনীত হয়েছেন। মাটি উৎসবে তাঁর হাতে পুরস্কার বাবদ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হবে।” নাসির শেখের সম্মানে খুশি এলাকার অন্য চাষিরাও। দোগাছিয়া মুসলিম পাড়ার চাষি জামাল শেখ জানান, চাষ নিয়েই সারা দিন পড়ে থাকেন উনি। সবসময় ভাবেন নতুন কী পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। ব্লক কৃষি আধিকারিক পরিতোষ মণ্ডল জানান, নানা ধরণের চাষ তো বটেই, নাসির সাহেব বাড়িতেও মাছ চাষ ও গরু-ছাগল চাষ করেন। প্রগতিশীল চাষি হিসেবে অনেকটাই এগিয়ে তিনি। মহকুমা সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “বিকল্প চাষের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষের কথা আমরা বিভিন্ন শিবিরে গিয়ে বারবার চাষিদের বলি। উনি সেটা করে দেখিয়েছেন।”
|