পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে দুগ্ধ সমবায়
কোথাও দুধ ঠান্ডা করার যন্ত্র খারাপ, আবার কোথাও নেই পশু চিকিৎসক। পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে জেলার দুগ্ধ সমবায়গুলি। সেই জায়গায় বাজার দখল করছে বেসরকারি দুগ্ধ সংস্থাগুলি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নব্বইয়ের দশকের গোড়া থেকে জেলায় দুগ্ধ সমবায় তৈরি শুরু হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে সেই উদ্যোগ সফল হয়। এক সময়ে জেলায় দুগ্ধ সমবায় সমিতির সংখ্যা একশো ছুঁয়েছিল। তার মধ্যে মহিলা পরিচালিত দুগ্ধ সমবায় সমিতিও ছিল। কিন্তু পরিকাঠামো-সহ বেশ কিছু সমস্যায় আস্তে আস্তে জেলার বেশির ভাগ দুগ্ধ সমবায় সমিতিই এখন বন্ধ। গোপালকদের অভিযোগ, কয়েক বছর আগেও জেলার গ্রামগুলিতে নিয়মিত প্রাণী চিকিৎসা শিবির করা হলেও বর্তমানে এই শিবির হয় না বললেই চলে। অনেক দুগ্ধ সমবায়ে পশু চিকিৎসক নেই। গোপালকদের আরও দাবি, আগে দুগ্ধ সমবায় সমিতিগুলি মিল্ক ইউনিয়নের মাধ্যমে গো-খাদ্য দিলেও বর্তমানে এই পরিষেবা উঠে গিয়েছে। দুগ্ধ শীতলীকরণ প্রক্রিয়াটিও অনেক জায়গাতেই বন্ধ।
সমস্যার কথা স্বীকার করে রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলার বিধায়ক স্বপন দেবনাথ বলেন, “রাতারাতি পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়। গোপালকদের সমস্যা মেটাতে প্রতিটি জেলা ধরে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে।” জেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর কুশল পাল বলেন, “মিল্ক ফেডারেশনের অধীনে জেলায় বর্তমানে মাত্র ৩০টি দুগ্ধ সমবায় রয়েছে। এই ছবি যথেষ্ট হতাশাজনক।” তিনি জানান, ব্লক পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন আধিকারিকদের গো-খাদ্য দেওয়ার সময়ে সমবায় সমিতির সদস্যদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত গ্রামগুলিতে গোপালকেরা তাঁদের কাছাকাছি দুগ্ধ সমবায়গুলিতেই দুধ বিক্রি করেন। নিয়ম অনুযায়ী, সেই দুধ প্রথমে সংশ্লিষ্ট সমবায়ের শীতলীকরণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষে দুগ্ধ সমবায় থেকে মিল্ক ফেডারেশনের মাধ্যমে দুধ পৌঁছয় সরকারি দুগ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলিতে। কিন্তু এই পদ্ধতিই বর্তমানে অনেক গ্রামে ভেঙে পড়েছে। বেশির ভাগ দুগ্ধ সমবায় সমিতির শীতলীকরণ যন্ত্রই খারাপ। ফলে বেশির ভাগ সমবায় সমিতিতেই এখন একটি যন্ত্রে তিন-চারটি সমবায় সমিতির দুধ নিয়ে এসে ঠান্ডা করতে হয়।
জেলার দুগ্ধ সমবায়ের কর্তারা জানিয়েছেন, গত ৫-৬ বছর ধরেই সমবায় সমিতিগুলিতে আস্তে আস্তে দুধের জোগান কমতে শুরু করে। ২০১০ সালের পর থেকে বেশ কয়েকটি সমবায় সমিতি উঠে যায়। এই সুযোগ নিচ্ছে বেসরকারি দুগ্ধ সংস্থাগুলি। তারা গ্রামগুলিতে ইউনিট খুলে গোপালকদের থেকে দুধ কিনে নিচ্ছে। সংস্থাগুলি শুধু যে সরকারি সমবায়ের থেকে দুধের দাম বেশি দেয় তা নয়, গোপালনের নানা খরচের জোগানও দেয়। গরু-মোষ অসুস্থ হয়ে পড়লে এই সংস্থাগুলি চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলার বিভিন্ন দুগ্ধ সমবায়ের কর্তারা। মন্তেশ্বরের আসানপুর সমবায়ের কর্তা শিশির ঘোষের আক্ষেপ, “সরকারি সমবায়গুলি বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে লড়াইয়ে পেরে উঠছে না।” তাঁর দাবি, সরকারি সমবায়গুলির হাল ফেরাতে গেলে পরিষেবাকে উন্নত করতে হবে। দুধের দাম বাড়াতে হবে। মন্তেশ্বরের ইন্দিরা মহিলা দুগ্ধ উৎপাদক গোষ্ঠীর সভানেত্রী কৃষ্ণা রায় বলেন, “বেসরকারি সংস্থাগুলি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বেশি দামে দুধ নিয়ে যাচ্ছে। দুগ্ধ সমবায় সমিতিগুলিতে দুধের জোগান খুব কম।” কাটোয়ার কেতুগ্রামের মালগ্রাম দুগ্ধ সমবায় সমিতির সম্পাদক সতেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “গোপালনের খরচ বাড়লেও সেই অনুযায়ী লাভ নেই।” পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নিমার দুগ্ধ উৎপাদক সমবায় সমিতির সম্পাদক অরুণ ঘোষের অভিযোগ, আগে সমবায় থেকে গোপালকেরা গরু-মোষের জন্য চিকিৎসা পরিষেবা পেলেও বর্তমানে সেটি মিলছে না।
রাজ্য মিল্ক ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, আগে বর্ধমান জেলার দুগ্ধ সমবায়গুলি থেকে দৈনিক কুড়ি হাজার লিটার দুধ পাওয়া গেলেও এখন সেই পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে দু’হাজার লিটারে। তবে, সম্প্রতি দুগ্ধ সমবায়গুলির হাল ফেরাতে প্রশাসনিক স্তরে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি পূর্বস্থলীর লোক সংস্কৃতি কৃষি মেলায় এসে গো পালকদের দুধের দাম বাবদ দু’টাকা করে বেশি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মিল্ক কমিশনের চেয়ারম্যান দিবাকর মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বেসরকারি সংস্থাগুলি হয়তো সাময়িক কিছু সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু সরকার যখন কিছু করবে তখন স্থায়ীভাবেই করবে।” তাঁর দাবি, সরকারকে দুধের গুণগত মানের দিকে নজর দিতে হয়। কিন্তু বেসরকারি সংস্থাগুলির সেই দায়বদ্ধতা থাকে না।
বর্ধমান জেলায় সমবায়গুলিতে দুধের জোগান কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন মাদার ডেয়ারির চিফ জেনারেল ম্যানেজার উদয়ভানু গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “জীবাণুমুক্ত ভাল দুধ পেতে গেলে প্রতি দিন কাঁচা দুধের জোগান বাড়ানো জরুরি। বর্ধমান জেলায় কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে। প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরকে তার পরিষেবা বাড়াতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.