দাঁতে কই মাছ চেপে ফের মাছের সন্ধানে ডুব দিল বছর বারোর তন্ময় মাল। কিছুক্ষণ জলের ভেতর থাকার পর শ্বাস নেওয়ার জন্য প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, তখনই একটু হালকা হল দাঁতের বাঁধন। আর সেই ফাঁকেই মুখের ভেতরে ঢুকে গেল কইমাছ! বেরোবে কী করে? কাঁটা তখন গলায় আটকে।
ওই অবস্থায় এক ছুটে বাড়ি ফেরা। নিজে কিছু বলতে না পারলেও বন্ধুরা বাড়িতে বিষয়টি জাননোর সঙ্গে সঙ্গেই মোটর সাইকেলে সোজা চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসেন আত্মীয়েরা। চিকিত্সকেরা জানিয়ে দেন, এ কম্ম তাঁদের নয়। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ‘রেফার’ করা দেন। সব ঘটনা শুনে ভর্তি করা হয় নাক-কান-গলা বিভাগে। চিকিত্সকেরা এক্সরে করে দেখেন, মাছ রয়েছে গলার কাছে খাদ্যনালিতে। নল দিয়ে টানাটানি করে মাছ বের করার চেষ্টা চলতে থাকে। কথায় আছে, কই মাছের প্রান। সে তখনও মরেনি। সেও বাঁচার চেষ্টার মরিয়া। একদিকে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞদের টানাটানি, অন্য দিকে কইয়ের বাঁচার চেষ্টা, দুইয়ে মিলে হঠাত্ সে গলা থেকে নেমে যায়। নাক-কান-গলা বিভাগের সীমানা পেরিয়ে যেতেই তাঁরা হাত তুলে দেন। |
এ বার পালা সাধারণ শল্য বিভাগের। চিকিত্সকদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিল, গলা থেকে তো নামল। কিন্তু তারপর গেল কোথায়? ফের এক্স-রে। হাসপাতালে এক্স-রে করে তেমন কিছু বোঝা গেল না। বোঝা যাবেই বা কী করে? দামি এক্স-রে যন্ত্র পড়ে থাকে। নিম্নমানেরটা দিয়ে কাজ চালানো হয়। অগত্যা হাউসস্টাফ স্বরূপ সাঁতরা ও ইন্টার্ন অভিষেক দাস মোটরবাইকে চাপিয়ে তন্ময়কে নিয়ে যান বেসরকারি পরীক্ষাগারে। ডিজিট্যাল এক্স-রে করে দেখা যায়, মাছ চলে গিয়েছে পাকস্থলিতে। ফের অস্ত্রোপচার শুরু। পাকস্থলি কেটে মাছ বের করা হয়। তবে তখন আর মাছটি বেঁচে নেই। গলে গিয়েছে দু’টি চোখও। শল্য চিকিত্সক অমিত রায়ের কথায়, “খাবার পরিপাকের জন্য পাকস্থলী থেকে এক ধরনের রস নিসৃত হয়। সেই রসের দাপটেই মাছটি মারা যায়। এমনকী চোখ দু’টিও গলে যায়। তবে শুরুতে বেঁচে ছিল তা স্পষ্ট। কারণ, বাঁচার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ায় খাদ্যনালীর বেশিরভাগ অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। মাছটিও খুব একটা ছোট ছিল না। প্রায় ১০ সেন্টিমিন্টার লম্বা ও সাড়ে তিন সেন্টিমিটার চওড়া ছিল।” শনিবারের এই অস্ত্রোপচার অবশ্য সফল। রবিবার দুপুরের পর থেকে কথাও বলতে পারছে তন্ময়।
তন্ময়ের বাড়ি গড়বেতা থানা এলাকার ঘাটমুড়া গ্রামে। ষষ্ঠ শ্রেণির এই ছাত্রটি গ্রামেরই অন্য বন্ধুদের সঙ্গে গ্রামের পাশের বাঁধে স্নান করতে গিয়েছিল শনিবার বাঁধে এখন জল অনেকটাই করে গিয়েছে। তার উপর গরম পড়েছে। এখন থেকেই জল তোলপাড় শুরু করেছে দামাল কিশোরেরা। তন্ময়রাও সে দলেই পড়ে। জল দু’ফাঁক করে এদিক সেদিক করার সময় হঠাত্ পায়ে লাগে একটি মাছ। পায়ে মাছ চেপে ধরেই এক ডুব। মাছ তুলে যুদ্ধজয়ের আনন্দে বন্ধুদের দেখানো। কিন্তু এখানেই ক্ষান্ত হয়নি সে। একটি মাছ পাওয়া গিয়েছে মানে আরও মাছ রয়েছে ওখানে। এই অনুমান থেকেই ফের ডুব দিয়ে পাঁকে মাছ খোঁজার চেষ্টা। কিন্তু পাওয়া মাছটি রাখবে কোথায়? বড়দের মতো, সেও মাছটি দাঁতে চেপে ধরে আরও মাছ খোঁজার চেষ্টা করে। আরে তাতেই এই বিপত্তি। তন্ময়ের বাবা মনসা মালের কথায়, “বন্ধুদের সঙ্গে স্নান করতে গিয়ে কি অঘটনই না ঘটাল ছেলেটা।” বিপদ কাটার পরে চিকিত্সক অমিত রায় ওই কিশোরকে জিগ্যেস করছিলেন, “কী রে আর এ ভাবে মাছ ধরবি?” গলার ক্ষত আর পেটে ব্যান্ডেজ বাঁধা
অবস্থায় হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে করুণ মুখে তন্ময়ের জবাব, “না, আর মাছ ধরব না।” |