হৃদস্পন্দনের ছন্দ ফেরাবে সেই পেসমেকার, কিন্তু তাতে কোনও কাটা-ছেঁড়ার দরকার হবে না। অন্তত তেমনটাই দাবি ভারতীয় বংশোদ্ভূত চিকিৎসক বিবেক রেড্ডির। সম্প্রতি তিনি এমন এক পেসমেকার তৈরি করেছেন, যা
|
বিবেক রেড্ডি |
বসাতে কোনও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে না। থাকবে না কোনও লিডও।
আজব শোনালেও বিবেকের এই নয়া কৃতিত্বে শংসাপত্র দিয়েছে মার্কিন সরকারও। ঠিক কী করেছেন বিবেক?
সাধারণত, হৃদস্পন্দনের গতিতে অসঙ্গতি ধরা পড়লে বুকের চামড়া কেটে হৃৎপিণ্ডের পাশে বসানো হয় পেসমেকার। স্পন্দন উৎপাদনকারী যন্ত্রের সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের সংযোগ রক্ষার জন্য থাকে একাধিক তার বা লিড। কিন্তু বিবেকের তৈরি নতুন পেসমেকারটি বিশেষ পদ্ধতিতে রোগীর কুঁচকি দিয়ে ঢুকিয়ে সরাসরি বসিয়ে দেওয়া হবে হৃৎপিণ্ডের ভিতরে। প্রয়োজন হবে না লিডের জটিলতার।
ডাক্তারি পরিভাষায় এই নতুন পেসমেকারের নাম লিডলেস-২। ম্যানহাটনের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের চিকিৎসক বিবেক রেড্ডির কথায়, “লিডলেস-২ পেসমেকারটি রোগীদের পক্ষে অনেকটা বেশি নিরাপদ হবে, কারণ এত দিনের পেসমেকারগুলির মতো বুকের চামড়া কেটে অস্ত্রোপচার করে বসাতে হবে না এই যন্ত্র। কোনও লিড না থাকায় অনেক বেশি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন পেসমেকার ব্যবহারকারীরা।” তিনি জানালেন, ব্যাটারিচালিত এই পেসমেকারের জটিলতা অনেক কম। এটা এমন ভাবে ডিজাইন করা, যাতে যে কোনও সময় শরীর থেকে খুলে ফেলা যাবে যন্ত্রটি।
তথ্য বলছে, সারা পৃথিবীতে চল্লিশ লক্ষ মানুষের দেহে পেসমেকার রয়েছে। প্রত্যেক বছর গড়ে সাত লক্ষ মানুষ নাম লেখান পেসমেকার ব্যবহারকারীর দলে। চিকিৎসক মহলের মতে, নতুন পেসমেকারের ব্যবহার শুরু হলে অনেকটাই সহজ হবে পেসমেকার বসানোর পদ্ধতি। বুকে কোনও কাটা দাগ থাকবে না, থাকবে না সংক্রমণের ভয়। লিডের জটিলতা না থাকার ফলে রোগীর চলাচলের উপর বাধা-নিষেধও অনেকটা কমে যাবে। মোদ্দা বিষয়, আরও অনেকটা আরাম পাবেন পেসমেকার ব্যবহারকারীরা।
একমত পশ্চিমবঙ্গের কার্ডিওলজিস্ট মহলও। চিকিৎসক শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “অস্ত্রোপচার ছাড়া পেসমেকার বসানোর পদ্ধতিটি অবশ্যই অভিনব এবং সুবিধাজনক। পেসমেকার বসানোর বিষয়টি ভারতে দীর্ঘ দিন ধরেই প্রচলিত। কিন্তু এ দেশে অস্ত্রোপচার পরবর্তী সংক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি। ভয় থাকে রক্তপাতেরও। সেই আশঙ্কা এড়াবে নতুন এই লিডলেস পেসমেকারের প্রয়োগ। তা ছাড়া আঘাত পেলে লিড ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নতুন এই পেসমেকারে লিড না থাকায় আগের মতো অত বেশি সাবধানী চলাচল করতে হবে না রোগীদের।”
তবে তিনি এ-ও জানালেন, লিডলেস পেসমেকারের ধারণা খুব নতুন কিছু নয়। গবেষণা অনেক দিন ধরেই চলছে। বিভিন্ন সংস্থাও চেষ্টা করছে এই নতুন পেসমেকার বাজারে আনার। এ বার যদি তা সত্যি হয়, আর তার পেছনে নাম থাকে এক জন ভারতীয় চিকিৎসকের, তবে তা সামগ্রিক ভাবে বেশ আশার কথা। |