নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি |
বেআইনি ভাবে একাধিক স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহারের অভিযোগে ধৃত তিন বিদেশি নাগরিককে দু’দিনের পুলিশ হাজতের নির্দেশ দিল আদালত। জলপাইগুড়ি আদালতের সরকারী আইনজীবী শান্তা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অনুমতি ছাড়া স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। ধৃতদের বিরুদ্ধে সেই নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।” অভিযুক্তদের আইনজীবী স্বরূপ মন্ডল জানান, পুলিশের যে সমস্ত ধারায় মামলা করেছে, তার একটি ছাড়া সবই জামিনযোগ্য। তিনি বলেন, “অভিযুক্তরা শ্যুটিং করতে ডুয়ার্সে এসেছিলেন। তাঁরা তদন্তকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন।”
‘পিকিং এক্সপ্রেস’ নামে ইউরোপে একটি জনপ্রিয় টিভি রিয়েলিটি শো রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের দাবি, সেই গেম শো-র শ্যুটিং করতেই তাঁরা স্যাটেলাইট ফোন নিয়ে এ দেশে ঢুকেছিলেন। এই শো-তে প্রতিযোগীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নানা বাধা পেরিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছতে হয়। এক একটি দলে দু’জন করে প্রতিযোগী থাকেন। অপরিচিত পাহাড়, জঙ্গল, জনপদ পার হয়ে তাঁদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগীরা পথ হারিয়ে ফেলতে পারেন, এই আশঙ্কাতেই তাঁদের হাতে ওই স্যাটেলাইট ফোন দেওয়া হয় বলে অভিযুক্তরা জেরায় জানিয়েছেন।
২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন সিজনে শো-টি চলছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারে ফ্রান্সের একটি সংস্থা এই শো-র প্রযোজনা করছে। অভিযুক্তরা জানিয়েছেন, তাঁরা মায়ানমার ও ভারতে শু্যটিং করেছেন। ১ ফেব্রুয়ারি সংস্থার ৫০ জন বিদেশি কর্মী এদেশে আসেন। তাঁদের মধ্যে জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, সুইৎজারল্যান্ড এবং বেলজিয়ামের নাগরিকেরা আছেন। দলটি মায়ানমার থেকে প্লেন ভাড়া করে গুয়াহাটি আসে। সেখানে তাঁদের সহকর্মী হিসাবে যোগ দেন এদেশের আরও ৩৯ জন। তাঁরা দিল্লি, চণ্ডীগড়, হরিদ্বার-সহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সাত দিন ধরে দলটি নাগাল্যান্ড এবং অসমে শু্যটিং করে। শনিবার বাগডোগরা বিমান বন্দরে নেমে দলটি ডুয়ার্সের চালসার রিসর্টে ওঠে। ডুয়ার্স ছাড়াও দলটির কালিম্পং, দার্জিলিং এবং সিকিমে শ্যুটিং করার কথা আছে। চালসার রিসটের্র্ গিয়েই দলটি স্যাটেলাইট ফোনের ব্যবহার শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং সেনা বাহিনীর নজরে এসে যায়। পুলিশ তদন্তে নেমে গত শনিবার চালসার রিসর্ট থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করে। তাঁদের এক জন জার্মান নাগরিক, একজন বেলজিয়ামের ও অন্য জন ইংল্যান্ডের বাসিন্দা। ২২টি স্যাটেলাইট ফোনও উদ্ধার হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ধৃত জার্মান নাগরিক লার্স ওয়াডেন শো-র প্রযোজক। বাকি দু’জন ওই রিয়েলিটি শো-র কর্মকতা। একটি স্যাটেলাইট ফোন নিয়ে কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন মহম্মদ সফি নামে এক ফরাসি নাগরিক। তাঁকেও এ দিন ফোনটি পুলিশের কাছে জমা দিতে বলা হয়। তিনি তা নিউ মার্কেট থানায় জমা দিয়েছেন। |