ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির চত্বরের দিঘিতে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপগুলির অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ না-থাকায় প্রতি বছরই কয়েকটি করে কচ্ছপের মৃত্যু হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, উদয়পুরের মাতাবাড়ি মন্দিরের (পরিচিতি ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির নামেই) দিঘির তীর কংক্রিট দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়ার পরই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কচ্ছপগুলি ডিম পাড়ার জন্য তীরে উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। তার জন্যই সে গুলির মৃত্যু হচ্ছে। ৩-৪ বছরে গড়ে ৩০-৪০টি করে কচ্ছপের মৃত্যু হয়েছে।
মাতাবাড়ি উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক মাধবচন্দ্র দাস অবশ্য এ কথা মানতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, প্রাকৃতিক কারণেই কচ্ছপগুলি মারা গিয়েছে। শতাব্দী-প্রাচীন মাতাবাড়ির দিঘি সংরক্ষণের জন্য অনেক দিন আগেই তীর বাঁধানো হয়েছে। কিন্তু কচ্ছপগুলির মৃত্যু হচ্ছে ৩-৪ বছর ধরে।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়্যারম্যান মিহির দেব বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জানিয়েছিলেন, মাতাবাড়ির কচ্ছপগুলি এশিয়ার দু’একটি জায়গায় পাওয়া যায়। অসমের শিলচর এবং বাংলাদেশের চট্টগ্রামের দু’টি জলাশয়ে রয়েছে সে গুলি। বিরল প্রজাতির ওই কচ্ছপগুলির ওজন হয় ৩০-৪০ কিলোগ্রাম। বাঁচেও অনেক বছর।”
প্রশাসনের বক্তব্য, বিশেষজ্ঞদের সুপারিশে দিঘির তীরে একদিকের কিছুটা জায়গার কংক্রিট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই প্রজনন-পর্বে কচ্ছপগুলি নিরাপদে উঠে ডিম পাড়তে পারবে। বিধায়ক মাধবচন্দ্র দাস বলেছেন, ‘‘পরীক্ষামূলক ভাবে চালু ওই ব্যবস্থা কার্যকর হলে, আরও কয়েকটি জায়গার কংক্রিট ভেঙে দেওয়া হবে।” পরিবেশপ্রেমী সুনীত সরকারের আশঙ্কা, মাতাবাড়ির দিঘির চারপাশে প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে না-দেওয়া হলে, কচ্ছপগুলিকে বাঁচানো যাবে না।
মিহিরবাবুর বক্তব্য, “পুকুরের চারপাশ কংক্রিটে বাঁধানো হলে বাস্তুতন্ত্র অনুযায়ী জলজ প্রাণীর ক্ষতি হয়। সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে তা জানানো হয়েছে। রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী জলাশয়গুলির তীর বাঁধানোর উদ্যোগেও আপত্তি তোলেন তিনি। মিহিরবাবুর আশঙ্কা, তার জেরে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর ক্ষতি হবে।
রাজ্যের পরিবেশ দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী বিজিতা নাথ জানিয়েছেন, শহরের বড় পুকুরগুলির তীর বাঁধানোর কাজের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। মন্ত্রী বলেন, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কেউ এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেননি। খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’’ মাতাবাড়ির দিঘির জলে দূষণ রুখতেই সেটির চারপাশ কংক্রিটে বাঁধানো হয়েছিল বলে জানান তিনি। পরিবেশমন্ত্রীর আশ্বাস, ‘‘কচ্ছপগুলিকে বাঁচাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা করা হবে।’’ |