কাজের দিনে মিটিং মিছিল না করার জনমত ছিলই। এখন বইমেলার সময়েও শহরে বড় মিটিং-মিছিল না করার আবেদন জানাল মেলার আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড।
রবিবার ছিল বইমেলার শেষ দিন। আর এ দিনই ছিল বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশ। বইমেলার শেষ দিনে দেখা গিয়েছে, মেলায় ভিড় অন্যান্য বারের বইমেলার শেষ দিনে যে রকম ভিড় হয়, তার থেকে কিছুটা কম। এ দিন বিকেলে গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ বার বইমেলা চলাকালীন তিনটে ব্রিগেড সমাবেশ হয়েছে। দেখা গিয়েছে, সভা সমিতির দিনগুলোতে বইমেলার মাঠে ভিড় তুলনামূলক ভাবে কম হয়েছে। রাস্তাঘাটে বাস কমে যাওয়ায় মানুষ মেলায় আসতে পারে না। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আবেদন করছি, পরের বার থেকে বইমেলা চলাকালীন শহরে বড় সমাবেশ বা মিছিল না করলেই ভাল হয়।” সেই সঙ্গে ত্রিদিববাবু জানিয়েছেন, বইমেলার মাঠে রাজনৈতিক দলের প্রচার নিয়ে নানা বিতর্ক হয়েছে। তাই পরের বার বিতর্ক এড়াতে বইমেলা থেকে মাঠে কী কী করা যাবে, আর কী কী করা যাবে না সেই সম্পর্কে কিছু নিয়মাবলী তাঁরা তৈরি করবেন।
মেলার মাঠ জমজমাট হলেও তার আনাচ-কানাচেই দিনভর ছিল বিজয়া দশমীর সুর। শিল্পীরা যেখানে ছবি বিক্রি করছেন, সেখানেই দেখা গেল, এক শিল্পী প্যাকেট খুলে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন আশপাশের শিল্পী ও বিক্রেতাদের। বললেন, “দশ দিন মাঠে একসঙ্গে থাকলাম। অনেকের সঙ্গেই আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে এ ক’দিনে। ফের এক বছরের অপেক্ষা। আজ মন খারাপ করার দিন। তবু মিষ্টিমুখেই ছাড়াছাড়ি হোক।” |
শেষ দিনে বইমেলায় এসেছিলেন অভিনেতা বিশ্বজিৎ। কিছুক্ষণ মেলা চত্বর ঘুরে দেখেন তিনি। সন্ধে নামার মুখে এক দিকে একটি স্টলের সামনে বাউল গান গাইছিলেন শিল্পীরা। ঠিক সেই সময়টাতেই মেলার উত্তরে ফুড কোর্টের কাছে একটা স্টলের পাশে স্যাক্সোফোনের সুরে মাতিয়ে দিচ্ছিলেন কয়েক জন যুবক-যুবতী। অনুষ্ঠান করে গিয়েছেন পুরুলিয়ার ছৌ শিল্পীরাও।
এ সবের মধ্যেই অনর্গল চলছিল গ্রুপ ফোটো তোলা। ছবি তুলেই সটান আপলোড ফেসবুকে। দূরের বন্ধুদের কাছে বইমেলার আনন্দবার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে! ফেসবুক প্রজন্মের ভিড়টাতেই ছিলেন অনিমেষ সরকার নামে এক যুবক। বললেন, “যে সব বন্ধুরা দূরে আছে, তাদের ট্যাগ করে দিচ্ছি বইমেলার ছবি। শেষ দিনের বিদায়বেলার ছবিও দেখাব তাদের।”
সময় ফুরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বেশ কিছু স্টলে দাম কমে যাচ্ছিল বইয়ের। একটি স্টলের সামনে দেখা গেল, বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির উপন্যাস-সমগ্র বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। কোথাও আবার সময় শেষের সঙ্গে দামের ছাড়ও ক্রমশই বাড়ছে। দশ শতাংশ ছাড় বাড়তে বাড়তে কোথাও তিরিশ, কোথাও বা পঞ্চাশ শতাংশ। শুধু বই কেনাকাটাতেই নয়, দাম কমা এবং ছাড় বাড়ার হিড়িক ফুড কোর্টেও। আইসক্রিম থেকে শুরু করে বিরিয়ানি সবেতেই এক ছবি। কুড়ি টাকার আইসক্রিম মিলেছে ১৫ টাকায়। বিরিয়ানির দামও কমেছে কিছুটা। এমনকী একটি বিজ্ঞানের বইয়ের দোকানের সামনে বিভিন্ন ধরনের শক্তিশালী টেলিস্কোপ বিকিয়েছে ছাড় দিয়েই। একটি টেলিস্কোপ দেখিয়ে বিক্রেতা বলতে থাকেন, তা দিয়ে চাঁদের মাটি দেখা যাবে পরিষ্কার। দেখা যাবে বুধ ও মঙ্গল গ্রহও। বইমেলার শেষ দিনে শেষ সুযোগ। তাই খদ্দেরও জুটে গিয়েছে ভালই। ওই বিক্রেতা জানাচ্ছেন, বেশ কয়েকটা টেলিস্কোপ বিক্রি হয়ে গিয়েছে।
শেষ দিনে একটি স্টলের সামনে শেষ বারের মতো ক্যুইজ প্রতিযোগিতাও বাদ যায়নি। ভারতের সর্বোচ্চ পর্বতশিখর কোনটা বলতে পেরেই এক স্কুলছাত্র উপহার পেয়ে গেলেন এক ব্যাগ বই।
রাত ন’টা নাগাদ ঘণ্টাধ্বনিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে সমাপ্তি ঘোষণা করা হল বইমেলার। সেই সঙ্গেই ছিল এ বারের ফোকাল থিম কান্ট্রি পেরুর শিল্পীদের একটি নৃত্যানুষ্ঠানও। গিল্ড জানিয়েছে, পরের বার বইমেলার ফোকাল থিম কান্ট্রি হতে চলেছে কলম্বিয়া। কোনও কারণে কলম্বিয়া না হলে জাপানের কথাও ভাবা হবে। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৫-এ ৩৯তম বইমেলার উদ্বোধন হবে ২৭ জানুয়ারি। মেলা শুরু ২৮ জানুয়ারি। শেষ হবে ৮ ফেব্রুয়ারি। |