গিরিশ পার্ক থেকে মেট্রোয় উঠেছিলেন মানিকতলার সুরঞ্জনা দত্ত। গন্তব্য চাঁদনি চক। রবিবার ব্রিগেড-বইমেলার যুগলবন্দিতে প্রবল ভিড় হবে মেট্রোয়, এমন আশঙ্কা ছিলই। তাই উঠেই ডান দিকের দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। রীতিমতো ঠেলে নামার প্রস্তুতি ছিল। তবু শেষরক্ষা হল না। ভিড় ঠেলে ট্রেন থেকে নামতে পারলেন পার্ক স্ট্রিট পৌঁছে। উল্টো দিকের মেট্রো ধরার আর সাহস পাননি। তার বদলে রাস্তায় উঠে ঘণ্টাখানেক পায়ে হেঁটে পৌঁছেছেন গন্তব্যে। সৌজন্যে রবিবাসরীয় ব্রিগেডে বামফ্রন্টের সমাবেশ।
অন্য রবিবারের মতো এ দিনও মেট্রো চালু হয় সকাল ১০টায়। সমাবেশ ও বইমেলামুখী ঢলে বিভিন্ন স্টেশনে কাতারে কাতারে ভিড় জমে। তখন আধ ঘণ্টা অন্তর ট্রেন। ফলে প্ল্যাটফর্মে ভিড় বিপুল চেহারা নিতে সময় নেয়নি। ১১টা বাজতে না বাজতেই পা রাখা দায় মেট্রোর কামরায়। দমদম থেকে শহরে ঢুকতে ভরসা ছিল মেট্রোই। ফলে শুরুর স্টেশনেই মেট্রোয় ঠাসাঠাসি ভিড়। তার পরে ক্রমশ বেড়েছে তা। বেশির ভাগ স্টেশনেই দুর্ঘটনা এড়াতে এসক্যালেটর বন্ধ ছিল। টোকেনের ভাঁড়ার উপচে পড়ায় খুলে দেওয়া হয় পাঞ্চগেট। |
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গেই ভোগান্তির ছবিটা ভয়াবহ হয়েছে পাতাল পথে। কেউ গন্তব্য পেরিয়ে নেমেছেন অন্য স্টেশনে। ধাক্কায় চোট পেয়েছেন কেউ, কারও ছিঁড়ে গিয়েছে জুতো-জামা। কেউ বা ভিড় দেখে সটান ফিরতি পথে উঠে গিয়েছেন উপরে। বিপুল জনতাকে সামলাতে এসপ্ল্যানেড-সহ কোনও কোনও স্টেশনে মৃদু বলপ্রয়োগ করতে হয়েছে আরপিএফকে।
মাটির উপরের ছবিটাও দুর্ভোগেরই। শিয়ালদহ, হাওড়া স্টেশন, উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম থেকে ব্রিগেডে আসা মিছিল ও গাড়ির চাপে এ দিন বেলা বারোটার পর থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ হয় ধর্মতলা থেকে এক্সাইড মোড়। ব্রিগেডমুখী মিছিলে যান চলাচল থমকে যায় এজেসি বসু রোড, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, জওহরলাল নেহরু রোড, থিয়েটার রোড, এসএন ব্যানার্জি রোড, আশুতোষ মুখার্জি রোড, মেয়ো রোড-সহ দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতার বিভিন্ন রাস্তা। বাসমালিকদের দাবি, এমনিতেই রবিবার এখন লাভ হয় না বলে বাস রাস্তায় অন্য দিনের তুলনায় অনেকটাই কম। তার উপরে ব্রিগেড সমাবেশের জন্য যানজটের আশঙ্কায় দুপুরের পর থেকে কলকাতার রাস্তায় বাস-ট্যাক্সি কার্যত উধাও। |
তবে এমনিতে এ দিন নিত্যযাত্রীর ভিড় ছিল কম। কিন্তু যাঁরা বাড়ি থেকে দুপুরে বেরিয়েছেন, তাঁদের প্রবল দুর্ভোগ হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, স্ট্র্যান্ড রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে, গোষ্ঠ পাল সরণির দু’ধারে মিছিলের গাড়ি পার্কিং ও মিছিলের জেরে যানজট হয়েছিল। গাড়ি পার করতে বেগ পেতে ট্রাফিক পুলিশের কর্মীদের। পুলিশের হিসেবে, বাস ও অন্যান্য মিলিয়ে ৫ হাজারেরও বেশি গাড়ি ছিল ব্রিগেডমুখী। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করেন, “৩০ জানুয়ারি তৃণমূলের সমাবেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জেলা ও কলকাতা মিলিয়ে বাস নেওয়া হয়েছিল ব্রিগেডের জন্য। এত বাস ব্রিগেডে যাবে, তা কিন্তু সাত দিন আগেও ভাবা যায়নি।” তবে লালবাজার সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বেলা বারোটা পর্যন্ত শহর যানজটের কবলে পড়েনি। পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু বারোটার পর থেকে শিয়ালদহ স্টেশন এবং উত্তর কলকাতা থেকে আসা বিরাট মিছিল আছড়ে পড়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-সহ ধর্মতলামুখী রাস্তাগুলিতে। ফলে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো শহরের অন্য সব অংশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কলকাতার প্রাণকেন্দ্র। একই অবস্থা হয় আশুতোষ মুখার্জি, ডিএল খান, ডায়মন্ড হারবার রোডেরও।
কলকাতা পুলিশের এক ট্রাফিক কর্তা বলেন, “৩০ তারিখে ধর্মতলায় তবুও যান চলাচল চালু রাখতে পেরেছিলাম। আজ বারোটা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধর্মতলা দিয়ে কোনও গাড়ি চলাচল করতে পারেনি মিছিলের কারণে। ভাগ্যিস রবিবার ছিল। না হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেত!” |