গড়িয়ার বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে শনিবার উদ্ধার হওয়া মা ও মেয়ের দেহের ময়না-তদন্ত রিপোর্ট রবিবার রাতেও হাতে পেল না পুলিশ। দু’টি দেহ এতটাই পচেগলে গিয়েছে যে, রিপোর্ট দিতে কিছুটা দেরি হবে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন অটোপ্সি-সার্জন। তবে মিতা চক্রবর্তী ও তাঁর মেয়ে মেহুলি আত্মহত্যা করেছেন ধরে নিয়েই তদন্তে এগোচ্ছে পুলিশ। কিন্তু কেন তাঁরা দু’জনেই এই পথ বেছে নিলেন, সে ব্যাপারে মিতাদেবীর দুই বোনের সঙ্গে কথা বলবেন তদন্তকারীরা। এর পাশাপাশি গড়িয়াহাটের যে কলেজে মেহুলি পড়তেন, সোমবার পুলিশ সেখানে গিয়ে তাঁর সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবে।
বোড়াল মেন রোডের আতাবাগানের ওই ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ একটি ডায়েরি উদ্ধার করে। সেই ডায়েরিতে বেশ কিছু টেলিফোন নম্বর লেখা ছিল। এ দিন ওই ডায়েরি দেখেই একটির পর একটি নম্বরে ফোন করছিল পুলিশ। তার থেকেই মিতাদেবীর দুই বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তাঁদের এক জন চন্দননগরে থাকেন। অন্য জন নৈহাটিতে।
দুই বোনের কাছ থেকে পুলিশ জেনেছে, রবিবার সকালে সংবাদপত্র থেকেই মিতাদেবী ও তাঁর মেয়ের মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছেন দুই বোন। মিতাদেবীর স্বামী ১২ বছর আগে মারা গিয়েছেন বলে তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন।
দুই বোনের সঙ্গেই দীর্ঘদিন মিতাদেবীর যোগাযোগ ছিল না বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে। ওই দুই মহিলাকে থানায় ডেকে পাঠানো হলেও রবিবার রাত পর্যন্ত তাঁরা কেউ থানায় এসে যোগাযোগ করেননি বলে দাবি করেছে পুলিশ।
মা-মেয়ের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন এ ভাবে আত্মহত্যা বলে ধরে নিচ্ছে পুলিশ?
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার আতাবাগানের তিনতলার ফ্ল্যাট থেকে মিতা চক্রবর্তী (৫৩) এবং তাঁর মেয়ে মেহুলি চক্রবর্তীর (২২) মৃতদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি একটি সুইসাইড নোট এবং একটি কাচের গ্লাস উদ্ধার করা হয়েছিল। ওই গ্লাসে সাদা রঙের একটি তরল মিলেছে। সেটি কোনও বিষ বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। ওই তরলটি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্যও পাঠানো হয়েছে।
ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেতে কত দিন লাগবে?
কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ সাবার্বান) সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, “দেহগুলি একেবারে পচেগলে গিয়েছে। তাই ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেতে দিন কয়েক সময় লাগবে।”
শনিবার মা-মেয়ের দেহ উদ্ধারের ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন লালবাজারের হোমিসাইড শাখার অফিসারেরাও। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, মৃতদেহ দু’টিতে যে ভাবে পচন ধরেছিল, তা থেকে মনে করা হচ্ছে, অন্তত তিন দিন আগে মিতাদেবী ও তাঁর মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। সুইসাইড নোট উদ্ধারের পাশাপাশি আত্মহত্যার কারণ নিয়ে কিছু সূত্রও পেয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, মেহুলি দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির কঠিন অসুখে ভুগছিলেন। মেয়ের অসুস্থতা এবং আর্থিক সঙ্কট নিয়ে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন মা-ও। |