গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র একটা আছে ঠিকই, তবে রাতবিরেতে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে ৩০ কিলোমিটার দূরের কালনা মহকুমা হাসপাতালে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এক দশক আগে শিশু শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি হলেও নিজস্ব ভবন নেই। ফলে স্কুল বসে গ্রামেরই এক ঠাকুরঘরে। এছাড়া পাকা রাস্তা, নিকাশি সবদিক দিয়েই বেহাল দশা পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নাদনঘাট পঞ্চায়েতের ন’পাড়া গ্রামের। অথচ এ গ্রামেরই ছেলে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। শনিবার একটি জলপ্রকল্পের উদ্বোধনে গ্রামেও এসেছিলেন তিনি। তখনই ঘরের ছেলেকে নাগালে পেয়ে নানা সমস্যার কথা জানান গ্রামবাসীরা।
হাজার চারেক বাসিন্দার ন’পাড়ায় মূল সমস্যা পানীয় জল। গ্রামবাসীরা জানান, নলকূপ যা রয়েছে তা যথেষ্ট নয়। তাছাড়া গ্রীষ্মে জলস্তর নেমে যাওয়ায় জল পাওয়ায় মুশকিল হয়ে পড়ে। আর বর্ষায় নলকূপ ডুবে নানা রোগের প্রকোপ দেখা যায়। বহু বছর ধরেই গ্রামবাসীরা তাই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের প্রকল্প গড়ার দাবি তুলেছিলেন। সেকথা সুব্রতবাবুকে জানান এলাকার আরেক মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। ঠিক হয় ১ কোটি ৮৯ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হবে। ন’পাড়া ছাড়াও মালগড়িয়া, সাহাজাদপুরের বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। শনিবার ওই প্রকল্পেরই উদ্বোধনে এসেছিলেন সুব্রতবাবু। তিনি বলেন, “আমার চোদ্দ পুরুষের ভিটে এই গ্রামে। শৈশবও কেটেছে এখানেই।” |
এ দিন মঞ্চ থেকে নেমেই হেঁটে গ্রামের সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে যান সুব্রতবাবু। সেখানে পুজো দিয়ে যান ভিটেতে। মাটির দেওয়ালে লম্বা ফাটল, কড়ি-বর্গায় ঘুন ধরেছে সে বাড়ির। স্থানীয়রা জানান, মন্ত্রীর জেঠতুতো দাদা অমিয় মুখোপাধ্যায় ওই বাড়িতে থাকেন। বাড়িতে ঢুকে বেশ কিছুক্ষণ দাদার সঙ্গে খোসগল্প করেন সুব্রতবাবু। পরে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে ও মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের সঙ্গে গ্রামের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন। আলোচনার মাঝে রঙচটা কাপে লিকার চায়েও চুমুক দেন। পরে ছেলেবেলার পড়ার ঘর, বকুলগাছ, পুকুর দেখতে দেখতে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন মন্ত্রী। গ্রামের পুরনো পরিচিতেরা এসে কথা বলতে শুরু করেন মন্ত্রীর সঙ্গে। অমিয়বাবু জানান, গ্রামের জলের সমস্যা মিটতে চলেছে। ভাইকে স্থায়ী চিকিৎসক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের কথাও বলেছি। আরেক বাসিন্দা অসীম বাগ বলেন, “দশ বছরের বেশি ধরে গ্রামে একটা শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু পাকা ঘর নেই। ছেলেমেয়েরা বাধ্য হয়ে ঠাকুরঘরে পড়াশোনা করে। তবে গ্রামের ছেলে গ্রামের দিকে নজর দিয়েছে। আশা করি সমস্যা মিটবে।” স্বপন দেবনাথ বলেন, “গ্রামে দাদার শুধু ভিটেই নয়, সাত-আট বিঘে জমিও রয়েছে। ওই জমিতে মানুষের উন্নয়ন হয় এমন কিছু করতে বলেছেন সুব্রতদা। আমরাও সেই মতো কাজ করার চেষ্টা করছি।”
বিকেল পাঁচটা নাগাদ কলকাতার দিকে রওনা দেয় সুব্রতবাবুর কনভয়। তখনও গাড়ির চারপাশে ভিড় করে নানা আবদার, প্রয়োজনের কথা জানাতে থাকেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের আশা, এ বার হয়তো উন্নয়নের শিকে ছিঁড়বে। |