|
|
|
|
সিনেমা করবে, বাপের তেলকল আছে? |
ঋত্বিক ঘটক এই প্রশ্ন করেছিলেন তাঁকে। আগামী কাল সত্তরতম জন্মদিন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত-র।
অকপট তিনি। মুখ খুললেন সত্যজিৎ-মৃণাল প্রসঙ্গেও। শুনলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত। |
আপনাকে ট্রেডমিলে দেখলে কেউ বলবে না কাল আপনি ৭০-এ পড়ছেন। বয়সজনিত কোনও
রোগ-টোগ আছে?
(হাসি) রোজ যোগব্যায়াম করি। তবে পৃথিবীর হেন রোগ নেই যা আমার নেই। সুগার, হাই প্রেশার, গ্লুকোমা... তারা তাদের মতো থাকে। আমি আমার মতো থাকি।
ফিরে দেখলে কেমন লাগে?
যখন আমার ২০, তখন বছর ৫৫-র এক লোকের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে থানা পুলিশ হয়। লক আপে এক পকেটমারের সঙ্গে আলাপ। ঠিক করি ছাড়া পেয়ে দু’জনে মিলে ওই বয়স্ক লোকটাকে মেরেই ফেলব! পরে সেই পকেটমার আমার বাড়িতে এসেছিল আমাকে নিয়ে খুন করতে যাবে বলে। কিন্তু তত দিনে মানুষটার বয়সের কথা ভেবে আমি তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছি। পরে আমার যখন ৫৫, তখন মনে হয়েছিল এটা কোনও বয়সই নয়। ৭০-য়েও তাই মনে হবে।
কখনও নিজেকে প্রশ্ন করেন ‘কেন যে এমন করেছিলাম’?
হ্যাঁ। আমার ‘গৃহযুদ্ধ’ যখন ভেনিসে গিয়েছিল, তখন মানিকদার ধারণা ছিল ছবিটা ওখানে মেন অ্যাওয়ার্ডটা পাবে। কিন্তু তা হয়নি। এমনকী জাতীয় পুরস্কারও পায়নি। সে খবর পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে একা একা বহু দূর হেঁটেছিলাম। দেশে-বিদেশে এত পুরস্কৃত হয়ে, আজ ভাবি কেন এতটা মন খারাপ হয়েছিল? অ্যাওয়ার্ড তো কেউ মনে রাখে না। মানুষ ছবিকে মনে রাখে।
ছিদ্রান্বেষীরা এই উন্নাসিকতা শুনলে এটাকে অজুহাত বলবেন। কারণ তাঁরা বলবেন, ‘উত্তরা’র পরে আপনার ছবিগুলো বার্লিন, ভেনিস-এ সে ভাবে কোনও বড় অ্যাওয়ার্ড পায়নি...
পুরস্কারটা আর আমার কাছে কোনও ব্যাপার নয়। কে কী বলছে সেটার ওপর আমার নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে ভাল কাজ করার আকাঙ্ক্ষাটা ক্রমশ বাড়ছে। নিজেকে তাজা রাখার ইচ্ছেটাও। একটা কবিতার বই লিখলাম। স্ক্রিপ্ট লিখছি এক ফোটোগ্রাফারকে নিয়ে। যে অন্যের ছবি তো তোলেই, আবার নিজেরও।
‘উত্তরা’র পরে ‘জানালা’ও বিদেশে পুরস্কৃত হয়েছে। সিনেমার পুরস্কার তো অনেক হল। মনে হয় না সরকারি খেতাব কেন পাননি?
খেতাবের জন্য দরকার হয়, যে দল সরকার চালাচ্ছে সেই দলের প্রতি সহমমির্র্তা। আমি কোনও দিন কোনও রঙের বাঘের পিঠে চাপিনি।
সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক নিয়ে নানা চর্চা হয়েছে...
জানি। বিজয়া রায় তো লিখেছিলেন যে, আমি নাকি মানিকদার হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী। আসলে আমি চিরকালই খুব প্রাইভেট মানুষ। যেটুকু গিয়েছি সেটুকু মানিকদার কাছেই। ‘দূরত্ব’ ছবিটা তৈরির পর মানিকদাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘বার্লিন ছাড়াও অনেক ফেস্টিভ্যাল চাইছে ছবিটা, কী করব?’ উনি বলেছিলেন, ‘বার্লিন ইজ বার্লিন। ওখানেই দাও।’ মানিকদার মতো সুন্দর মানুষ হয় না। স্পষ্ট কথা স্পষ্ট ভাবে বলতেন উনি। আর দারুণ ডিগনিফায়েড। ‘ফেরা’ যখন বার্লিনে গিয়েছে, মানিকদা কী খুশি। আমাকে বলেছিলেন, ‘বুদ্ধদেব, ভুলো না ফিল্মে স্ক্রিন প্রেজেন্স বলে একটা কথা আছে। খুব ভাল অভিনেতার যদি সেটা না থাকে, তবে সব এফর্ট ব্যর্থ।’ এই কথাটা আজও কাস্টিংয়ের সময় মনে রাখি। যদিও শেষের দিকে যোগাযোগটা কমে গিয়েছিল। ‘ঘরে বাইরে’ দেখার পরে ওঁর বাড়িতে গিয়েছিলাম। উনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘দেখেছ?’ আমি বলেছিলাম, ‘হ্যাঁ।’ উনি আর জিজ্ঞেস করেননি। পরে এক জায়গায় লিখেছিলাম ‘আই ডোন্ট মিস এনিথিং ইফ আই ডোন্ট ভিজিট দিজ ফিল্মস।’ ‘দিজ ফিল্মস’ বলতে ‘ঘরে বাইরে’, ‘গণশত্রু’, ‘আগন্তুক’। সেই লেখা পড়ে উনি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। যে মানুষটা ভারতীয় চলচ্চিত্রের খোলনলচে পাল্টে দিয়েছিলেন তাঁর কাছে আমি আরও বেশি আশা করেছিলাম।
‘ঘরে বাইরে’ পরিচালনার কোনও সুপ্ত ইচ্ছে আছে আপনার?
না, সেটা নেই।
আজ কি আপনার মত পাল্টেছে?
কিছু নিয়েই অনুশোচনা নেই। আরও একটু বেশি করে বলতেও বাধবে না। যখন বলেছিলাম, তখন নৈকট্যের ওম-টা শরীর স্পর্শ করার মতোই দূরত্বে ছিল। মানিকদার বহু ছবি আজও আমাকে গভীর ভাবে টানে। এগুলো নয়। প্রত্যেক শিল্পীর জীবনে একটা সময় আসে যখন তাঁর থামা দরকার। কেন একজন শিল্পীকে কথা দিয়ে তার কাজকে ডিফেন্ড করতে হবে? আমি যেন নিজেই বুঝতে পারি কখন আমাকে থামতে হবে। একবার বার্লিনে কিসলোস্কি বলেছিল যে, ও আর সিনেমা করতে চায় না কারণ ও জানে এর পর করলে ভুল করবে!
কিছু দর্শক বলেন যে, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর গোল্ডেন পিরিয়ডটা ‘উত্তরা’তে শেষ হয়েছে...
মানি না সে কথা। ‘উত্তরা’র পরেও ‘কালপুরুষ’ বানিয়েছি। দেশে-বিদেশে অনেকেই বলেন এটাই আমার গোল্ডেন পিরিয়ড। আমার রিসেন্ট সিনেমায় যে ভাবে ‘ম্যাজিক রিয়্যালিজম’ এসেছে তা ‘গৃহযুদ্ধ’, ‘নিম অন্নপূর্ণা’তে ছিল না।
কখনও কি বিজয়া রায়-য়ের সেই স্টেটমেন্ট আপনাকে হন্ট করে?
না, কোনও কথা তখনই হন্ট করে, যখন তুমি বিশ্বাস করো যে তুমি তার সঙ্গে জড়িয়ে। আমি জানি ওই প্রশ্নের সঙ্গে আমি জড়িয়ে ছিলাম না। মানিকদা ভাল হয়ে উঠেছিলেন। আমাদের দেখাও হয়েছিল। হাসি-ঠাট্টাও।
আপনি সমালোচনা নিতে পারেন?
আক্রোশ থেকে নয়, যে সমালোচনা শুধরে দেওয়ার জন্য বলা, তা নিশ্চয়ই নিতে পারি। লোকোর্নো-তে ‘দূরত্ব’-র প্রেস কনফারেন্সে কুকুর নিয়ে এক ভদ্রলোক আমায় এসে বলেছিলেন যে আগাগোড়াই আমার ছবিটি ভুল। জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কেন সেখানে এসেছি! লোকটা থামার পর ওঁর কুকুরটাও ভৌ ভৌ করতে থাকে! আমি হেসে বলেছিলাম পরের বার হয়তো এমন সিনেমা বানাব, যেটা ওঁর এবং ওঁর কুকুরেরও ভাল লাগবে। এই তো সে দিন লন্ডনে দেখানো হল ‘আনোয়ার কা অজব কিস্সা’। তিনটে শো হাউসফুল। কিন্তু প্রত্যেক শো-য়ের মাঝখানে দেখি কিছু লোক উঠে যাচ্ছে। কানে আসে চেয়ারের ফরফর করা শব্দ। বুঝলাম কিছু মানুষের চাওয়া আর আমার দেওয়ার মধ্যে একটা মিসম্যাচ হয়েছে। কান-য়েও দেখেছিলাম গোদার-য়ের জন্য ২৫০০ দর্শকের সংখ্যা ৫০০-তে নেমে আসতে। তখন থেকেই চেয়ারের ওই ফরফর আওয়াজটা দুঃস্বপ্নেও ফিরে এসেছে। যে কোনও পরিচালকের জীবনের রুথলেস ক্রাইসিস হল যখন দর্শক তাঁকে পরিত্যাগ করে।
উত্তমকুমার না সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুপ্রিয়া দেবী না সুচিত্রা সেন অভিনেতা হিসেবে কাকে এগিয়ে রাখবেন?
অভিনয়ের দিক থেকে অবশ্যই সৌমিত্র। একজন পরিচালক সৌমিত্রকে যে ভাবে ভাঙতে পারেন, উত্তমকুমারকে সেটা করা যায়নি। অভিনেত্রী হিসেবে সুপ্রিয়া অসামান্য। সুচিত্রার থেকে এগিয়ে।
কিন্তু এই চার জনের সঙ্গে কোনও দিন কাজ করেননি কেন?
সৌমিত্রকে ‘লাল দরজা’র সময় ভেবেছিলাম। ডেট ম্যাচ করেনি। ছবি করতে শুরু করার কিছু বছর পরেই উত্তমকুমার মারা যান। কোনও দিন মনে হয়নি সুচিত্রা সেনের সঙ্গে কাজ করব। জানতাম উনি যে পরিবেশ চাইতেন কাজ করার জন্য, আমি সেটা ওঁকে দিতে পারব না। তবে আজও ইচ্ছে আছে সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে কাজ করার। মাধবীও দারুণ। ওঁর সঙ্গে আমি কাজ করতে চাই।
পরিচালকরাও তো অনেকেই নায়িকাদের প্রেমে পড়তেন। আপনি?
আমাদের অল্প বয়সে তো দেখেছি সব পরিচালকই অবধারিত ভাবে মাধবীর প্রেমে পড়তেন। (হেসে) তবে নায়িকাদের সঙ্গে প্রেমে পড়ার বাতিক আমার কখনওই ছিল না। |
|
নিজের বাড়িতে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। পিছনে ‘তাহাদের কথা’
দেখার পর ধর্মনারায়ণ দাশগুপ্তর আঁকা ছবি।
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল। |
মৃণাল সেনের সঙ্গে আপনার সম্পর্কটাও তো বেশ টালমাটাল ছিল...
একটা সময় দিনের পর দিন আড্ডা দিয়েছি। উনি অত্যন্ত সহজে বন্ধু হতে পারেন। বৌদির মতো অসামান্য নারী আমি খুব কম দেখেছি। তবে একটা ব্যাপার আমাকে দুঃখ দিয়েছিল। ভেনিসে যখন ‘উত্তরা’র জন্য বেস্ট ডিরেক্টর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলাম, ওঁর তো খুশি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু খবরটা শুনে বাড়িতে ফোন করে আমার স্ত্রী পর্ণাকে বলেছিলেন এটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট কোনও পুরস্কার নয়। এই বলাটার মধ্যে কোথাও একটা আনডিগনিফায়েড ব্যাপার রয়েছে।
আপনি তো বললেন পুরস্কারটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। হয়তো সেটাই উনি মনে করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন...
মনে করিয়ে দেওয়ার ভাষা অন্য রকম। তোমার আনন্দে তোমাকে সতর্ক করে দিতে চাই যে আরও বড় আনন্দের জন্য প্রস্তুত হও তার ভাষা এ রকম! আর তোমার আনন্দ আমাকে স্পর্শ করে না তার ভাষা আলাদা।
আর ঋত্বিক ঘটক?
প্রথম বার ওঁর সঙ্গে যখন দেখা হয়, তখন উনি লুঙ্গি পরে খালি গায়ে বসে। কোলে ছোট মেয়ে। বিড়ি খাচ্ছেন। খুব যে বেশি ইমপ্রেসড্ হয়েছিলাম তা নয়। আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে পারবে? বৃষ্টি ভিজতে পারবে?...’ আমি শুধু বলেছিলাম ‘হ্যাঁ, পারব।’ উনি বলেছিলেন, ‘সিনেমা করবে? বাপের তেলকল আছে? বাপ করে কী?’ আমি বলেছিলাম, ‘ডাক্তার।’ তার উত্তরে উনি বলেন, ‘ডাক্তার-ফাক্তারে হবে না... যাও।’ ‘সুবর্ণরেখা’র একটা গল্প মনে আছে। ছবিটির স্ক্রিনিংয়ে গিয়েছি। শেষে আমি দেখি ঋত্বিক ঘটক স্ক্রিনের তলায় শুয়ে। বলেছিলেন, ‘এই ছবি ঢ্যাঙা করতে পারবে?’ ‘ঢ্যাঙা’ অর্থাৎ মানিকদা!
আপনার অভিনেতারা বলেন আপনি নাকি এমন ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল চেয়ে বসেন, যা এর আগে কেউ ব্যবহার করেননি। ‘ফেরা’-তে মাঝরাতে সুনীল মুখোপাধ্যায়কে মগডালে চড়িয়ে রেখেছিলেন। ওঁকে এ দিকে পিঁপড়ে কামড়ে ফুলিয়ে দিচ্ছে, আর আপনি শট ঠিক করতে পারছেন না!
(হাসি) সুনীলকে গাছে আগেই তুলে মইটাও কেড়ে নিয়েছিলাম। আসলে যা চাইছি তা না হলে ‘ওকে’ বলি না।
একবার নাকি অঞ্জন দত্তকে ঘোড়ার শট নেবেন বলে একটা খচ্চরের পিঠে চাপিয়ে দিয়ে বলেছিলেন লো অ্যাঙ্গেল থেকে নিলে মনে হবে উনি ডায়নোসরের পিঠে চেপেছেন!
ঘোড়ার বদলে ভুল করে খচ্চর এনে ফেলেছিল ইউনিটের লোকেরা। তবে ডায়নোসরটা বলিনি। ‘তাহাদের কথা’-তে মিঠুনের পিছনে ইঁট নিয়ে ছুটেছিলাম আমি। সাংসদ হওয়ার পরে মিঠুন ফোন করেছিল। ওকে শুধু বললাম, যাই করো নিজেকে হারিয়ে ফেলো না।
কখনও ভেবেছেন সেটে যাঁদের বকাবকি করেন, তাঁরাও তো এখন বেশ প্রতিষ্ঠিত...
ছবির ভালর জন্যই বকাবকি করি। তবে অভিনেতাদেরও দোষ দেব না। আমি তো পুরো স্ক্রিপ্ট লিখে নিয়ে যাই না। যেটা চাই, সেটা আমার মাথায় থাকে।
কবিতা না সিনেমা কোনটা আপনার বেশি পছন্দের?
কবিতা থেকে ধাক্কা খেয়ে সিনেমায় চলে আসি। আবার সিনেমা থেকে ধাক্কা খেয়ে কবিতায়। সেটা তো হয় জীবনে। আমরা ছিলাম চার কবি বন্ধু ভাস্কর (চক্রবর্তী), সুব্রত (চক্রবর্তী) আর শামসের আনওয়ার। সুনীলদা/ শক্তিদার সঙ্গে স্মৃতিগুলো মনে পড়ে। পাঁচ/ছ’পেগ খেলে সুনীলদার গলায় গান ভরে উঠত। খালাসিটোলা থেকে একদিন বেরিয়েছি আমি আর শক্তিদা। কলকাতায় তখন ঘুটঘুটে নৈঃশব্দ। শক্তিদা আর আমি হেঁটে যাচ্ছি। বারবার পথরোধ করে দাঁড়াচ্ছে পূণির্মার চাঁদ। শক্তিদা উদার গলায় গাইছেন, ‘চোখের জলে লাগল জোয়ার’। এখনও মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দেয়।
আপনার স্ত্রী চলে গিয়েছেন ২০০৯-য়ে। এখন একাকীত্ব কাটান কী ভাবে?
মহীয়সী নারী ছিলেন পণার্। তাঁর সঙ্গে অনেক বছর থাকাটা আমাকে দিয়েছেও অনেক কিছু। ১৮ মাস যে উনি অসুস্থ ছিলেন, আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম তাঁকে সুস্থ করতে। কিন্তু পারিনি। না পারার সে গ্লানি আমাকে ম্লান করে রেখেছিল অনেক দিন। একা থাকতে কোনও দিন খারাপ বাসিনি। আমার দুই মেয়ে দুই ফুসফুসের মতো। ওদের নিয়েই আমার পূর্ণতা।
আর সোহিনী দাশগুপ্ত?
সোহিনী হল আমার বেঁচে থাকা।
মৃত্যুভয় হয়?
না। মৃত্যুর পরে আমাকে নিয়ে কে কী বলবে, তা জানতে চাই না। কারণ, আমি জানি কিছুই থাকে না। আজ মনে হয় বলি:
‘এসো, এ বার সময় জুড়ে দাঁড়াও
এসো, কাছের বাতাস জুড়ে দাঁড়াও
এসো, মেঘের আঁধার জুড়ে দাঁড়াও
এসো, গোপন ঘুমের মধ্যে দাঁড়াও-
জীবন ফিরে ভাবুক এক বার।
একটা জীবন এইটুকুনি, সত্যি?
ফুরিয়ে কি যায় এতই একরত্তি?
শুরু করা তো যেখানে খুশি যায়-
মানুষ কই, মুখোশে ঘর ভর্তি।
শুধু, তোমার চোখে আকাশ আঁকা থাকে
নখের মধ্যে গভীর এক মায়া
শব্দগুলো নৈঃশব্দ ছুঁয়ে
বলতে থাকে কথারও আছে ছায়া
সময় বলে সময় জুড়ে দাঁড়াও
আঁধার বলে আঁধার জুড়ে থাকো
কেউ বলছে ঘুমের খুব গভীরে এসে দাঁড়াও-
জীবন ফিরে ভাবুক এক বার।’ |
|
|
|
|
|