আরও ভাঙবে বামফ্রন্ট, তোপ দাগলেন মুকুল
রাজ্যসভা ভোটে যে তিন জন বাম বিধায়ক তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দিয়েছিলেন, রাতারাতিই তাঁরা যোগ দিলেন তৃণমূলে। ফরওয়ার্ড ব্লকের সুনীল মণ্ডল এবং আরএসপি-র দশরথ তিরকে ও অনন্তদেব অধিকারী শনিবার তৃণমূল ভবনে শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে দলবদল করেছেন। এর পরে বিধানসভা কক্ষে ওই তিন বিধায়ক কী ভূমিকা নেবেন, তা দেখে নিয়েই তাঁদের ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে চায় বাম শিবির।
রাজ্যসভা ভোটে তিন বাম বিধায়কের তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার পিছনে টাকার খেলা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাম এবং কংগ্রেস শিবিরের অভিযোগ, তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিধায়ক কেনাবেচা আমদানি করেছে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এই প্রসঙ্গে শুক্রবার একটি সভায় বলেছিলেন, “মানুষ তো বিক্রি হয় না। গরু-ছাগল বিক্রি হয়!” বিরোধীদের ওই অভিযোগ এবং সূর্যবাবুর ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এ দিন পাল্টা আক্রমণ করেছেন মুকুলবাবু। তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূল একটা স্বচ্ছ দল। এ ধরনের মন্তব্য বাংলার লজ্জা! সূর্যবাবু নিজেকে মানুষ ভাবতে পারেন। কিন্তু অন্যকে গরু-ছাগল ভাবার অধিকার তাঁর নেই।” পঞ্চায়েত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও এ দিন পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নাদনঘাট পঞ্চায়েতের ন’পাড়া গ্রামে জল প্রকল্প উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেন, “আমরা ঘোড়া কেনাবেচায় থাকি না। যাঁরা এই অভিযোগ করছেন, তাঁরাই এই কাজ করেন।”
সাংবাদিক বৈঠকে মুকুল রায়। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
মুকুলবাবুর দাবি, “সিপিএম এবং বামপন্থী আন্দোলন যে ভাবে চলছে, যে রকম নীতিহীনতায় ভুগছে, তাতে বহু মানুষই পাঁচিলের উপর বসে আছেন। বহু বাম বিধায়ক তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।” লোকসভার ভোটে বাম শিবিরে আরও ভাঙন ধরবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে মুকুলবাবুর মন্তব্য, “আগে নিজের দল সামলান! পরে অন্যকে বলবেন।” সিপিএম তথা বাম নেতৃত্ব আদর্শচ্যুত হয়েছেন বলেই বাম বিধায়কেরা দল বদলেছেন বলে তৃণমূল নেত্রীর সুরেই এ দিন দাবি করেছেন মুকুলবাবু। যার প্রেক্ষিতে ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ এ দিন বলেছেন, “খুবই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেল রাজ্যসভা ভোটে! বাঙালি জাতির লজ্জা এটা!” ফ ব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জয়ন্ত রায় মন্তব্য করেছেন, “আগুন নিয়ে খেলা শুরু করেছেন তৃণমূল নেত্রী! আমরা যদি বেঁচে থাকি, তা হলে দেখে যাব ওই আগুনেই ওঁদের পুড়ে খাক হতে হচ্ছে!”
আর্দশ বা নীতিগত প্রশ্নে দল বদলালে তিন বিধায়ক কেন পদত্যাগ করে তৃণমূলকে ভোট দিতে গেলেন না, প্রশ্ন তুলেছেন বাম নেতৃত্ব। মুকুলবাবু অবশ্য এ দিন জানিয়েছেন, তিন বিধায়ক সময়মতো বিধায়ক পদে ইস্তফা দেবেন। সে ব্যাপারে দলই সিদ্ধান্ত নেবে। তিন বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বাম নেতৃত্ব এর পরে বিধানসভার কক্ষে তাঁদের উপরে দলের নির্দেশ প্রয়োগ করে পরীক্ষা করতে পারবেন। বিধানসভার স্পিকারকে চিঠি দিয়ে বিধায়ক-পদ খারিজের আর্জি জানানোর সুযোগও থাকবে। এই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ফ ব বিধায়ক উদয়ন গুহ এ দিন বলেন, “সোমবারই অধিবেশন শুরু হবে। ওই বিধায়কেরা কোথায় বসেন, দেখতে চাই! সেইমতো স্পিকারকে আবেদন জানাতে পারব।” কংগ্রেস ছেড়ে বিধায়ক সৌমিত্র খান তৃণমূলে যোগ দেওয়ার মাসদুয়েক পরেও তাঁকে নিয়ে যে বিধানসভায় সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন উদয়নবাবুরা।
কংগ্রেসের দুই বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস এবং সুশীল রায় শুক্রবার রাজ্যসভার ভোটে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিলেন। তাঁরাও দু’-এক দিনের মধ্যেই তৃণমূলে যোগ দেবেন বলে মুকুলবাবু জানান। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা প্রয়াত সিপিআই সাংসদ নারায়ণ চৌবের পুত্রবধূ হেমা চৌবেও এ দিন তৃণমূলে ফিরেছেন। হেমার বক্তব্য, “আমি আগে তৃণমূলেই ছিলাম।
তবে নির্দিষ্ট এক জনের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে বসে যাই। পরে কংগ্রেসে যোগ দিই। কিন্তু মন পড়েছিল তৃণমূলেই। তাই তৃণমূল নেতৃত্ব যখন একটা সুযোগ দিলেন, তখন আর অন্য কিছু ভাবিনি।” যাঁর সঙ্গে বিরোধের জেরে হেমা তৃণমূল ছেড়েছিলেন, তৃণমূলের সেই খড়্গপুর শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর বক্তব্য, “কঠিন সময়ে অনেকে দল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। এখন সুদিনে অনেকেই ফিরে আসছেন। এটাও তেমনই একটা ঘটনা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.