|
|
|
|
সিবিআই তদন্ত ডেকে এনে দলের তোপে ভিএস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ৮ ফেব্রুয়ারি
|
নেতাইয়ের ভুল স্বীকার করে পশ্চিমবঙ্গে দলকে বিড়ম্বনায় ফেলেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আর কেরলে ভি এস অচ্যুতানন্দন দলকে রীতিমতো বিপাকে ফেলে দিয়েছেন, টি এস চন্দ্রশেখরন হত্যা নিয়ে একটি চিঠি লিখে। যে চিঠিকে অস্ত্র করে কেরলের ইউডিএফ সরকার ওই হত্যা মামলার সিবিআই তদন্তে সম্মতি দিয়েছে।
বুদ্ধবাবুর নেতাই স্বীকারোক্তি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও দলের অন্দরে সকলে তাঁর পাশে দাঁড়াতে পারছেন না। বিষয়টি বিচারাধীন, এই যুক্তি দেখিয়ে এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। কেরলে কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অচ্যুতানন্দনই বিরোধী দলনেতা। তাঁর চিঠি দলকে বিপাকে ফেলায় ফের সিপিএম কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কোপের মুখে পড়েছেন অচ্যুতানন্দন। পলিটব্যুরো আজ তাঁর চিঠিকে খারিজ করে জানিয়েছে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসেবে অচ্যুতানন্দনের এই চিঠি লেখাকে পলিটব্যুরো ভুল পদক্ষেপ বলে মনে করছে। দলের অবস্থানের সঙ্গেও এটি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ জন্য দলের তোপের মুখে পড়েছেন তিনি। চন্দ্রশেখরন খুনের মামলায় কোঝিকোড়ের দায়রা আদালত সিপিএমের তিন নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। কিন্তু জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পি মোহননকে নির্দোষ বলে ছাড় দিয়েছে। যা দেখিয়ে ওই খুনে সিপিএমের নেতাদের হাত থাকার অভিযোগ মিথ্যে বলেই প্রচার করা হচ্ছিল। তাই এ নিয়ে সিবিআই তদন্তেরও প্রয়োজন নেই। কিন্তু অচ্যুতানন্দনের চিঠিই সিবিআই তদন্তের পথ খুলে দেওয়ায় দল পড়েছে অস্বস্তিতে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ চেন্নিথালা আজ বলেছেন, “বিরোধী দলনেতার অনুরোধের অর্থ বিরোধীদেরই অনুরোধ।” অচ্যুতানন্দনের ঘনিষ্ঠরা অবশ্য বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী উমেন চান্ডিকে লেখা চিঠিতে তিনি সরাসরি সিবিআই তদন্তের কথা বলেননি। চন্দ্রশেখরনের স্ত্রী কে কে রেমা সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে তিরুঅনন্তপুরমে অনশনে বসেছিলেন। সেই অনশন তুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন অচ্যুতানন্দন। যদিও সিপিএম নেতাদের যুক্তি, এটা ঘুরিয়ে সিবিআই তদন্তেরই দাবি। অচ্যুতানন্দনের চিঠির পরেই রাজ্য সরকার সিবিআই তদন্তে সম্মতি দেয়। অনশন তুলে নেন রেমা। রেমার অনশনমঞ্চে অচ্যুতানন্দনের যাওয়া নিষিদ্ধ করেছিল রাজ্য কমিটি। কিন্তু তার বদলে তিনি যে এমন পত্রবোমা ফাটাবেন, তা আঁচ করতে পারেননি দলের নেতারা।
প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে দলের রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, “অচ্যুতানন্দনকেই ব্যাখা করতে বলুন, কেন তিনি এমন অবস্থান নিলেন।” অচ্যুতানন্দনের জবাব, “আমি চিঠি লিখেছি। এ বার দল এ নিয়ে আলোচনা করুক।” পিনারাই কালই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে এ বিষয়ে নালিশ করেছিলেন। আজ সকালে দিল্লিতে সিপিএমের সদর দফতরে পলিটব্যুরোর বৈঠক হয়। তার আগে রাজ্য কমিটির কাছেও রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়। বৈঠকের আগে সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট বলেন, “এই মামলায় আদালতের রায় এসে গিয়েছে। আর সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন নেই।” বৈঠকের পরে পলিটব্যুরো বিবৃতি জারি করে অচ্যুতানন্দনের সমালোচনা করে।
রাজ্য নেতৃত্বের আশঙ্কা, সিবিআই তদন্ত হলে দল ফের বিপাকে পড়তে পারে। অচ্যুতানন্দন তাঁর চিঠিতে রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন, চন্দ্রশেরনের খুনের পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন। কারণ টি কে ফৈজ নামে এক সোনা পাচারকারী কোঝিকোড় জেলে মোহনন ও অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে দেখা করেছিল। চন্দ্রশেখরনের স্ত্রী-ও রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন, পিনারাই ও অন্য সিপিএম নেতারা নিয়মিত ভাবে চন্দ্রশেখরনকে খতম করার কথা বলতেন। রেমার বক্তব্য, “সিপিএমের অধিকাংশ কর্মীর মনোভাব কী, তা অচ্যুতানন্দনের কথা থেকেই স্পষ্ট। নেতাদের এই খুনের রাজনীতি দলের সব কর্মী সমর্থন করেন না।”
সন্দেহ নেই দলেরই দুই শীর্ষ নেতার মন্তব্য ও চিঠিতে হিংসার রাজনীতির প্রসঙ্গ নতুন করে সামনে চলে আসায় সিপিএম নেতৃত্ব বিব্রত। নেতাইয়ের ভুল স্বীকারের পর পশ্চিমবঙ্গের একাংশ বাম নেতা মনে করছেন, সিপিএম নেতা-কর্মীরা যে প্রয়োজনে হাতে বন্দুক তুলে নেয়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সেটাই স্বীকার করে নিয়েছেন। ফলে লোকসভা নির্বাচনের আগে নতুন হাতিয়ার পেয়ে গিয়েছে তৃণমূল। একই ভাবে কেরলের রাজ্য নেতারা মনে করছেন, দলের উল্টো অবস্থান নিয়ে চন্দ্রশেখরনের খুনে সিপিএম নেতারা জড়িত থাকতে পারেন, এমন ভাবনা উস্কে দিয়েছেন অচ্যুতানন্দন। |
|
|
|
|
|