|
|
|
|
নিদো-বঞ্চনার অস্ত্রেই ভিড় টানলেন মোদী |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি
৮ ফেব্রুয়ারি
|
এক দিকে দীর্ঘ দিনের বঞ্চনার অভিমান। অন্য দিকে খাস রাজধানীতে গত কয়েক দিনে একাধিক ঘটনাকে ঘিরে ক্ষোভ। এই দু’টো তাসকে এক সঙ্গে খেলে গোটা উত্তর-পূর্বের মন জিততে সক্রিয় হলেন নরেন্দ্র মোদী। জনসভায় দাঁড়িয়ে তাঁর বার্তা, “উত্তর-পূর্ব কংগ্রেসকে ৬০ বছর সময় দিয়েছে। আমাকে আপনারা ৬০ মাস সময় দিন। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি উত্তর-পূর্বকে বদলে দেব।”
আজ মণিপুরে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল জঙ্গি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের ডাকা বন্ধ, মোদী-বয়কট। প্রতিবেশী অসমে ছিল মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র ব্যঙ্গ ও অবজ্ঞা। শেষ পর্যন্ত সভার আকারে-আয়তনে আজকের দিনের শেষ হাসিটা হাসলেন নরেন্দ্র মোদীই। ইম্ফল ও গুয়াহাটি, অন্যতম নজিরবিহীন জনসমাবেশের সাক্ষী থাকল উত্তর-পূর্বের এই দুই শহর। উত্তর-পূর্বের প্রতি ‘কংগ্রেসের অবিচার’ ও ‘অনুন্নয়ন’-এর খতিয়ান তুলে ধরে স্বভাবজ রসিকতাকে হাতিয়ার করে মোদী লোকসভা ভোটের আগে প্রদেশ বিজেপির পালে অনেকটাই হাওয়া টেনে আনলেন। ওক্রাম ইবোবি, তরুণ গগৈ, মনমোহন সিংহ ও গাঁধী পরিবারকে তুলোধোনা করার পাশাপাশি দুই রাজ্যের মানুষের কাছে দিন বদলের স্বার্থে মাত্র ৬০টি মাস সময় চেয়ে নিলেন।
প্রথমে ইম্ফলের লাংজিং আচৌবা মাঠে সভা করেন মোদী। মোদীর সফর বয়কট করে এ দিন রাজ্যে বন্ধ ডেকেছিল ইউনাইটেড রেভেলিউশনারি ফ্রন্ট। রাজ্যের সব মুসলিম সংগঠনও সভা বয়কটের ডাক দেয়। কিন্তু বন্ধের মধ্যেই ইম্ফলের মাঠে জমায়েত লক্ষাধিক! মোদী আসার ঠিক আগেই উখরুলে বিস্ফোরণে এক জওয়ান মারা যান, ৩ জন জখম হন। আর সেই বিস্ফোরণের খবর পেয়েই মোদী বদলে ফেললেন তাঁর রণনীতি। ইম্ফল-গুয়াহাটিতে এনএসজি-র গড়ে দেওয়া বুলেট-নিরোধক পোডিয়ামের ধারে ঘেঁষলেন না মোদী। খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে ‘ভয়কে জয়’ করার বার্তা দিয়ে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে কাঠগড়ায় তুললেন।
বক্তা নয়, বেশিরভাগ সময়ই ‘ক্যুইজ মাস্টার’-এর ভূমিকায় ছিলেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। জমায়েতের কাছে একে একে জানতে চাইলেন, রাজ্যে নাশকতা, দুর্নীতি, দারিদ্রের পিছনে কার ভূমিকা থাকতে পারে? বিজেপি শ্রোতৃমণ্ডলীও তৈরি ছিলেন, উত্তর ‘কংগ্রেস’। মোদীর কটাক্ষ, “আরে, আপনারা সবাই এর উত্তর জানেন! তাও ওদেরই ভোট দেন? কী আশ্চর্য!”
মোদীর মতে, অসম ও মণিপুরে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে। কিন্তু তার ব্যবহার বা শিল্পোন্নয়ন হয়নি। মোদীর কথায়, ‘‘এখানকার শিক্ষিত বেকাররা বরং গুজরাতে আসুন। ওখানে অনেক কাজ। সকলে খেয়েপরে বাঁচবেন।” ২৩ বছর ধরে ‘অসমবাসী’ মনমোহন রাজ্যসভার সাংসদ। ১০ বছর ধরে তিনি প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর আপনঘরে এমন দুর্দশা-দারিদ্র থাকলে দেশের আর কী চাওয়ার থাকে?---প্রশ্ন তুললেন মোদী।
দিল্লিতে অরুণাচলের ছাত্র নিদো টানিয়া হত্যার ঘটনাও ফিরে ফিরে আসে মোদীর বক্তব্যে। কইনাধারায় তরুণ গগৈয়ের বাড়ির ঠিক সামনের মাঠে মোদীর সভা ছিল। গগৈয়ের বাড়ির দিকে ইঙ্গিত করে মোদী বলেন, “যুব সমাজের উন্নতি করতে গেলে কেবল নামে নয়, কাজে ও চিন্তায় তরুণ হতে হবে।”
অসমের চায়ের প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, “সবাই জানেন, চায়ের সঙ্গে আমার ছোটবেলার সম্পর্ক। এই অসম চায়ের পাতা নিংড়েই আমার কর্মজীবন শুরু। সেই অসমকে পৈতৃক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে কংগ্রেস। রাজ্যবাসীর অনুমতি না নিয়ে রাজ্যের জমি বাংলাদেশকে উপহার দিচ্ছেন তরুণ গগৈ, মনমোহন সিংহ।” তাঁর দাবি,“বিজেপি তা হতে দেবে না। রাজীব গাঁধী যে অসম চুক্তি করেছিলেন, তাঁর পরিবার সেই চুক্তি আজও রূপায়িত করেনি। ফলে রাজ্যে ভূমিপুত্রদের চাকরি ও খাবার অনুপ্রবেশকারীরা ভোগ করছে।”
ইতিহাসও ছুঁয়ে গিয়েছেন মোদী। তিনি বলেন, “বল্লভভাই পটেলের সঙ্গে মিলে অসমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈ অসমকে পাকিস্তানের হাতে যাওয়া থেকে রক্ষা করেন। তাঁরা আমার প্রণম্য। তাঁরা রাজনেতা নন, রাষ্ট্রনেতা।” তাঁর কথায়, “কংগ্রেস যতই অবাক হোক আমিই বল্লভভাইয়ের মূর্তি গড়ে তাঁকে সম্মান জানাচ্ছি। কংগ্রেস নয়, বাজপেয়ীজি বরদলৈকে দিয়েছিলেন ভারতরত্ন।” স্থানীয় আবেগ উস্কে দিতে গুয়াহাটির বক্তৃতার শুরুতে মোদী কামাখ্যার আশীর্বাদ চান। ভাষণে শ্রীমন্ত শঙ্করদেব, লাচিত বড়ফুকন, বিষ্ণু রাভা, সতী জয়মতি থেকে ভূপেন হাজরিকার নাম নেন। সভা শুরু ও শেষ করেন, “জয় আই অসম” স্লোগান তুলে।
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেছিলেন, ‘‘মোদীর ম্যাজিক অসমে এলেই চুপসে যাবে।” এক বিজেপি নেতার কথায়,“টইটম্বুর সভাস্থল থেকে যে ভাবে ‘হর হর মোদী, ঘর ঘর মোদী’র স্লোগান উঠেছে তাতে আশা করি গগৈ তাঁর বিদ্রুপের জবাব পেয়ে গিয়েছেন।” |
|
|
|
|
|