মোদীর খাস তালুকে ঢুকে অবশেষে গর্জালেন রাহুল
শেষ পর্যন্ত খোলস ছেড়ে বেরোলেন তিনি। তা-ও আবার একেবারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর খাস তালুকে ঢুকে!
গুজরাতের গির অরণ্যেই বাস এশীয় সিংহের। প্রায়ই যার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর তুলনা করে থাকেন উৎসাহী বিজেপি নেতা-কর্মীরা। সেই গুজরাতে দাঁড়িয়ে রাহুল গাঁধী যে ভাবে তাঁকে ঝাঁঝালো ভাষায় আক্রমণ করলেন, তার পরে অনেকেই বলছেন, এ যেন সিংহের ডেরায় ঢুকে বাঘের গর্জন!
লোকসভার ভোট প্রচারে নেমে এই প্রথম বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে তীব্র আক্রমণ করলেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। কলকাতায় গিয়ে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী দেখিয়েছিলেন তিন লাড্ডু। আর গুজরাতে এসে রাহুল দাগলেন তিন তোপ। এক, মোদী ও সঙ্ঘ পরিবারের মতাদর্শকে বিঁধলেন। দুই, গুজরাত মডেলকে সেরা হিসেবে তুলে ধরে মোদী যখন প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ঝাঁপাচ্ছেন, তখন পরিসংখ্যান ও দুর্নীতি-র প্রসঙ্গ তুলে সেই দাবিকে উড়িয়ে দিলেন। এবং সর্বোপরি ‘চা-ওয়ালা’ বিতর্কে তীব্র কটাক্ষ করলেন মোদীকেই।
লোকসভা ভোটের প্রচারে নেমে আজই ছিল রাহুলের প্রথম সভা। সংবাদমাধ্যমে তাঁর সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারের পরেও এটা প্রথম সভা। তাই রাজনৈতিক শিবিরে কৌতূহল ছিলই। কংগ্রেসের অন্দরেও ছিল চাপা উৎকণ্ঠা। একে তো সাক্ষাৎকার নিয়ে যে বিতর্ক হয়েছে, তাকে সামাল দিতে হবে। তার উপর জায়গাটা গুজরাত। ঝুঁকি কম নয়। কিন্তু ঝুঁকি নিলেন রাহুল। এবং তা যে বেশ অঙ্ক কষেই, তা-ও আজ স্পষ্ট হয়ে গেল।
মুখোশের আড়ালে।
গুয়াহাটির সমাবেশে মোদী-ভক্ত।
বারডোলীতে রাহুলের সভা।
শনিবার।
প্রথমত, গুজরাতে সভা করার জন্য বেছে নিলেন সুরাতের উপকণ্ঠে ঐতিহাসিক বারদোলীকে। যেখান থেকে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেছিলেন সর্দার বল্লভভাই পটেল। যে সর্দার পটেলের বিশাল মূর্তি নির্মাণের ঘোষণা করে গুজরাতি আবেগকে উস্কে দিতে মরিয়া হয়েছেন মোদী। দ্বিতীয়ত, বারদোলীতে সভা করার আগে গত কুড়ি দিন ধরে যুব কংগ্রেসকে রাজ্যে ‘বিকাশ খোঁজ যাত্রা’য় নামিয়েছেন রাহুল। মোদী জমানায় উন্নতির প্রকৃত ছবিটা খুঁজে বের করতে। আজ যাত্রার শেষ দিনে রাহুল সেই যাত্রায় প্রতীকী পা-ও মেলান। তার পর বারদোলীর মঞ্চ থেকে ১৮ মিনিটের ঝরঝরে বক্তৃতায় মোদী ও বিজেপিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন তিনি।
যে চ্যালেঞ্জের সুর ধরা পড়ল রাহুলের প্রতিটি কথায়। চা-বিক্রেতা থেকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী পদে মোদীর উত্থানকে গৌরবান্বিত করে তুলতে বিজেপি দেশ জুড়ে ‘চায়ে পে চর্চা’ শুরু করতে চলেছে। কিন্তু কাপে ঝড় ওঠার আগেই তাতে জল ঢালতে চেয়ে রাহুলের মন্তব্য, “চা-ওয়ালা, শ্রমিক, কৃষক সকলকেই আমরা শ্রদ্ধা করব। কিন্তু যাঁরা অন্যদের উল্লু (বোকা) বানান, তাঁদের করব না।”
“উত্তর-পূর্ব কংগ্রেসকে ৬০ বছর সময় দিয়েছে।
আমাকে আপনারা ৬০ মাস সময় দিন।
প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি উত্তর-পূর্বকে বদলে দেব।”
নরেন্দ্র মোদী
“চা-ওয়ালা, শ্রমিক, কৃষক সকলকেই
আমরা শ্রদ্ধা করব। কিন্তু যাঁরা অন্যদের
উল্লু (বোকা) বানান, তাঁদের করব না।”
রাহুল গাঁধী
দৃশ্যত এ এক অন্য রাহুল। যিনি আম আদমির ক্ষমতায়ন নিয়ে লম্বা বক্তৃতা দিয়ে উপস্থিত জনতাকে হতাশ করেননি। বরং তাঁদের আবেগকে উস্কে দিয়েছেন বারেবারে। তাই শুরুতেই বলেছেন, “এখানকার নেতা সর্দার পটেলের মূর্তি বানাচ্ছেন। কিন্তু ওঁরা ইতিহাসই পড়েননি!” এর পরেই তাঁর সংযোজন, “ওঁরা জানেন কি সর্দার পটেল আরএসএস সম্পর্কে কী বলেছিলেন? বলেছিলেন, আরএসএস এক বিষাক্ত মতাদর্শ। যা দেশের আত্মাকে নষ্ট করে দেবে।” গাঁধী-হত্যার ঘটনা নিয়েও সঙ্ঘ পরিবারকে এ দিন কাঠগড়ায় তোলেন রাহুল।
গুজরাতের উন্নয়ন প্রসঙ্গেও মোদীকে বিঁধে রাহুল বলেন, “সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে একজন মঞ্চ থেকে যা ইচ্ছা বলে চলেছেন! আর বিজেপি গোটা দেশে দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছে! অথচ গুজরাতের দুর্নীতি ওঁরা দেখতে পান না!” মোদী প্রশাসনের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি ও কোটি কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগও তোলেন রাহুল। দারিদ্রসীমা নিয়ে গুজরাত সরকারের সম্প্রতি তথ্যকে নিশানা করে রীতিমতো বিদ্রুপের সুরে তিনি বলেন, “এখানে বড় লোকেদের জন্য সরকার চলছে। গরিবদের ঠাঁই নেই! উল্টে বলছে, দিনে ১১ টাকা রোজগার করলেই কেউ আর গরিব নন!”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লোকসভা ভোটের প্রচার গুজরাত থেকে শুরু করে আজ এক ঢিলে অনেক আম পাড়তে চাইলেন রাহুল। দলের প্রচার অভিযানের নেতৃত্ব হাতে নিয়ে গোড়াতেই দেখাতে চাইলেন, তিনি মোদীকে ভয় পান না। সেই সঙ্গে জানালেন, মোদী জমানায় গুজরাতের যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। রাহুলের কথায়, “গুজরাত কোনও এক জনের জন্য উন্নত হয়নি। বহু বছর ধরে লক্ষ মানুষের রক্ত-ঘাম রয়েছে এর পিছনে। তার কৃতিত্ব এক জন নিতে চাইছেন!”
রাহুলের আজকের সভার পরে অনেকটাই স্বস্তিতে কংগ্রেস নেতৃত্ব। ঘরোয়া আলোচনায় শীর্ষ নেতারা বলছেন, দলের সহ-সভাপতির কাছে এত দিন এটাই চাইছিল দল। কারণ, এমনিতেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। তার ওপর রাহুলের ঢিলেঢালা প্রচারে কর্মীদের মনোবলেও টান ধরছিল। আজ গুজরাতে তাঁর আক্রমণাত্মক মেজাজ যেমন কর্মীদের চাঙ্গা করবে, তেমনই বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে রাহুলকেও।

৩৬টি চায়ের স্টলে মোদী-আড্ডা
বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর ‘চায়ে পে চর্চা’র আসরে যোগ হল পশ্চিমবঙ্গের আরও ৩৬টি চায়ের দোকান। আগামী বুধবার অভিনব কৌশলে মোদী চায়ের দোকানে আড্ডা দেবেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চায়ের দোকানে বসে ভিডিও কনফারেন্স মারফৎ যে আড্ডায় যোগ দিতে পারবেন সাধারণ মানুষ। চায়ের দোকানের আড্ডায় মোদী ঘণ্টা দুয়েক চা বিক্রেতা, কর্মী এবং সমবেত অন্যান্য লোকজনের সঙ্গে কথা বলবেন এবং তাঁদের প্রশ্নের জবাব দেবেন। দেশের ৩০০টি শহরের ১০০০টি চায়ের দোকানে ওই কর্মসূচি হবে। বিজেপি সূত্রের খবর, মোদীর আড্ডার জন্য এ রাজ্যে কলকাতা উত্তর পূর্ব, কলকাতা উত্তর পশ্চিম, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর, বারাসত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির দোকান বাছা হয়েছে। সেগুলির মধ্যে কয়েকটি মালিক বিজেপি-র কর্মী বা সমর্থক। বাকিগুলি জোগাড় করেছেন বিজেপি-র সংশ্লিষ্ট জেলা নেতৃত্ব।

ছবি: এএফপি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.