নিরাপত্তার অভাব। অভাব নজরদারির, তারই ফাঁক গলে ১৮ ফুটের পাঁচিল টপকে কোচবিহার জেলা সংশোধনাগার থেকে দুই বাংলাদেশি বন্দি পালিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। শুক্রবার ওই সংশোধনাগারে ঘটনার তদন্তে যান কারা বিভাগের অতিরিক্ত আইজি কমলকুমার মুখোপাধ্যায়। কারা দফতর সূত্রের খবর, ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা দুই নিরাপত্তারক্ষী সুজিত পণ্ডিত ও বীরেন্দ্র হরিকার্জিকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত। তা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে কারারক্ষীদের মধ্যে। অনেকেরই অভিযোগ, সংশোধনাগারে প্রয়োজনের তুলনায় নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা অনেক কম। প্রধান কারারক্ষীর তিনটি পদের মধ্যে দুটি খালি। জেল সুপারের পদ দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা পড়ে। আলিপুরদুয়ার সংশোধনাগারের সুপার স্বপন ঘোষ অস্থায়ী ভাবে ওই দায়িত্ব পালন করছেন। অতিরিক্ত আইজি বলেন, “ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা দুই নিরাপত্তারক্ষীকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত করা হচ্ছে। স্থায়ী সুপার দু-এক দিনের মধ্যে কাজে যোগ দেবেন। অন্য যে সব পদ ফাঁকা রয়েছে, সে সব ধীরে ধীরে পূরণ করা হবে।” জেল সূত্রের খবর, সংশোধনাগারে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ জন বন্দি থাকে। এর মধ্যে খুনের মামলায় অভিযুক্ত, দাগি দুষ্কৃতী, মাদক পাচারে অভিযুক্তরাও রয়েছে। |
সংশোধনাগারে ৩ জন প্রধান কারারক্ষী ও ৬২ জন কারারক্ষীর পদ রয়েছে। এর মধ্যে ২ প্রধান কারারক্ষীর পদ ও ৩ জন কারারক্ষীর পদ ফাঁকা পড়ে। বাকি যে কারারক্ষীরা রয়েছেন তাঁদের ৬ জনকে ডেপুটেশনে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ এবং আলিপুর দুয়ারে পাঠানো হয়েছে। ৬ জন মহিলা কারারক্ষীর ১ জন অবসর নিয়েছেন। ১ জন আলিপুরদুয়ারে। তিনটি ভাগে প্রতি দিন মাত্র ৮ জন করে রক্ষীকে দিয়ে সংশোধনাগার সামলাতে হয়। তদন্তকারী অফিসাররা মনে করছেন, ঢিলেঢালা নজরদারির বিষয়টি এক বছরের বেশি সময় জেলে থেকে লালমণিরহাটের বাসিন্দা বিপ্লব বর্মন ও মহম্মদ আবেদ আলি জানতেন। সংশোধনাগারের ভিতরে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য গাছ। পানীয় জলের পাইপ লাইনও। ছক কষে গাছের শুকনো ডাল আর পাইপের সঙ্গে গামছা বেঁধে ১৮ ফুটের পাঁচিল টপকানোর পরিকল্পনা করে তারা। সেইমত বৃহস্পতিবার বিকাল নাগাদ সবাই যখন সেলের দিকে রওনা হয়, গাছের আড়ালকে কাজে লাগিয়ে পালাতে শুরু করে ওই বন্দিরা। চারজন মিলে পালানোর ছক কষে। বিপ্লব ও আবেদ পার হয়েও যায়। কিন্তু রুস্তম আলি নামে আরেক বন্দি পাঁচিল থেকে পা ফসকে সংশোধনাগারের ভিতরেই পড়ে যায়। তাতেই বিষয়টি নজরে আসে নিরাপত্তারক্ষীদের। ততক্ষণে অবশ্য দুই জন পালিয়ে যায়। রুস্তম আলির পা ভেঙে জাওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
পলাতক দুই বন্দির খোঁজে পুলিশ বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় নজরদারি শুরু করেছে। পুলিশ মনে করছে, ওই দুই বন্দি সীমান্ত টপকে বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা করবে। |