লোকসভা নির্বাচনের আগে ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে সংখ্যালঘু মন পাওয়ার জন্য ঝাঁপাতে চাইছে বামফ্রন্ট। এক দিকে তাদের কৌশল, তৃণমূল এবং বিজেপি -র আঁতাঁতের সম্ভাবনার কথা ব্রিগেডে তুলে আনা। তেমনই চেষ্টা চলছে, লোকসভা ভোটের প্রার্থী তালিকায় ১০ থেকে ১২টি সংখ্যালঘু মুখকে জায়গা দেওয়ার।
গত সপ্তাহেই ব্রিগেডে দাঁড়িয়ে বিজেপি -কে আক্রমণ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না -করে নরেন্দ্র মোদীকে ‘দাঙ্গার মুখ’ বলে কটাক্ষও করেছিলেন তিনি। যদিও তার আবার কয়েক দিন পরে সেই ব্রিগেডে স্বয়ং মোদীই তৃণমূলের প্রতি যথেষ্ট নরম মনোভাব দেখিয়ে ‘দু’হাতে লাড্ডু’র তত্ত্ব দিয়ে গিয়েছেন ! এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের জন্য বিজেপি -র দরজা খোলা রাখার বার্তাকেই আগামী রবিবার তাঁদের ব্রিগেডে হাতিয়ার করতে চাইছেন বাম নেতৃত্ব। তৃণমূল এবং বিজেপি -র সমাবেশ হয়ে যাওয়ার পরে তাদের ব্রিগেডের কর্মসূচি থাকায় বাকিদের বক্তব্য জেনে নিয়ে নিজেদের প্রচার সাজানোর সুযোগ পাচ্ছে বামেরা।
সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, “তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশের আগে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে, উনি কোনও অবস্থাতেই বিজেপি -র দিকে ফের যাবেন না, সে কথা পরিষ্কার করে বলবেন কি? কিন্তু সে কথা তিনি বলেননি। আর মোদী এসে নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে তৃণমূলের জন্য দরজা খুলে রেখেই গিয়েছেন। সুতরাং, আমরা আমাদের প্রশ্নের জবাব পাইনি ! ” এখনও পর্যন্ত যা ঠিক আছে, রবিবার ব্রিগেড সমাবেশে সিপিএমের তরফে বক্তা হিসাবে থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এবং বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। সংখ্যালঘু এবং হিন্দিভাষী সমর্থকদের কথা ভেবে আরও এক জন বক্তাকে তালিকায় আনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। অন্যান্য বার ব্রিগেডে সচরাচর যে কাজটা করে থাকেন প্রবীণ সংখ্যালঘু নেতা মহম্মদ আমিন। এ ছাড়া, বামফ্রন্টের তরফে এ বার বক্তৃতা করার কথা ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাফিজ আলম সৈরানির।
রাজ্য জুড়ে শাসক দলের ‘সন্ত্রাস’ ব্রিগেড সমাবেশের প্রস্তুতিতে প্রভাব ফেলছে বলেই সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ। তবু তাঁদের আশা, তৃণমূল এবং বিজেপি -র পিঠোপিঠি সমাবেশের পরে চ্যালেঞ্জ নিতে বিপুল সংখ্যায় কর্মী -সমর্থক ব্রিগেড ময়দান ভরিয়ে দেবেন। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা এক বিধায়কের কথায়, “মার খাওয়ার ভয় আছে। কিন্তু আমাদের লোকজন জানে, এখন মরিয়া হয়ে লড়তে হবে ! তা ছাড়া রাজ্যসভার ভোটে যে ভাবে তৃণমূলের চতুর্থ প্রার্থীকে জেতানোর জন্য বিধায়ক ভাঙানোর খেলা চলল, সেই ঘটনাও আমাদের কর্মী -সমর্থকদের জেদ বাড়িয়ে দেবে।”
সমাবেশের প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গেই লোকসভা ভোটের প্রার্থী তালিকা নিয়ে চূড়ান্ত তৎপরতা চলছে সিপিএমের অন্দরে। ব্রিগেড সমাবেশের আগের দিন আজ, শনিবার বিকেলে আলিমুদ্দিনে বসছে রাজ্য কমিটির বৈঠক। সিপিএম সূত্রের খবর, দু’-তিনটি জেলায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম নিয়ে এখনও টানাপোড়েন রয়েছে। চেষ্টা চলছে ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে অন্তত কিছু সিপিএম প্রার্থীর নাম যাতে ঘোষণা করে দেওয়া যায়। বাম সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত যে প্রাথমিক তালিকা আলোচনায় এসেছে, তাতে অন্তত ১০ জন সংখ্যালঘু মুখ আছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গে দু’জন, মুর্শিদাবাদ -সহ বাকি রাজ্যে আরও ৮ জন। এই তালিকায় আরও দু’-একটি মুখ সংযোজন করা যায় কি না, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা চালাচ্ছেন বাম নেতৃত্ব। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “এ বার রাজ্যের বেশ কিছু আসনে বিজেপি -র ভোট বাড়তে পারে বলে মনে হচ্ছে। এই অবস্থায় কৌশলগত কারণেই সংখ্যালঘু প্রার্থীদের ব্যাপারে বিশেষ ভাবনাচিন্তা করতে হচ্ছে।” |