একে -৪৭ চালানোয় দক্ষ টম দড় সংগঠনের কাজেও
সম থেকে উত্তরবঙ্গ এমনকী, ভুটানের পাহাড় -জঙ্গলের রাস্তাঘাট হাতের তালুর মতো চেনা, একে -৪৭ রাইফেল চালানোয় দক্ষতা জঙ্গি হিসেবে টম অধিকারীর কদর কেএলও (কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন )- অন্দরে অনেকদিনই ছিল। তবে সম্প্রতি তার সঙ্গে যোগ হয়েছে সাংগঠনিক কাজকর্মে পারদর্শিতাও। ২০১২ - মাঝামাঝি নিখোঁজ হওয়ার আগে এই কেএলও নেতা পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা, নতুন করে কেএলও - শক্তি বাড়ানোর কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে শুরু করেছিলেন বলে দাবি পুলিশ গোয়েন্দাদের। তাই নেপালে বৃহস্পতিবার আটক হওয়া দুই যুবকের এক জন (যার সঙ্গে টমের প্রচুর সাদৃশ্য রয়েছে বলে রাজ্যের কাছে খবর ) আদতে টম কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে উদগ্রীব রাজ্য পুলিশ -প্রশাসনের কর্তারা।
রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “টম অধিকারী এক সময়ে কেএলও - হামলায় নেতৃত্ব দিতেন। পরে সংগঠনের কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় চলে আসেন। কেএলও - উপদ্রব ফের শুরু হওয়ার পরে, এমন লোক ধরা পড়েছে কি না, জানতে আগ্রহ হওয়াটাই তো স্বাভাবিক।”
কেএলও - ভাইস চেয়ারম্যান, সংগঠনে কেএলও চিফ জীবন সিংহের ঠিক পরেই যাঁর অবস্থান, সেই টমের আসল নাম জয়দেব রায়। ধূপগুড়ির ফটকটারি গ্রামের প্রাক্তন বাসিন্দা এই জঙ্গি নেতার বাবা প্রয়াত প্রাণকিশোর রায় প্রাথমিক শিক্ষক ছিলেন। জয়দেবরা তিন ভাই, এক বোন। তিনিই বাড়ির বড় ছেলে। ধূপগুড়ি হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে তিনি কলেজে ভর্তি হবেন বলে ঠিক করেন। সালটা ১৯৯৬। কিন্তু সেই সময় রাজবংশী ভাষার স্বীকৃতি আলাদা কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনে নামা ‘অল কামতাপুর স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’-এর সঙ্গে তিনি জড়িয়ে পড়েন। সেই সূত্রেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় কুমারগ্রামের উত্তর হলদিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা তমির দাসের। এই তমির দাসই পরবর্তীতে কেএলও - চেয়ারম্যান জীবন সিংহ নামে পরিচিত হন। আচমকা এক দিন তমিরের হাত ধরে উধাও হন জয়দেব।
এর পরে আর জয়দেব নয়, ১৯৯৯ - যোগ কেএলও -তে যোগ দেওয়া টমের কথা জানতে পারে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, বছর ছত্রিশের এই যুবক স্কোয়াডে যোগ দিয়ে জয়দেব থেকে টম অধিকারী ওরফে ‘বাঙালি দাদা’ বলে কেএলও - অন্দরে পরিচিত হন। সংগঠনের দ্বিতীয় ব্যাচের হয়ে ভুটানের শিবচুতে আলফার কাছ থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন। গত ১৪ বছরে আট দফায় পুলিশের চোখে ধুূলো দিয়ে পালিয়ে যাওয়া টমের নাম একের পর এক অপহরণ, খুনের ঘটনায় জড়ায়। ২০০৩ -এর মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রুজু হয়। ২০০২ -এর অগস্টে ধূপগুড়িতে সিপিএম পার্টি অফিসে গুলি চালিয়ে পাঁচ নেতার খুনের মামলা যার অন্যতম। তা ছাড়া, ১৯৯৯ - কালচিনির লতাবাড়ি থেকে চা বাগান মালিক রোশনলাল গর্গকে অপহরণ, ২০০০ সালে কুমারগ্রামে সিপিএম নেতা প্রাণেশ পাল, ময়নাগুড়িতে নিতাই দাসকে খুন, ময়নাগুড়ি থেকে ব্যবসায়ী প্রতীক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপহরণের পিছনেও টমের হাত ছিল বলে পুলিশের দাবি।
২০০৩ সালে ভুটানে সেনা অভিযানের পরে বুক্কা পাহাড়ের ডেরা থেকে টম -সহ সাত জন কেএলও - প্রথম সারির নেতা ধরা পড়েন। তাঁদের কাছ থেকে একে ৫৬ -সহ নানা আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। পুলিশের দাবি, গ্রেফতার হওয়ার পরে জেরায় তিনি তাদের কাছে স্বীকার করেন, ধূপগুড়িতে সিপিএম পার্টি অফিসে তিনি নিজে একে -৪৭ থেকে গুলি চালিয়েছিলেন। রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরে ২০১১ - অগস্টে টম জেল থেকে ছাড়া পান। ছাড়া পাওয়ার পরে রাজ্য সরকারের কাছে রাজবংশী ভাষার স্বীকৃতি -সহ বেশ কয়েকটি দাবিতে টমের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়। চার মাসের মধ্যে অবশ্য তিনি ফের আত্মগোপন করেন।
গোয়েন্দাদের দাবি, এর পরেই সাংগঠনিক ভাবে নতুন করে কেএলও -কে সাজানোর প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে শুরু করেন টম। ২০১১ - শেষ দিকে অসমের ধুবুরিতে গিয়ে বৈঠক করেন জঙ্গি গোষ্ঠী আলফা - চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়ার সঙ্গে। গত বছর কেএলও নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে টমকে ভাইস চেয়ারম্যান করে। এর পরে তোলা আদায়, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় টমের নাম ফের পুলিশ গোয়েন্দাদের সামনে আসে। এই প্রেক্ষিতেই টম নেপালে আটক হয়েছেন কি না, জানতে আগ্রহী রাজ্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.